ব্লগারদের হত্যাকান্ড শুরু হবার পর থেকেই বিশেষ করে জার্মানী, ইংল্যান্ড, সুইডেন এই তিনটি দেশে কয়েকজন সুনির্দিষ্ট ব্যাক্তি কিভাবে কিভাবে যেন এই ফেসবুকের মাধ্যমে চাউর করে বেড়াচ্ছে যে বাংলাদেশ থেকে আস্তিক-নাস্তিক-ব্লগার বিষয়ক কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করা হলেই এদের কাছ থেকে নাকি বিভিন্ন দেশের সরকারী প্রতিনিধিরা জিজ্ঞেস করে তবেই রাজনৈতিক আশ্রয় কিংবা এসাইলাম দেবার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।
ইংল্যান্ডে এই টাইপ একজনকে পেলেও জার্মানীতে অবস্থান করা আসিফ মহিউদ্দিনের মত এমন অভব্য, হামবড়া ও অযৌক্তিক ধরনের লেখা আর কাউকে আমি লিখতে দেখিনি। সাম্প্রতিক সময়ে বড় ভাই/বন্ধু রেজা ভাই আসিফ মহিউদ্দিন নামে এক ব্যাক্তির কিছু লেখার স্ক্রীনশর্ট আমার কাছে পাঠিয়ে জানতে চান যে আসিফ মহিউদ্দিনের এইসব কথা বার্তা আইনী দৃষ্টিতে কতটুকু সত্য মনে হয় কিংবা এইভাবে লেখাগুলো কি আদৌ ইউরোপে বিদ্যমান কোনো আইনের বরখেলাপ কি না?
একজন আইনজীবির দেখবার দৃষ্টিকোন থেকে আমি আসিফ মহিউদ্দিন এর লেখাগুলো দেখেছি এবং এই ব্যাপারে আমার নিজস্ব কিছু মতামত দিচ্ছি।
প্রথমত,
আসিফ তার লেখার প্রথম প্যারাতেই দুইটি ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার কথা বলেছে এবং সেই একই সাথে “এসাইলাম” শব্দটি উল্লেখ করেছেন যেগুলো একটা আরেকটার সাথে ভয়াবহ রকমের কন্ট্রাডিক্ট করে এবং আমার জানা মতে একটি আরেকটির সাথে কোনোভাবেই যায়না। যেহেতু আসিফ তার লেখায় “একটি সংগঠন” উল্লেখ করেছেন এবং সেই তথাকথিত সংগঠনের কোনো নাম, ঠিকানা কিংবা তারা এক্সাক্টলি কোন ব্যাপারটি আসিফের কাছে জানতে চেয়েছেন সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্য কোনো দলিল সবার সামনে দেননি সেহেতু এই ব্যাপারগুলো প্রাইমা ফেসী অসত্য এবং অমি রহমান পিয়ালের সাথে তার পুরোনো বিরোধের জের ধরে ভিন্ডিক্টিভ মনোভাব থেকে লিখিত হয়েছে বলেই আমি মনে করছি। এখানে আসিফের বলা ঘটনা থেকে সিদ্ধান্তে আসাটা হাস্যকর ব্যাপার হয়ে উঠবে।
দ্বিতীয়ত,
আসিফের কথা অনুযায়ী যদি অমি রহমান পিয়াল সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেও থাকেন তবে সেটি নিয়ে খোঁজ খবর নেবে সুইডেন এর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং সেই খোঁজ খবর নেবার পদ্ধতিটি আসলে আসিফ যেভাবে বলছেন সেভাবেই মোটেই নয়। আসিফের বলা ঘটনার পদ্ধতি বিবেচনায় এটি রীতিমত অসম্ভব। ব্যাক্তির গোপনীয়তা বিশেষ করে এই জাতীয় কেইসে তো প্রচন্ড স্ট্রিক্ট, কেননা এখানে ব্যাক্তি জীবনের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। সুইডেন সরকার এতবড় আহাম্মক হয়নি যে আসিফ কে ধরে ধরে মামলার আপডেট দেবে কিংবা তার রেফারেন্সের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। আসিফ কি করে এমন কথা লিখতে পারলো প্রকাশ্যে এটা ভেবেই আমি গলদ্ঘর্ম হচ্ছি।
অমি রহমান পিয়াল যদি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকেনও তবে সেটি স্বাভাবিক ভাবেই করেছেন সুইডেনের সরকারের কাছে। আসিফের বলা বা লেখা তথাকথিত “একটি সংগঠন”-এর কাছে নয়। সুতরাং সুইডেনের সেই একটি সংগঠন কিভাবে দৃশ্যপটে এলো, এটা নিয়ে আসলেই চিন্তার প্রয়োজন রয়েছে। তবে অমি রহমান পিয়াল যদি রেফারেন্স হিসেবে আসিফ মহিউদ্দিন এর নাম ব্যবহার করে থাকেন তবে ব্যাপারটি ভিন্ন, সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা রয়েছে হোম অফিস আসিফের কাছে ফোন দিয়ে, ইমেল দিয়ে কিংবা চিঠি লিখে ব্যাপারটির সত্যতা জানতে চাইবার। এর বাইরে অন্য কিছু নয়। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই মনে হচ্ছে অমি পিয়াল আসিফকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন নি, সুতরাং সেই চিন্তাও এখানে অবান্তর।
তৃতীয়ত,
আমি যতদূর জানি আসিফ মহিউদ্দিন থাকেন জার্মানীতে। অতীতে তিনি অন্যের লেখা চুরি করে প্রকাশের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে গুরুতর প্রমাণ সহ অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু বছর আগে নাগরিক ব্লগের ব্লগার “রুবাইয়্যাত” আসিফ মহিউদ্দিনের এই লেখা চুরি নিয়ে একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন “ডিজিটাল বলদ নবীর তিন সফর”শিরোনামে। এই লেখাটি এখনো নাগইক ব্লগে রয়েছে বলে আমার ধারনা। এই ছাড়াও আসিফ মহিউদ্দিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অত্যন্ত নোংরা ভাষায় লেখালেখি করেছেন বলেও প্রমাণ রয়েছে। এই রকম একজন লেখা চোর ও নারী নির্যাতনকারীকে কেন কিংবা কি প্রয়োজনে সুইডেনের “একটি সংগঠন” নক করবে, এটা আমার কাছে বিষ্ময়ের। কোরান শরীফের উপর চায়ের কাপ রেখে বদমায়েশি, পবিত্র কাবা শরীফের ছবিতে ফটোশপ করে রেইনবো পতাকা ঝুলিয়ে দেয়া কিংবা প্রতিদিন তার ফেসবুকে ধার্মিক ব্যাক্তিদের নিয়ে গালাগাল ও খিস্তি-খেউরি ছাড়া আর কি কি কর্ম আসিফ করেছে এই ব্যাপারটি আমার অজানা।
সবচাইতে বড় ব্যাপার হচ্ছে অমি রহমান পিয়াল ব্লগার হিসেবে আসিফ মহিউদ্দিনের থেকে অনেক অনেক বেশী জনপ্রিয়। অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখালেখিতে পিয়াল ভাইকে বাংলা ভাষাভাষী অসংখ্য ব্যাক্তিরা চেনেন ও জানেন। এরকম একজন ব্যাক্তিকে কেন আসিফ মহিউদ্দিনের মত এমন একজন লেখা চোরের রেফারেন্স নিতে হবে এই ব্যাপারটি আমার মাথাতেই ঢোকে না। সুতরাং এটা বলাই বাহুল্য যে আসিফ মহিউদ্দিন নিজের নাম ফাটাবার জন্য এবং তার সেই বিখ্যাত “আমি-আমি-আমি-আমি” রোগের এফেক্ট হিসেবেই এইসব হাস্যকর কথা বার্তা বলে বেড়াচ্ছেন।
চতূর্থত,
অমি রহমান পিয়াল যদি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেই থাকেন সুইডেন সরকারের কাছে সেটি অত্যন্ত গোপনীয় একটি ব্যাপার। একজন মানুষ তখনই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন অন্য দেশের সরকারের কাছে যখন তাঁর জীবন নিজের দেশেই সঙ্গীন হয়ে ওঠে, ভয়াবহ হয়ে উঠে। একজন ব্যাক্তির ইমিগ্রেশন কিংবা এই জাতীয় সমস্যা বা আবেদন অত্যন্ত পার্সোনাল বিষয়। কিন্তু এই ব্যাপারটি যদি আসিফ জেনেই থাকেন তবে ইউরোপীয়ান যে সম্মিলিত নীতি, সেটি বিচার করেও আসিফ এই ধরনের তথ্য এইভাবে অনলাইনে সবার কাছে বলে বেড়াতে পারেন না। এর আগে লেখা চোর আসিফের উপরে মৌলবাদীদের নৃশংস, কাপুরোষিত ও ন্যাক্কাররজনক হামলা হয়েছে। আসিফ নিজেও জানেন যে বাংলাদেশে ব্লগারদের উপর কি পরিমাণ ঝুঁকি এই সময়গুলোতে রয়েছে। এসব জানবার পরেও তিনি কি করে একজনের প্রাইভেসী নষ্ট করছেন সেটি আমার একেবারেই বোধগম্য নয়। ইউরোপিয়ান কনভেনশন অফ হিউম্যান রাইটসের (ECHR) আর্টিকেল-৮ এব্যাক্তির প্রাইভেসীর ব্যাপারে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে লেখা রয়েছে। সুইডিশ সরকার যদি আসিফের কাছে সত্যি সত্যি অমি রহমানের পিয়ালের ব্যাপারে জানতে চায়-ও সেক্ষেত্রেও কিন্তু আসিফ কোনোভাবেই এই রকম অর্বাচীনের মত এইসব ব্যাক্তিগত তথ্য ফেসবুকে প্রকাশ করতে পারেন না।
একটি মন্তব্যে তিনি আবার বলেছেন যে অমি রহমান পিয়াল সুইডেনে কোথায় উঠবেন বা থাকবেন সেটিও নাকি তিনি চাইলে দিতে পারেন এবং একজনকে প্রশ্ন করেছেন দেবেন কি না। কতটা জিঘাংশায় পরিপূর্ণ মন হতে পারলে এমন করে ওপেনলি লেখা যায়। কি ভয়াবহ!!
অমি রহমান পিয়াল যদি আজকে আসিফের এই পার্টিকুলার লেখার কারনে কোনো বিপদে পড়েন কিংবা তাঁর সন্তান বা পরিবার কোনো ঝুঁকির মুখে পড়ে যান সেক্ষেত্রে সেটির দায় কে নেবে? এগুলোর দায় কি আসিফ নেবে? আর এগুলো ছাড়াও আসিফ মহিউদ্দিন তার লেখায় ক্লিয়ারলি অনেক মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন অমি রহমান পিয়ালের বিরুদ্ধে যেগুলোর ব্যাপারে অমি রহমান পিয়াল এখনই আইনী ব্যবস্থা নিতে পারেন এবং জার্মান ও সুইডিশ দুই সরকারের হোম অফিস এবং রিলেটেড পুলিশ অথরিটিকে জানাতে পারেন অভিযোগ আকারে। আমার বিশ্বাস একজন ভালো আইনজীবি দিয়ে গুছিয়ে সকল প্রমাণ সহ এই ব্যাপারগুলো জমা দিতে পারলে সেখানকার আইন ও শৃংখলা বাহিনী আসিফের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
পঞ্চমত,
কার মৃত্যুর ঝুঁকি বেশী কিংবা কার মৃত্যুর ঝুঁকি কম, এইসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার কিংবা জাজমেন্টাল হবার ব্যাপারটি হতাশার। যে ব্যাক্তি নিজের জীবন বিপন্ন মনে করবেন তিনি-ই মূলত তাঁর জীবনের ঝুঁকির ব্যাপারে সবচাইতে ভালো বলতে পারবেন। এগুলো প্রমাণ করবার এবং ভালো করে দেখাবার দায়িত্বও অবশ্য ব্যাক্তির নিজের। কিন্তু কোথাকার কোন আসিফ মহিউদ্দিন এসে আরেকজনের জীবনের ঝুঁকি নির্ণয় করবেন, কেন করবেন? কোন ক্ষমতাবলে তিনি তা করবেন? এই অথরিটি তাকে কে দিয়েছে? কিভাবে দিয়েছে?
asif mohiuddin
মগাচীফ বলতে এখানে আসিফকে বুঝানো হয়েছে। (ব্লগিং জগতে আসিফ মগাচীফ নামে সর্বাধিক পরিচিত) |
পরিশেষঃ
লেখাটি লিখতে আমি মূলত ইচ্ছুক হয়েছি আসিফের লেখার মধ্যে তীব্র অহংকার, আইনী আলোক বিচারে কন্ট্রাডিকশান এবং একজন ব্যাক্তির প্রাইভেসী নষ্ট করা হয়েছে দেখেই। আরেকজন ফেলো রাইটারের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস কি কিংবা সেটিকে পাবলিক্লি পাব্লিশ করা আসলে ইউরোপিয়ান সিভিক এটিকেটের সাথে যায়না। এগুলো অত্যন্ত ছোটলোকী ঘরানার কাজ। যদিও এখানে ব্যাক্তির রুচীর ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিংবা তিনি কিভাবে ভাবেন বা কোন পরিবেশ থেকে এসেছেন।
আসিফ মহিউদ্দিন সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানীতে ভদ্র ও সভ্য একটা সমাজের সাথে মেশা শুরু করেছেন। এটা তার জন্য সূবর্ণ সুযোগ সভ্যতা ও ভব্যতা শিখবার। ইউরোপের নর্মস গুলো তিনি যত তাড়াতাড়ি ধরতে পারবেন, আত্নস্থ করতে পারবেন, সেটা ততই তার জন্য মঙ্গলকর হয়ে উঠবে বলে আমি মনে করি।
Barrister Nijhoom Majumdar