1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ডুবন্ত এবি ব্যাংক: মোরশেদ খানের বিরুদ্ধে দেশের সবচেয়ে বড় জালিয়াতিসহ ব‍্যাপক অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক এবি ব্যাংক দীর্ঘদিন আস্থার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সম্প্রতি এ ব‍্যাংকের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছরের কার্যক্রমে ব‍্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ‍্য জানা গেছে যা আশঙ্কাজনক। বিদেশে অর্থ পাচার, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সুশাসনের অভাব, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও প্রভিশন ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারণে ডুবতে বসেছে ব‍্যাংকটি। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থার এতোটাই অবনতি হয়েছে যে, বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ ঘোষণা করেও তা বাতিল করতে হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচারে ব্যাপকভাবে আলোচিত ‘পানামা পেপারস’ এ বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের যে যে ঘটনা ফাঁস হয়েছে, তা মূলত মোরশেদ খান গং কর্তৃক অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের প্রতিফল।
উল্লেখ্য, ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুর্নীতি দমন কমিশন ব‍্যাংকের চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ অবস্থায় আজ চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ ও পরিচালক ফাহিমুল হক পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু এ সকল কর্মকাণ্ডে নেপথ্যের প্রধান ব‍্যক্তি মোরশেদ খান ও তার ছেলে ফয়সাল খান রয়ে গেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
জানা গেছে, এবি ব্যাংকের ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় রয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। তিনি ও তার ছেলে ফয়সাল খানের বিরুদ্ধে অফশোর ব‍্যাংকিং চ‍্যানেলের মাধ্যমে ৫৪ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে। বকের একটি সূত্রে জানা যায়, পিতা-পুত্র পর্দার আড়াল থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। ব‍্যাংকের তিন জনকে পদত‍্যাগে বাধ‍্য করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব‍্যাংক ও দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে।
ভুয়া আদেশে ও ভুয়া লেনদেন দেখিয়ে ৩৪০ কোটি টাকা পাচার
গৃহীত ঋণ ব‍্যবহার না করে এবি ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে চারটি বিদেশি কোম্পানির নামে ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার (৩৪০ কোটি টাকা) পাচার করেছেন মোরশেদ খান। টাকার অঙ্কে দেশের ব্যাংকিং খাতে এর আগে জালিয়াতি হলেও অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে এটাই সবচেয়ে বড় জালিয়াতির ঘটনা।
ভুয়া লেনদেন ও ভুয়া কার্যাদেশের বিপরীতে নেওয়া এসব ঋণের অর্থ অন্য হিসাবে পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে প্রতিষ্ঠান চারটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের গ্লোবাল এমই জেনারেল ট্রেডিং ও সেমাট সিটি জেনারেল ট্রেডিং, সিঙ্গাপুরের এটিজেড কমিউনিকেশনস পিটিই লিমিটেড ও ইউরোকারস হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেড। সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা মোরশেদ খানের মালিকানাধীন।
অবিশ্বাস‍্য হলেও সত্যি যে মোরশেদ খানের ইউরোকারস হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৩ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার হললেও, সেটিকে ঋণসুবিধা দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার (১১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা)। মাত্র ২০ লাখ ডলারের ভুয়া ঋণপত্র ইস‍্যু করে ঋণ নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এভাবে ব‍্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে থেকে কিংবা নিজের বিশ্বস্ত লোকদের পরিচালক ও চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ব‍্যাংকিং নীতিমালা ভঙ্গ করে মিলিয়ন ডলার লোপাটের কাহিনী কল্পনাকেও হার মানায়।
অন্য দেশে ঋণ পরিশোধ:
এবি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের গ্লোবাল এমই জেনারেল ট্রেডিংকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাড়াতে ১৫ লাখ ডলার বা ১২ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশের রহিমআফরোজ গ্লোবাল লিমিটেডের ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ঋণের অর্থ স্থানান্তর হয় এবি ব্যাংকের মুম্বাই শাখার রহিমআফরোজ ব্যাটারির হিসাবে, যা দিয়ে রহিমআফরোজ ব্যাটারির ভারতের বিভিন্ন ঋণের দায় সমন্বয় করা হয়।
এছাড়া মোরশেদ খান তার জামাতা সাইফুল হকের মাধ্যমে দুবাইয়ে শরীয়াহ ভিত্তিক ব‍্যবসায়ে বিনিয়োগ করেন ২০ মিলিয়ন ডলার। দুবাইয়ে খুররম আবদুল্লাহ নামে এক আরব ব‍্যবসায়ীর সাথে যৌথ উদ্যোগে ব‍্যবসার জন্য জামাতা সাইফুল হকের প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের নামে ঋণ মঞ্জুর করে তা থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয় দুবাইয়ে।
সহিংস আন্দোলন ও নাশকতায় অর্থ যোগান:
২০১৪ এর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবং ২০১৩ সালের পুরো বছর জুড়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন ও বিএনপি জামাতের সহিংসতায় যারা আর্থিক সহায়তা দান করেছিল তাদের মধ্যে মোরশেদ খান শীর্ষতম একজন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগেও তিনি বড় অংকের টাকা দিয়েছেন। এছাড়া ফয়সাল খান কর্তৃক লন্ডনে তারেক রহমানকে প্রতি মাসে ৪০ লক্ষ টাকা দেয়া ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদত্ত অনুদান ওপেন সিক্রেট একটি বিষয়। উল্লেখ্য তারেক রহমানের জাহাজ ব‍্যবসার সহযোগী চট্টগ্রামের জাহাজ ব‍্যবসায়ী মাহিন লস্করের সাথে সমন্বয় করেন মোরশেদ খান। ২০১৪ সালে এবি ব্যাংক থেকে মাহিন লস্করের প্রতিষ্ঠান মাহিন এন্টারপ্রাইজের নামে গৃহীত ৫০০ কোটি টাকার বড় অংশ জামায়াতের সহিংসতায় ও বিদেশে লবিস্টদের জন্য পাচার করা হয়।

 
তারেক রহমানের সাথে ব‍্যবসা:
ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল‍্যান্ডে কুন্ডু নামের একজন জাপানি নাগরিক ও তারেক রহমান ও মোরশেদ খানের মালিকানায় একটি কোম্পানি গঠন চূড়ান্ত হয়েছিল। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে হংকংয়ের একটি ব‍্যাংকে ১৬ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়। পাচারকৃত অর্থ হংকং পুলিশ জব্দ করলে তারেক রহমান অংশীদারি ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। পরবর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ফেরদৌস খান ও এটর্নি জেনারেল মামলার আলামত সংগ্রহ করলে হাইকোর্ট মোরশেদ খানের বিরুদ্ধে রায় দেন যা আপীল বিভাগে বিচারাধীন।
বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিমের সম্পদ ক্রয়:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল খুনিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে এই মর্মে সরকারি ঘোষণা সত্ত্বেও ঢাকার সাত মসজিদ রোডে অবস্থিত খুনি মেজর ডালিমের বাড়ি ট্রেনিং একাডেমির নামে ক্রয় করে এবি ব্যাংক। ডালিমের মেয়ে স্বস্তি হকের সঙ্গে ফয়সাল খান নিজে যোগাযোগ করে বাজার মূল‍্যের চেয়ে বেশি দাম নির্ধারণ করেন। সরকারি দলের এক ব‍্যবসায়ী নেতার আশ্বাসের ফলে মোরশেদ খান বাড়িটি ক্রয় করেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। বিক্রয়লব্ধ অর্থের একটি অংশ মেজর ডালিমের কাছে পাঠানোর ব‍্যবস্থাও করা হয় এবি ব্যাংকের অফশোর ব‍্যাংকিং চ‍্যানেলে।
এদিকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)-সহ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এবি ব্যাংক ও সিটিসেলের ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। এর মধ্যে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাসহ (সিএফও) সাবেক-বর্তমান ১২ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। দুদকের মামলায় সিটিসেলের নামে এবি ব্যাংকের গ্যারান্টি নিয়ে আটটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।
এ মামলায় বেশকিছুদিন পলাতক থেকে সম্প্রতি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান চৌধুরী। তবে জামিন নেয়ার আগে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা পলাতক থাকায় ব্যাংকটির কার্যক্রমে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসে।
প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরে বিনিয়োগ কমেছে ৩৫৫ কোটি টাকা, স্থায়ী সম্পদ কমেছে ১০ কোটি টাকা এবং অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এবি ব্যাংকের ধার করার পরিমাণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
খেলাপি ঋণের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ১১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ৮৬৪ কোটি টাকা। এছাড়া মুনাফা গত বছরের প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। ফলে আগের শেয়ারপ্রতি আয় এক টাকা ৪৬ পয়সা থেকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৯ পয়সায়।
এবি ব্যাংকের তিনজনের পদত্যাগের কলকাঠি নাড়ছেন মোরশেদ খান!
ফয়সাল খান আদালত কর্তৃক জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীসহ সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
Jamaat ex-MP Shahjahan, Faisal Morshed Khan get jail terms
জানা গেছে, ১/১১ এর পর মোরশেদ খানের ছেলে ফয়সাল খান বিভিন্ন অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে গেলে আস্থাভাজন ও অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের একজন হিসেবে এম ওয়াহিদুল হককে ডেউন্ডি ও নয়াপাড়া চা বাগান থেকে এনে এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের ব‍্যবস্থা করেন মোরশেদ খান। পানামা পেপারসে নাম আসা ও অর্থ পাচার কেন্দ্রিক আইনগত পদক্ষেপের মুখোমুখি হওয়ায় ওয়াহিদ তথ‍্য ফাঁস করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে সকল তথ্য প্রমাণ আড়াল করতে এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ দুজনকে পদত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনজন পদত্যাগ করেছেন। মোরশেদ খান ও ফয়সাল খান মূলত সব কলকাঠি নাড়ছেন
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কাগুজে কোম্পানি তৈরি করে গৃহীত ঋণের পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এবি ব্যাংকের গ্রাহক ও শেয়ার হোল্ডারদের সঞ্চিত বা বিনিয়োগকৃত অর্থ নিরাপদ থাকবে কিনা এ নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন। অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকরা সৎ ও যোগ্য ব‍্যক্তিদের কাছে ব‍্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব দেয়াসহ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, প্রথমত শেয়ারহোল্ডাররা পরিবর্তন করে থাকলে আপত্তি করার কিছুই নেই। কারণ শেয়ারহোল্ডাররা তা পারেই। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে সরকারের নজর রাখা উচিত। পাশাপাশি এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। ভবিষ্যতে কোন ধরনের অনিয়মের আগেই লাগাম টেনে ধরা উচিত বলে তিনি মনে করেন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ