উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তন আজ ১৯ নভেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে কার্জন হল, কলা ভবন, অপরাজেয় বাংলাসহ পুরো ক্যাম্পাস গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সমাবর্তনে বক্তব্য রাখেন। নোবেল বিজয়ী ফরাসী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জ্যঁ তিরোল সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লস ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
সমাবর্তনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। সাইটেশন পাঠ করেন প্রো- ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এ সময় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট সিন্ডিকেট সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
সমাবর্তনের মূল আয়োজন দুপুরের মধ্যে শেষ হয়ে গেলেও দিনভর ক্যাম্পাসে ছিল শিক্ষার্থীদের পদচারণা। কোনো কোনো বিভাগের শিক্ষার্থীরা একই রকম পোশাক পরে সমাবর্তনে অংশ নেন। কেউ কেউ সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন পিতা-মাতাকে। দিনভর চলে ফটো সেশন ও আড্ডা।
সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ৫৩তম সমাবর্তনে অংশ নিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক মোতাসিম বিল্লাহ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তনে অংশ নিতে পেরে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। এখানে অংশ নেওয়া প্রতিটি শিক্ষার্থী একই রকম গর্বিত বলে আমি মনে করি।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সমাবর্তন প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছেই বিশেষ কিছু। এই কয়দিন যে আনন্দ আমেজ উপভোগ করেছি তা জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মিস করব প্রিয় এই ক্যাম্পাসকে।
রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার জন্য গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সব ধরনের সংকীর্ণতা ও ধর্মান্ধতা থেকে নিজেকে এবং পরিবারের সদস্যদের মুক্ত রাখতে হবে। প্রগতি, আধুনিকতা ও সহনশীলতার দিকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার্জন যেন সমাবর্তন আর সার্টিফিকেটেই সীমাবদ্ধ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আজকের এই অর্জনের পেছনে বাবা-মা, শিক্ষকমণ্ডলী এবং রাষ্ট্রের যে অবদান ও ত্যাগ রয়েছে, তা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবজ্ঞাননির্মাণের ব্রতকে সামনে রেখে একদিকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে; অপরদিকে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মতো প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বব্যবস্থার উপযোগী করে এর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বহুমুখী বাস্তবতাকে সামনে রেখে এই বিদ্যাপীঠ আগামী একশ বছরে কোন পথে এগিয়ে যাবে তা নির্ধারণে প্রয়াস চলছে।
সমাবর্তনে অধ্যাপক ড. জ্যঁ তিরেল বলেন, পেশাজীবনে সফলতা অর্জনের জন্য গ্র্যাজুয়েটদের আত্মবিশ্বাস, দায়িত্ববোধ ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, পরিকল্পিত উপায়ে কঠোর পরিশ্রম করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য ও অগ্রগতি অর্জনের জন্য তিনি বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, এই সমাবর্তনে ৩০ হাজার ৩শ’ ৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষা ও গবেষণা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩১ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৯৭ জনকে পিএইচডি, ২ জনকে ডিবিএ এবং ৩৫ জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ও উপাদানকল্প কলেজ/ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ সমাবর্তনের মূল ভেন্যু বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ভেন্যু থেকে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন।