1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আমাদের কৃষি

সমীরন বিশ্বাস : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (অও) যাকে বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়, তা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা- যেখানে মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ বা অনুকৃত করা হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের চিন্তা শক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় কম্পিউটার দ্বারা। বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হচ্ছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। যেমন- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সফটওয়্যার তৈরি করা এবং রোবট নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বুদ্ধিমত্তা বলতে মানুষের চিন্তা শক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করে প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তোলার বাস্তবায়নকে বোঝায়। অনেকে মনে করেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থ রোবট জাতীয় কিছু একটা হবে।

অনেকের ধারণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে রোবটকে মানুষের মতো সব বুঝতে সক্ষম করে তুলতে পারে। এ ধারণা ঠিক আছে, কিন্তু এটি একটি উদাহরণ মাত্র। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ে উঠেছে শিক্ষা এবং আধুনিক কৃষি ক্ষেত্রের অংশ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলতে বস্তুতপক্ষে যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তাকে বোঝায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বা মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি। আন্দ্রেয়ার কাপলান ও মাইকেল হেনলিন বলেন, এটি একটি সিস্টেমের বাইরের তথ্যকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা রাখে। আর এই ক্ষমতাকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়।

এর জনক কে

মার্কিন মিনস্কিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জনক বলা হয়। তিনি ১৯৫৮ সালে মার্কিন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। তার আগে ১৯৫৭ সালে একটি অনুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার, যার বর্তমান নাম ‘কনফোকাল মাইক্রোস্কোপ’। এই ‘কনফোকাল মাইক্রোস্কোপ’ আবিষ্কার করার লক্ষ্য ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতি সাধন করা।

এর প্রকারভেদ

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়-

১. আর্টিফিশিয়াল ন্যারো ইন্টেলিজেন্স (Artificial Narrwo Intelligence -ANI )

২. আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (Artificial General Intelligence -AGI )

৩. আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স (Artificial Super Intelligence -ASI)

প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন কিছু আবিষ্কারের পেছনে ছুটছে। ফলস্বরূপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ধারণা করা হয়, একসময় পৃথিবীকে অনেক অংশে বদলে দেবে এবং মানুষের চিন্তা শক্তিকে বৃদ্ধি করবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। ২০৬০ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে পাইলট ছাড়া প্লেন চালানো যাবে। বর্তমান সময়ের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন ড্রাইভার ছাড়া গাড়ি চলছে। এসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। যেখানে যন্ত্রের মধ্যে মানুষের সব চিন্তা শক্তি ও জ্ঞানকে অ্যাপলিকেশন বা সফটওয়্যার দ্বারা সংযুক্ত করা হচ্ছে।

একজন মানুষ যেভাবে কাজ করে, একটি যন্ত্র ঠিক সেভাবেই কাজ করে। আপনি বিভিন্ন ভিডিওতে রোবটের কার্যক্রম দেখতে পারবেন। আর এসবই তৈরি করা হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্য

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আদর্শ বৈশিষ্ট্য হলো যুক্তিযুক্ত কারণ এবং এমন প্রক্রিয়াগুলো গ্রহণের ক্ষমতা, যা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের সর্বোত্তম সুযোগ পায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি সাবসেট হলো মেশিন লার্নিং, যা এই ধারণাটিকে বোঝায় যে, কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের কাছ থেকে সহায়তা ছাড়াই নতুন ডেটা থেকে শিখতে এবং মানিয়ে নিতে পারে।

কোথায় ব্যবহার হয়

বর্তমান দুনিয়ায় কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর এমন কোনো ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারিক প্রয়োগ নেই। যেসব ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে- আধুনিক কৃষিতে, চিকিৎসাবিদ্যায় রোগ নির্ণয়, স্টক মার্কেটের শেয়ার লেনদেন, রোবট কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে, আইনি সমস্যার সঠিক সমাধান, বিমান চালনায়, যুদ্ধক্ষেত্র পরিচালনায়, ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায়, ডিজাইন তৈরি, সাইবার নিরাপত্তার জন্য, ভিডিও গেমসে ব্যবহৃত, স্মার্ট গাড়িতে ব্যবহৃত হয়, মেল স্প্যাম ফিল্টার করতে, উবার-এ ভ্রমণের দাম নির্ধারণ করতে, ডাটা সেন্টার ম্যানেজমেন্টে, জিনোমিক্স / সিকোয়েন্সিংয়ে ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে কৃষিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স

এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ে উঠেছে শিক্ষা এবং আধুনিক কৃষি ক্ষেত্রের অপরিহার্য অংশ। ইতোমধ্যে কৃষিতেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে কৃষিতে অও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মদিনা টেক লিমিটেডের নেতৃত্ব একদল তরুণ আইটি ইঞ্জিনিয়ার ও কৃষিবিদগণ যুগান্তকারী ‘ডা. চাষী’ এ্যাপ তৈরি করেছেন। এ এ্যাপ দিয়ে ছাদ-বাগান এবং মাঠ ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের সঠিক তথ্য ও সমাধান করা যায়। এ এ্যাপ দিয়ে ফসলের আক্রান্ত স্থানের ছবি তোলা সম্ভব হলে ‘ডা. চাষী’ বলে দেবে ফসলের সমস্যা ও সমাধান। ইতোমধ্যে ‘ডা. চাষী’ অ্যাপ তৈরির জন্য বেসিসের আইসিটি চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড ২০২২ লাভ করেছে মদিনা টেক লিমিটেড।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, নেদারল্যান্ডসের টুয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র যৌথভাবে ‘স্টারস’ প্রকল্পের আওতায় দেশের কৃষি গবেষণায় আধুনিক, উন্নত ও কার্যকর প্রযুক্তি হিসেবে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষিতে প্রযুক্তি সংবলিত ড্রোন অর্থাৎ, ড্রোনের সঙ্গে অও কাস্টমাইজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ইন্টিগ্রেট করলে ড্রোন ফসলের খেতের ওপর দিয়ে উড়ে গেলে ঐ এলাকার যে সার্বিক অবস্থা জানান দিতে সক্ষম সেগুলো হলো- ফসলের মাঠের আর্দ্রতা পরিমাপ করা, ফসলে উপাদানের উপস্থিতি নির্ধারণ করা, শস্য রোপণ ডিজাইন করা, বীজ রোপণ করা, পোকার আক্রমণ জানা (ইমেজ প্রযুক্তি), কীটনাশক স্প্রে করা, সেচ মনিটরিং করা, ফসলের উৎপাদন জানা, ফসলের সার্বিক মনিটরিং করা, মাটির নিউট্রেন্ট, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, পিএইচ, লবণাক্ততা জানা, ফসলের নিউট্রেন্টের অভাব জানা, ফসলের রোগ ও পোকামাকড় জানা এবং তার সমাধান দেওয়া, কৃষি ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড আগাম এলার্মিং দেওয়া, কৃষি কলসেন্টার সেবা দেওয়া, সর্বোপরি কৃষিপণ্যের বাজারদর জানা। স্মার্ট ফারমিং/ কৃষিতে ডিজিটালাইজেশন, আগামীতে কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (অও প্রযুক্তি) সম্প্রসারণ ঘটিয়ে কৃষিকে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার এখনই সময়।

লেখক : সমীরন বিশ্বাস – কৃষিবিদ ও লেখক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ