1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রাজনীতিবিদদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া উচিত

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩

২৮ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় অনেকটাই গেছে বক্রপথে। বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনকারীরা সরকারের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। অন্যদিকে সরকার সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে এর সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ দেখাচ্ছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে যা ঘটেছিল তা সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে অনেকেই দেখেছেন। যদিও এখন পর্যন্ত যুগপৎ আন্দোলনকারী কোনো কোনো দলের নেতারা হরতাল, তাণ্ডব, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো জীবনবৈরী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে সরকারের এজেন্টদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি করছেন। কিন্তু ভিডিও ফুটেজে যেসব আক্রমণকারীর ছবি স্পষ্টত দেখা গেছে, তাদের কয়েকজনকে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের নাম ও দলীয় পরিচয় জানানো সত্ত্বেও যুগপৎ আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা নিয়মিত টিভি টকশোতে আসেন তারা তা স্বীকার করতে চান না, বরং সরকারি এজেন্টদের কাজ হিসেবেই এসবকে বারবার বলার চেষ্টা করে থাকেন।

সেদিনের আরও বেশকিছু ঘটনাবলি শুধু আমাদের দেশের জন্যই নয়, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যারা বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের জন্যও বিব্রতকর হয়েছে। মিয়া আরেফি কাণ্ড শুধু সেদিনের ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বেশ আগে থেকেই বিএনপির গুলশান অফিসে যাতায়াত করতেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও তার দেখা-সাক্ষাৎ ও মেলামেশা হতো। যদি এসবই সত্য হয়ে থাকে, তাহলে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জুজুর ভয় দেখানো ভূমিকায় মিয়া আরেফির ওপর বিএনপির নির্ভরশীলতা কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল এ প্রশ্ন অমূলক নয়। ২৮ তারিখের মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতনের জন্য বিএনপি সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় জড়ো করেছিল। ২৮ তারিখ ছিল এর প্রাথমিক রিহার্সেল, যেখানে একজন পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করা হয়। ৪০-এর অধিক পুলিশ সদস্যকে আক্রমণ করা হয়। প্রধান বিচারপতির বাসভবন, বিচারপতিদের লাউঞ্জ আক্রমণ, রাজারবাগ পুলিশ হসপিটালের গাড়ি পোড়ানো, সাংবাদিকদের নির্বিচারে আক্রমণ এবং আরও বিভিন্ন জায়গায় হামলার ঘটনা প্রমাণ করে, ২৮-পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে বড় ধরনের আক্রমণ, সংঘাত, সংঘর্ষ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা পরিকল্পিত। কিন্তু শুরুতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় অবস্থানকারীদের তাড়িয়ে দিয়ে পরবর্তী বড় ধরনের সন্ত্রাসী আক্রমণ ঘটানোর সুযোগ দেয়নি।

বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে ২৯ অক্টোবর হরতাল ডাকে। এর আগের রাতেই যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। ২৯ তারিখ ঢাকাসহ সারা দেশেই যাত্রীবাহী বাস, অন্যান্য যানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর করা হয়। সরকার তখন বিএনপি মহাসচিবকে প্রথমে আটক করে। এরপর আত্মগোপনে থাকা আরও কয়েকজনকে আটক করতে থাকে। বিএনপি ৩০ তারিখ থেকে টানা তিন দিন অবরোধ ঘোষণা করে। অবরোধ কর্মসূচি বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ এবং ’১৫ সালে আন্দোলনে যুক্ত করেছিল। ইতোমধ্যে তারা ৩দফা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। মানুষের যাতায়াত, পণ্য পরিবহনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নেতাকর্মীরা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ, বোমা, পেট্রোলবোমা ছুড়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে অতীতে যেমন নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। অগ্নিদগ্ধ হয়ে অনেক পরিবারের জীবন-জীবিকা প্রায় নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল। এবারও তেমনি অবরোধের নামে মূলতই টার্গেট করা হয়েছে যাত্রীবাহী বাস, যানবাহন এবং পণ্য পরিবাহী ট্রাক ও লরিকে। এর অর্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষের চলাচল বিঘ্নিত করা, জীবন-জীবিকা বন্ধ করা এবং যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া। পরিবহনে অগ্নিসংযোগ আন্দোলনকারী দলসহ নেতারা সরকারের বিশেষ বাহিনীর দায় বলে চাপিয়ে দিচ্ছেন। এসব কোনো অবস্থাতেই আন্দোলনকারীদের কাজ নয় বলে দাবি করা হচ্ছে। অনেক জায়গাতেই গাড়ি ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগকারীদের কেউ কেউ ধরা পড়ছে, তাদের পরিচয়ও জানা যাচ্ছে। তারপরও গণমাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলকারীদের কোনো কোনো দলের নেতা সবকিছু অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন।

প্রায় দেড় সপ্তাহ অতিক্রান্ত হতে চলছে। ঢিলেঢালা অবরোধ শহরগুলোতে চলছে। চোরাগোপ্তা হামলার ভয়ে পরিবহন মালিকরা পরিবহন নামাতে ভয় পাচ্ছেন, যাত্রীরাও উঠতে সাহস পাচ্ছে না। কিন্তু মানুষের যাতায়াত এভাবে বন্ধ রেখে যুগপৎ আন্দোলনকারীদের কী লাভ হচ্ছে  এ প্রশ্নের উত্তর শান্তিপ্রিয় মানুষ জানতে চায়। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়ছে। চিকিৎসাসেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে পড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। অমানবিক শঙ্কার রাজত্বে আবার আমাদের জীবনযাপনের শুরু! পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আলামত দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কড়া নাড়ছে। নির্বাচন সময়মতো অনুষ্ঠিত না হলে দেশে সাংবিধানিক সংকট অনিবার্য, সাংবিধানিক সংকটের সুযোগ নিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারেÑএ আশঙ্কা অমূলক নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগে থেকেই সরব। ছোটখাটো ঘটনাতেও তাদের প্রতিক্রিয়া অনেক সময় খুব দ্রুত ঘটতে দেখা যেত। কিন্তু ২৮-পরবর্তী সময়ের প্রতিক্রিয়া অনেকটাই যেন উপদেশমূলক হয়ে পড়ছে। যেভাবে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হচ্ছে তা মানবাধিকারের কতটা পরিপন্থি তা নিশ্চয়ই তাদের অজানা নয়। কিন্তু এ বিষয়ে তারা এখনও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেই বলছেন। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আগে থেকেই বেশ সক্রিয়। ২৮ তারিখের পর নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন জায়গায় তিনি দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। কিন্তু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, অবরোধ ইত্যাদি নিয়ে তাকে খুব বেশি মন্তব্য করতে শোনা যায় না। নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে শর্তহীন আলোচনার কথা তিনি বলেছেন এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রায় সাথে সাথেই এরও উত্তর দেন। বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনকারীদের অবস্থান কারও অজানা নয়। তারা যেসব শর্তে নির্বাচন করতে চায়, সেসব শর্ত বাংলাদেশের সংবিধানে নতুন করে সংযোজন করার পথ আছে কি? দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক বলে যে রায় দিয়েছে সেই রায় সংবিধানে থাকা অবস্থায় কোনোভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করা যাবে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার অতীত অভিজ্ঞতায় একটি ব্যর্থ এবং রাষ্ট্রের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ব্যবস্থা। সুতরাং এই ব্যবস্থা যে মোটেও সমস্যার সমাধানে কার্যকর নয়, তাও প্রমাণিত সত্য। সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে প্রতিদ্বন্দ্বী সব দলকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ব্যর্থতার যে বর্ণনা দেওয়া হয় এর দায় সরকারের নয়, বরং বিরোধী দলের। বিরোধীদের উদ্দেশ্য ছিল দেশে একটি সাংবিধানিক সংকট তৈরি করা। সেই সুযোগে দেশে ১/১১-এর মতো কিছু একটা সৃষ্টি করা। সুতরাং ২০১৪ সালের ঘটনাবলির জন্য কার দায় কতটা তা নির্মোহভাবে জানা ও বোঝা দরকার। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধীদের অগোছালো অবস্থার সুযোগ নিয়েছেন সরকারি দলের কিছু কিছু নেতাকর্মী। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন তা রোধ করতে ভূমিকা রাখেনি। কিন্তু ২০১৪ ও ’১৮-এর পরিবেশ আর ২০২৪-এর নির্বাচন এক নয়। নির্বাচন কমিশন নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তৎপর বলেই মনে হচ্ছে। সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এরপরও যদি নির্বাচনের সময় কেউ বাড়াবাড়ি করতে চায়, তাহলে সেই দলের বিপক্ষেই ভোটারদের অবস্থান চলে যাবে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকার উৎখাতের আন্দোলনের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। যুগপৎ আন্দোলনকারীরা গণতন্ত্র, সংবিধান, রাষ্ট্রব্যবস্থা, মানুষের মানবাধিকার ইত্যাদি নিয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, সেগুলো সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করে জন রায় আদায় করার তারা চেষ্টা করতে পারতেন। তফসিল ঘোষণার পর যুগপৎ আন্দোলনকারীরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তা শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে পশ্চিমা দুনিয়ায় আমাদের নির্বাচন নিয়ে নানা রকম কথা শোনা গেলেও আসলে তারা কী করতে চায় তা বোঝা খুবই কষ্টকর।

জনজীবনে নিরাপত্তা বিধান, চলাচলের বাধা নিরসনের উপায় এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যা যা করণীয় তা করার জোরদার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। বিরোধী পক্ষ যদি অবাধ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা স্থাপন রেখে অংশ নিতে চায়, তাহলে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে এর সর্বোচ্চ সততার প্রমাণ রাখার ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য দেখানো যাবে না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনও চাই, ভীতিকর পরিবেশ দূর হোক, তাও চাই। দেশ-জাতির স্বার্থ সবার উপরে, এ ব্যাপারে কারোরই দ্বিমত থাকার কথা নয়। রাজনীতিকরা নিশ্চয়ই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন- এ প্রত্যাশা করি।

লেখক: মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী – অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট


সর্বশেষ - রাজনীতি