1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ব্যাংক গ্যারান্টির নামে কোটি টাকা লোপাট করছে অসাধু চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া-নেয়া নিয়ে জালিয়াতির মাত্রা বেড়ে গেছে। কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। এতে ব্যক্তি হিসেবে ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী দুপক্ষই লাভবান হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক। সরকারও বঞ্ছিত হচ্ছে রাজস্ব আয় থেকে। বিশেষ করে টেন্ডার, পণ্য সরবরাহ, সরকারি কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া-নেয়ায় এই জালিয়াতি বেশি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নের ক্ষেত্রে প্রায়ই ধরা পড়ছে ভুয়া বা জাল গ্যারান্টির ঘটনা।
কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ পেতে ১৩ কোটি টাকার ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে ধরা পড়েছে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি। গ্যারান্টিপত্রে দেখা যায় প্রাইম ব্যাংকের দিনাজপুর শাখা থেকে ওই ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে। পণ্য সরবরাহে ব্যর্থতার দায়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ওই শাখা থেকে তারা এই ধরনের কোন গ্যারান্টি দেয়নি।

ব্যাংক গ্যারান্টির সত্যতা সম্পর্কে টেলিফোনে বা সরেজমিনে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হলেও এই জালিয়াতির প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদি এই ঋণ পরিণত হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণে। ভুয়া গ্যারান্টির বিপরীতে টাকা আদায় সম্ভব হচ্ছে না বলে তা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। গ্যারান্টি নগদায়ন করতে না পাড়ায় গ্যারান্টি গ্রহীতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আর্থিকভাবে। এর ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়ার লাগাম টেনে ধরার সিন্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নতুন নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে।
ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ পরিশোধের নির্দেশ : সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক সভায় ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে জালিয়াতির ঘটনাটি ওঠে আসে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান জানান, বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নে ব্যাংকগুলোর অনীহা ও বিলম্ব করছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে।
তিনি অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোর প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যথাসময়ে ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ পরিশোধ করা না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি যথাসময়ে ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টির ব্যাপারে অভিযোগ এলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক ব্যাংককে গ্যারান্টির অর্থ ফেরৎ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ব্যাংক গ্যারান্টি না দিয়ে ভুয়া কাগজপত্রের ভিত্তিতে কাজ হয়ে থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু করার থাকে না।
তিনি বলেন, এই জন্য ব্যাংকগুলোকে গ্যারান্টি নেয়ার আগে তা যথাযথভাবে নিশ্চিত হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফলে এই প্রবণতা এখন কমে আসতে শুরু করেছে।
ব্যাংক গ্যারান্টি কি : ব্যাংক গ্যারান্টি হচ্ছে বহুল ব্যবহৃত এক ধরনের নিশ্চয়তাপত্র। যাতে শর্তসাপেক্ষে সুনির্দিষ্ট অর্থমূল্য থাকে। কোনো পণ্য সরবরাহ বা কোনো কাজ সুচারুরূপে করে দেয়ার শর্ত হিসেবে এই গ্যারান্টি দেয়া হয়। শর্ত অনুযায়ী তা করতে না পারলে সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নিতে পারে গ্রাহক। সম্প্রতি ঋণ ও এলসির বিপরীতেও ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া-নেয়া হচ্ছে।
ব্যাংক গ্যারান্টি নিতে হলে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক অনুযায়ী কিছু টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। গ্যারান্টির বাকি টাকার বিপরীতে ব্যাংক সুদ আরোপ করে। একে এক ধরনের পরোক্ষ ঋণ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।
ব্যাংক গ্যারান্টি জালিয়াতি : টাকা তুলতে গিয়ে বেশ কিছু ভুয়া গ্যারান্টির সন্ধান পাওয়া গেছে। সংশ্লিস্ট ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তেও এর সত্যতা মিলেছে। এর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, মার্কেন্টাইল, ঢাকা, প্রাইম, এনসিসি, ন্যাশনাল, যমুনা ব্যাংকে গ্যারান্টি জালিয়াতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর কিছু গ্যারান্টির সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আর কিছু প্রতরণার মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে প্যাসিফিক গ্রুপের ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে রয়েছে মোটা অংকের ব্যাংক গ্যারান্টি। এসব গ্যারান্টির বিপরীতে তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকে তাদের গ্যারান্টির পরিমাণ ১৪০ কোটি টাকা- যা এখন খেলাপি। একই ব্যাংক থেকে সীমা অতিরিক্ত ঋণ দেয়ার পরও মাইশা গ্রুপের নামে আরও ৬৫ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি (বিটিআরসি) বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ব্যাংক গ্যারান্টি বাবদ প্রায় ২০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তারা ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়ন করতে গিয়ে এটি যে ভুয়া তা জানতে পারে। এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর পর তারা তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে।
বান্ধব ট্রেডিং নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ক্রেডিড অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখা থেকে ৭৮ লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দিয়ে স্থানীয় একটি সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব নেয়। পরে টোলের টাকা সড়ক বিভাগে জমা না দেয়ায় তারা ব্যাংক গ্যারান্টি ভাঙ্গাতে গিয়ে জানতে পারে এটি ভুয়া।
৫ লাখ টাকার ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে নৌযানের নকশা প্রণয়নের নিবন্ধন নিয়েছে রেডিয়েন্ট মেরিন ডিজাইন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ট্রাস্ট ব্যাংকের ধানমণ্ডি শাখা থেকে এই গ্যারান্টি নেয়া হয়েছিল। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর খোঁজ নিয়ে জানতে পারে এটি ভুয়া। পরে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
দেশের ১২ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ড প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে মোটা অংকের অর্থ রয়েছে ব্যাংক গ্যারান্টি বাবদ।
ঢাকা ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পেতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে ৩৩ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া হয়। শর্ত ভঙ্গের দায়ে চুক্তি বাতিল করে গ্যারান্টির টাকা তুলতে গিয়ে সড়ক বিভাগ জানতে পারে এটি ভুয়া। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের নামে জনতা ও সোনালী ব্যাংকের দেয়া প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ পরিশোধ না করায় তা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংক থেকে খাদ্য ও চিনি শিল্প কর্পোরেশনকে দেয়া ১২০ কোটি টাকার গ্যারান্টি খেলাপি হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে তা সম্প্রতি আদায় হয়েছে। সানমুন গ্র“পের নামে দেয়া ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ব্যাংক গ্যারান্টি নন-ফান্ডেড বা পরোক্ষ দায়। এটি মেয়াদ পূর্তির আগেই আমরা আদায় করে থাকি। কিছু ক্ষেত্রে আদায় হচ্ছে না। তখন এর বিপরীতে প্রভিশন রেখে ব্যাংককে ঝুঁকিমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
সূত্র জানায়, ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে সরকার নির্ধারিত হারে ভ্যাট আদায় করে। এছাড়া গ্যারান্টির টাকা যে হিসেবে জমা হয় তার বিপরীতেও সরকার আবগারি শুল্ক ও উৎসে আয়কর পেয়ে থাকে। গ্যারান্টি ভুয়া হওয়ায় সরকার এসব কিছুই পাচ্ছে না। অথচ অসাধু প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ