1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

তথাকথিত হিজরতে পাঠিয়ে দিশেহারা মা

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২২

মায়ের কান্না আর আহাজারিতে সংবাদ সম্মেলন কক্ষ তখন স্তব্ধ। কান্নাভেজা কণ্ঠে কথা বলতে বলতে তিনি কখনও থেমে যান, ফের শুরু করেন। তাঁর কথা ও দীর্ঘশ্বাস আর থেমে যাওয়া সময়ের নিস্তব্ধতায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। ‘ভদ্র, বিনয়ী’ ছেলেটাকে প্রাইভেট টিউটরের কথায় তথাকথিত হিজরতে পাঠিয়ে দিশেহারা মা বলেন, ‘আব্বু, যদি তুমি আমার ম্যাসেজ পেয়ে থাক, বলতে চাই—তুমি চরম একটা ভুল পথে আছ। তুমি তোমার এই মাকে বিশ্বাস করতে পার।…আমি অনুরোধ করছি, তুমি আত্মসমর্পণ করো। তোমাদের মতো অল্পবয়সীদের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে। তোমরা যদি আত্মসমর্পণ করো তাহলে তোমাদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তোমাদের সুযোগ দেওয়া হবে।’

‘চরম ভুল একটি পথকে সঠিক মনে করে আমি এবং আমার সন্তান একই পথে ছিলাম। আর এ কারণে আমার সন্তান আজ আমার বুক খালি করে বান্দরবানের পাহাড়ে আছে। আমি জানি না, সে বেঁচে আছে কিনা। আর কখনও দেখতে পারব কিনা। এটা মা হিসেবে আমার চরম ব্যর্থতা। একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়েও আমি এটি বুঝতে পারিনি। জঙ্গি সংগঠনের কর্মকাণ্ড, তাদের নাম সবকিছু আমার কাছে গোপন করা হয়েছিল।’

গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ সন্তান আবু বক্করকে ফিরে পেতে আকুতি জানিয়ে এভাবে কথাগুলো বলেন একসময়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ মা আম্বিয়া সুলতানা এমিলি। গণমাধ্যমের সামনে এভাবে হাজির হয়ে জঙ্গিবাদে সংশ্নিষ্টতায় ঘরছাড়া তরুণকে ফেরত পেতে মায়ের এমন ব্যাকুলতা নজিরবিহীন।

সন্তানের শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে ২০২১ সালের শুরুর দিকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন আম্বিয়া সুলতানা এমিলি। একমাত্র ছেলে আবু বক্করও উদ্বুদ্ধ হন জঙ্গিবাদে। চলতি বছরের মার্চে ওই শিক্ষকের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে বের হয় আবু বক্কর। সে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া‘র সদস্য রনির (বর্তমানে গ্রেপ্তার) মাধ্যমে চলে যান বান্দরবান। মা এমিলি ছেলের এসব বিষয় জানলেও পরিবারের সবার কাছে বিষয়টি গোপন রাখেন। পাহাড়ে প্রশিক্ষণে যাওয়ার পর ছেলের আর কোনো খোঁজ না পাওয়ায় অনুশোচনায় ভুগতে থাকেন মা। ছেলেকে ফিরে পেতে সংশ্নিষ্ট থানায় জিডিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ছেলেকে ফিরে পেতে আকুতি জানান।
র‌্যাব জানায়, বিভিন্ন সময়ে নিরুদ্দেশ তরুণদের বিষয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা নজরদারি করতে গিয়ে জানতে পারে, নারায়ণগঞ্জ থেকে আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান নামে এক তরুণ গত মার্চ মাসে নিরুদ্দেশ হয়েছে। এর আগে র‌্যাবের কাছে থাকা নিরুদ্দেশের তালিকার ৫৫ জনের মধ্যেও আবু বক্করের নাম রয়েছে। ৩ নভেম্বের একটি অভিযানের মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামের নতুন জঙ্গি সংগঠনের মহিলা শাখা সম্পর্কে তথ্য পায় র‌্যাব। সে তথ্য অনুসারে জানতে পারে, একজন মা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং নিজ সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতে পাঠিয়েছেন। পরে র‌্যাব আম্বিয়া সুলতানা এমিলিকে উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যদের কাছে রেখে চার দিন ডি-রেডিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চালায়। এ সময় র‌্যাবের কাছে তিনি সন্তানকে ফিরে পেতে ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করে নিজের ভুল স্বীকার করেন।

এমিলি সাংবাদিকদের জানান, আমি মাস্টার্স পাস করেছি। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে চাকরি করেছি। ২০১৩ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে খণ্ডকালীন চাকরি করেছি। কোরআন ও হাদিস সম্পর্কে আমার দক্ষতা কম ছিল। আমাকে ও আমার সন্তানকে মিসগাইড করা হয়েছে। চরম ভুল একটা পথকে সঠিক মনে করে আমি এবং আমার সন্তান একই পথে ছিলাম।

তিনি বলেন, আমার একমাত্র সন্তান খুবই মেধাবী ও বিনয়ী। এসব মেধাবী ছেলেদেরই তারা টার্গেট করে তাদের জীবন ধ্বংস করার জন্য। ছেলের শিক্ষক আল আমিনই আমাদের ডিমোটিভেট করেছে। আমাকে বলা হয়েছিল, আমার সন্তানকে প্রশিক্ষণে নিয়ে যাওয়া হবে, ভালো প্রশিক্ষণ। সে দেখা করতে পারবে, সে যোগাযোগ ও বাসায় আসতে পারবে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছে।

তিন সদস্য গ্রেপ্তার

গত মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সুনামগঞ্জের আব্দুর রকিবের ছেলে আব্দুল হাদি সুমন ওরফে জন (৪০), বগুড়ার আব্দুস সাত্তারের ছেলে মো. আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ (৩২) ও নারায়ণগঞ্জের মৃত খোরশেদ মিয়ার ছেলে মো. রনি মিয়া (২৯)।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আব্দুল হাদি সুমন ওরফে জন সুনামগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি এক থেকে দেড় বছর আগে সংগঠনের শূরা সদস্য সৈয়দ মারুফ মানিকের মাধ্যমে সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তিনি তিন মাস আগে সংগঠনের শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবকে সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য ৯ লাখ টাকা দেন। প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা সংগঠনে চাঁদা দিতেন। আবু সাঈদ অনলাইন শরিয়াহ গ্র্যাজুয়েশন ইনস্টিটিউট নামে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। তিনিও দুই মাস আগে রাকিবের কাছে সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য ৭ লাখ টাকা দেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিতেন। রনি মিয়া নারায়ণগঞ্জে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করতেন। এক বছর আগে বাল্যবন্ধু আল আমিন ওরফে আব্দুল্লার মাধ্যমে সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম ও হিজরতকৃত সদস্যদের বান্দরবানসহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ