1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

এইচএসসির বাংলা প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানিতে সমালোচনার ঝড়

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০২২

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নে উঠে এসেছে সাম্প্রদায়িক স্পর্শকাতর বিষয়। তবে বোর্ড বলছে, এটা কীভাবে হয়েছে তারা জানে না। এই বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। গত রবিবার সারাদেশে এইচএসসি বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বোর্ডের ‘কাসালাং’ সেটের নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশের ১১ নং প্রশ্নে ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে ক্ষুন্ন করেছে, দেয়া হয়েছে সাম্প্রদায়িক উসকানি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে বর্তমান শিক্ষা প্রশাসন পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। গত রবিবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেয়া হয়েছে। এর আগে গত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিবের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তদবির করে অযোগ্য ও অদক্ষরা শিক্ষা বোর্ডের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগদান করেন। তারা পরীক্ষাসংক্রান্ত বিধিবিধান ও আইনের তোয়াক্কা না করেই মনগড়া পদ্ধতিতে বোর্ডের কাজকর্ম পরিচালনা করেন। যার প্রভাব পড়ে পাবলিক পরীক্ষায়।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার বলেন, ঢাকা বোর্ডের প্রশ্ন এটি, তবে অন্য বোর্ডের মাধ্যমে এসেছে। বিজি প্রেসে প্রশ্নের পাণ্ডুলিপি জমা আছে। সেখান থেকে আজ মঙ্গলবারের মধ্যে ওই প্রশ্ন তৈরিতে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও মডারেটরদের খুঁজে বের করা হবে। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন তৈরিতে জড়িত প্রশ্নকর্তা ও মডারেটরদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তার মতে, সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষপূর্ণ কোনো বক্তব্য যেন না থাকে সেজন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়নে লিখিত নির্দেশনা দেয়া হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ওরিয়েন্টশনও করানো হয়। প্রশ্নপত্র দেখার কোনো সুযোগ নেই। প্রশ্নকর্তা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার একটি প্রশ্ন হলো- ‘‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙ্গে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’

ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্র সৃজনশীল ১১ নম্বর প্রশ্নে নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশে ধর্মকে সামনাসামনি করে উদ্দীপকে এ কথা বলা হয়। এরপর প্রশ্ন করা হয়েছে- “(ক) মিরজাফর কোন দেশ হতে ভারত আসেন? (খ) ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব- ব্যাখ্যা কর। (গ) উদ্দীপকের ‘নেপাল’ চরিত্রের সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ‘মিরজাফর’ চরিত্রের তুলনা কর। (ঘ) ‘খাল কেটে কুমির আনা’ প্রবাদটি উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।- উক্তিটির সার্থকতা নিরূপণ কর।”

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরের জন্য উদ্দীপকে অনেক প্রাসঙ্গিক উদাহরণ টানা যেত। কিন্তু এখানে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলেও প্রশ্নপত্রে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের বাস্তবিক চিত্রও এমন নয়। ধর্মীয় নানা উৎসবে দল-মত নির্বিশেষে এদেশের মানুষ সবাই অংশ নেয়। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন কাঠামো কেমন হবে- এ ধরনের লিখিত নির্দেশনা এবং প্রশ্ন প্রণেতা ও প্রশ্ন সেটারদের ওরিয়েন্টশন করানো হয়। এরপরও অমূলক প্রসঙ্গ টেনে ধর্মীয় উসকানি দেয়া হয়েছে। এতে করে সমাজে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে।

শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ধর্মকে সামনাসামনি করা ঠিক হয়নি। মুসলমানের কাছে জমি বিক্রি করে দেশত্যাগ করছে- এ সমস্ত তথ্য সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটা কখনো কাম্য নয়। তিনি বলেন, আরো ভালো প্রশ্ন করা যেত। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবতাবোধ বাড়ানো। ধর্মে-ধর্মে সহিষ্ণুতা বাড়াতে কাজ করা। অনেক চিন্তা করে পরীক্ষার প্রশ্ন করা প্রয়োজন বলে অধ্যাপক কায়কোবাদ মনে করেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করা এনজিও গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, একজন প্রশ্নকর্তা যেভাবে প্রশ্ন করেছেন তা ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন পথে চলছে আমাদের সমাজ, এজন্য কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল? আমাদের জীবদ্দশায় এমন জিনিস দেখব, ভাবতেও পারছি না। তবুও আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন এ ঘটনায় যেই দোষী হোক না কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করব সত্যিই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ