1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চায় কারা?

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০২২

বছরখানেক আগে ছিল একটি গ্রুপ, এবার তার নাম হয়েছে ‘বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি’; গঠনতন্ত্র, প্রতীক আর ইশতেহার থাকার দাবি করলেও জেলা-উপজেলায় কমিটি নেই, তারপরও রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে চায় তারা।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে দুইবার নির্বাচন করে ৫% ভোট পেয়েছেন, কেবল এই যুক্তিতেই নিবন্ধন চান নতুন দল ‘নৈতিক সমাজ’ এর সভাপতি আমসা আমিন।

নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সব শর্ত যে পূরণ করা যায়নি, সর্বজনীন দলের নেতাও তা মানছেন; তারপর তিনি নিবন্ধন পাওয়ার আশায় আছেন।

গত চার মাস ধরে নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমার সুযোগ দিয়েছিল ইসি; শেষ পর্যন্ত ৯৮টি দলের আবেদন জমা পড়েছে ইসিতে।

বাংলাদেশ গরিব পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি-বিপিপি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ সৎ সংগ্রামী ভোটার পার্টি, ফরওয়ার্ড পার্টির মত বিভিন্ন নামের দলগুলোর আবেদন জমা পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমা পড়া ৯৮ আবেদনের অনেকগুলোই ‘নামসর্বস্ব’ দলের। নির্বাচনের আগে নিবন্ধনের আবেদন করে ‘নজরে’ আসাই তাদের উদ্দেশ্য।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনের আগ্রহী দলটি যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন

যে কোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পায়।

দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার পর একটি আসন পাওয়া এবং কোনো নির্বাচনে দলের ৫% ভোট পাওয়ার শর্তটি ২০০৮ সালের পরে আর প্রযোজ্য নয়। ফলে নতুন দলের নিবন্ধন পেতে হলে তৃতীয় শর্ত পূরণ করতে হবে।

২০০৮ সালে এ নিয়ম চালুর পর ৩৯টি দল ইসির নিবন্ধন পেয়েছিল। পরে বিভিন্ন সময়ে বেড়ে তা ৪৪ হয়। শর্ত পূরণে ব্যর্থ ও আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দল রয়েছে সেই ৩৯টি।

অফিস, কমিটি ‘দরকার নেই’ ইত্যাদি পার্টির নেতার

ইত্যাদি পার্টির প্রেসিডেন্ট হাবিবুর রহমান সাগর ওরফে ইত্যাদি সাগর। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই এই ব্যক্তি জানালেন, ইত্যাদি নামটা নিজের নামের সঙ্গে যুক্ত করে নিয়েছেন। এই পার্টি তারই বানানো।

দলের নিবন্ধন ও নির্বাচন কমিশনের শর্তের প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, তার কোনো কমিটি করতে হয় না। জেলা-উপজেলা কমিটি কোনো ‘বিষয় না’। এসব করার কোনো প্রয়োজনও তার নেই।

“এসব অফিস নেতা কমিটি করে লাভ কী। আমার যে জনপ্রিয়তা, ইত্যাদি সাগর নামে সবাই জানে। বাজিতপুর থানায় খোঁজ নেন, চুয়াত্তরে জন্ম; ৪৯ আমার বয়স; এক ছেলে এক মেয়ে… আমি কোনো দলে নাই; ডাইরেক্ট ইত্যাদি পার্টি। দুই বার কমিশনে গেছি আগামী সংসদে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব।”

ইসির নিবন্ধন পেতে কোনো দলকে যে এক-তৃতীয়াংশ জেলা আর ১০০ উপজেলার কমিটি দেখাতে হয়, তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই ইত্যাদি সাগরের। তবে নিবন্ধন পাওয়ার ব্যাপারে তার ‘আত্মবিশ্বাস’ রয়েছে।

তিনি গড়গড় করে বললেন, “গঠনতন্ত্র আছে, ইশতেহার আছে, বিধিমালা দেওয়া হয়েছে। ইত্যাদি পার্টির প্রতীক লালটুপি, স্লোগান- ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই করো’। গত বছর একটা গ্রুপ ছিল, এবার তা ইত্যাদি পার্টিতে রূপান্তর করছি।”

গরিব পার্টি ভিক্ষুকদেরও মনোনয়ন দিতে চায়

বাংলাদেশ গরিব পার্টি নামে একটি দলও নিবন্ধনের আবেদন করেছে। দলটির সহ-সভাপতি লিংকন দেবনাথ দাবি করেন, দেশের ২২টি জেলা ও ১০০ উপজেলায় কমিটির তালিকা দিয়েছেন তারা। সুনামগঞ্জের মঈনুল হক কলেজের প্রিন্সিপালসহ ১০ জন প্রভাষক এ পার্টিতে রয়েছেন।

লিংকন বলেন, “ভিক্ষুক, রাস্তা-ঘাটের মেহনতি মানুষ, দিনমজুরসহ অনেকেই রয়েছেন যারা নির্বাচন করতে চান, কিন্তু পারেন না ভোটে দাঁড়াতে। আমরা তাদের নমিনেশন দেব। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। গরিবদের পাশে দাঁড়াব আমরা।”

হঠাৎ করে দলের নিবন্ধন চাননি বলে দাবি করে মৌলভীবাজারের সন্তান লিংকন বলেন, তিনিও সুনামগঞ্জে কলেজে চাকরি করেন; ২০১৬ সাল থেকে মাঠে কাজ করছেন, এবারের বন্যার সময়ও গরিবদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার কাছেই এক জায়গায় গরিব পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস রয়েছে বলে লিংকন দেবনাথের দাবি। তার ভাষ্য, দলের অধিকাংশ লোক ‘ছড়িয়ে ছিটিয়ে’ থাকেন।

“নিবন্ধন না পেলেও আমাদের অসুবিধা নেই। গরিবদের নিয়ে কাজ করে যাব। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও অনেক গরিব রয়েছে। আমরা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।”

শর্তপূরণে সময় চায় টিজেপি

বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি বা টিজেপির কেন্দ্রীয় অফিস টঙ্গীতে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন আহমেদ বলছেন, মাঠপর্যায়ে দলের অফিস রাখা কঠিন বলে মনে হচ্ছে তার।

২০১৮ সালেও আবেদন করেছিল টিজেপি, নিবন্ধন পায়নি। নিবন্ধনের শর্তগুলো ‘জটিল’ বলে মনে করেন পার্টি প্রধান।

তার ভাষায়, “নিবন্ধনের শর্তগুলোই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অনেকটা বিতর্কিত। তারপরও সব শর্তপূরণ করেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে করেছিলাম। সেবার কিছুই জানালো না। এবারও মোটামুটি ১ হাজার ৩২৪ পৃষ্ঠা কাগজ দিয়েছি। ২২টা জেলা ও ১০৬টা কমিটি, তালিকার তথ্য দিয়েছি।”

তিনি বলেন, “ইসি একটি শর্তপূরণ না করলে নিবন্ধন দেবে না। অথচ একটা শর্তপূরণের (৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব) জন্য দলগুলোকে সময় দিচ্ছে। নতুন দলগুলোকে নিবন্ধনের শর্ত পূরণের জন্য ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া যায় না?

“আমি এমন এক অবস্থানে আছি- এখানে অফিস করতে দেয় না। ভয় পায় লোক। কমিশন বলতে পারে, নিবন্ধন দিয়ে গেলাম- ২০২৫ সালের মধ্যে পূরণ করতে না পারলে বাতিল হয়ে যাবে।”

নিবন্ধন না পেলে আদালতে যাবেন কিনা, তা ভেবে দেখার কথা জানালেন নাজিমুদ্দিন।

জনমত পার্টির সংশয়

বাংলাদেশ জনমত পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদন করেছেন সুলতান জিসান উদ্দিন প্রধান, তিনি এ দলের আহ্বায়ক।

৪৪ জেলার কমিটি ও ১০৯ উপজেলার তালিকা দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ইসি যত শর্ত দিয়েছে, সব পূরণের চেষ্টা করা হয়েছে। কোভিড মহামারীর মধ্যে দল গঠন করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র, ইশতেহার, কমিটির তালিকা তৈরিতে সময়ও কম পেয়েছি।”

নিবন্ধন পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, “৮০-৯০টা দল আবেদন করছে। সরকার কী চাইছে, এতগুলো দলই বা কেন আবেদনের সুযোগ দিল? এতগুলো দল মাঠে কাজ করছে কিনা, আমাদের কাছে কেমন জানি একটু লাগে। পাব কিনা জানি না; চেষ্টা করে যাচ্ছি যখন সুযোগ দিয়েছে।”

সুলতান জিসান জানান, জাতীয় ছাত্রসমাজের রাজনীতি করেছেন তিনি। নবম, দশ, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপত্র নিলেও ‘জোটের বলি’ হয়েছেন। এবার নিজের দলের হয়ে ভোট করতে চান।

নিবন্ধন না পেলে হাই কোর্টে যাবে নৈতিক সমাজ

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমসা আমিন নৈতিক সমাজের সভাপতি। এ বছর মার্চে নতুন দলের ঘোষণা দেন তিনি।

আমসা আমিনের ভাষায়, “এবার নিবন্ধন আবেদন করেছি। কুড়িগ্রাম-২ আসনে ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ভোট করেছি। পরাজিত হলেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে যে ভোট পেয়েছি, তা দিয়ে আবেদন করেছি (নিবন্ধনের দ্বিতীয় শর্ত)।

“মাঠ পর্যায়ের কমিটি করা, এক তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০ উপজেলার তালিকা করা-সবাই জানে একটা নতুন দলকে গড়ে তোলা কঠিন কাজ। এ আইন যারা করেছে মাঠে কাজ করার সামান্যতম অভিজ্ঞতা ছিল না।”

নিবন্ধনের শর্তানুযায়ী প্রতিবার ৫% ভোট পাওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, “ভোটার সংখ্যা সাড়ে তিন লাখের মত, প্রতিবারই ১ লাখের উপরে ভোট পেয়েছি। ২০০১ সালে নৌকা প্রতীকে ও ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছি।

“এটা ঠিক, নাম সর্বস্ব অনেক দল আছে।… আশা করি দলের নিবন্ধন পাব। তবুও না দিলে আমরা হাই কোর্টে যাব। নৈতিক ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে দেশের জন্য ভালো কিছু হবে।”

শর্ত পূরণ হয়নি, তবুও আবেদন সর্বজনীন দলের

নতুন রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে ‘বাংলাদেশ সর্বজনীন দল। এর সভাপতি মো. রাসেল কবির।

তিনি বলেন, “কমিশন ১০/১৫ বিষয়ে কাগজপত্র আমরা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। জেলা ও উপজেলা কমিটির শর্তগুলো আমরা হান্ড্রেড পার্সেন্ট পূরণ করতে পারিনি। সময় খুব কম ছিল। আমরা বলেছি, ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে দিন; তাহলে জেলা-উপজেলাগুলো পূরণ করতে পারব।”

সর্বজনীন দলকে ‘অধূমপায়ী দল’ হিসেবেও বর্ণনা করেন তিনি।

সময় হলে জানাবে বিএনএম-বিডিবি

বিএনপি ও জামায়াতের দলছুট অনেকের নানা নামে আবেদনের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। দল নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না এমন কয়েকটি দলও রয়েছে। তাদের কথা, ‘সময় হলে’ সব জানাবেন।

নিবন্ধন পেতে ইসিতে এবার আবেদন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)। এ দুটি দলের প্রধানরা এখনই কিছু জানাতে চান না।

বিএনএমের আহ্বায়ক ড. আব্দুর রহমান বলেন, “এ বিষয়ে আমরা কথা বলব যথাসময়ে।”

আর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চানও বিষয়টি এড়িয়ে যান।

তার ভাষ্য, “অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমাদের সম্পর্কে অনেক কথা শুরু হয়ে গেছে। খুব তাড়াতাড়ি বিস্তারিত জানাব। আমরা পরিষ্কার করব। আমরা নতুন দল”।

‘বিএনপি বা জামায়াতের সম্পৃক্ততা’ নিয়েও মন্তব্য করতে রাজি হননি এই দু্ই দলের প্রধান।

যা বলছে নিবন্ধন যাচাই-বাছাই কমিটি

আগামী বছরের জুনের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন যাছাই-বাছাইয়ে একটি কমিটিও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এ কমিটি দলগুলোর আবেদন পর্যালোচনার জন্য এখনও কমিশনে উপস্থাপন করেনি।

জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সচিব ইসির উপসচিব আব্দুল হালিম খান বলেন, ইসির কাছে যে ৯৮টি আবেদন জমা পড়েছিল, নাম দ্বৈততার কারণে পাঁচটি বাদ দিয়ে ৯৩টি আবেদন এখন বিবেচনায় রয়েছে।

“সব আবেদন গুছিয়ে প্রাথমিক কাজগুলো করার পর নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন পর্যালোচনার পর পরবর্তী পদক্ষেপ। এখনও মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নেওয়ার কাজ শুরু হয়নি। যখনই কমিশন নির্দেশনা দেবে, তখনই নিবন্ধন শর্ত সঠিক রয়েছে কিনা- তার তথ্য সংগ্রহে কাজ শুরু হবে।”


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ