1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশকে জানাতে ‘মানিক মিয়া’ আসছেন!

কমলিকা হাসান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১

‘আসসালামু আলাইকুম। সবাইরে বিজয় দিবসের শুভেসসা। আমি মানিক, মানিক মিয়া; আসতাছি বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস লইয়া মাইনষেরে জানাইতে। মা হাসুরে…আমি তোর মানিক চাচারে…তোর আব্বাজানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমি আমার বন্ধুর গপ্পো সবাইরে কইতে আসতেছিরে মা। তোর লগেও দ্যাহা করুমনে।’

চেয়ারে বসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশবাসীর উদ্দেশে কথাগুলো বলছিলেন ঘন গোঁফওয়ালা, চশমা পরা বয়স্ক এক ব্যক্তি। কাঁচা-পাকা চুলওয়ালা ব্যক্তির পরনে সবুজ চেকের পাঞ্জাবি। তার গলায় ঝোলানো মাফলার।

শুরুতে দেখে মনে হতে পারে, ওই ব্যক্তি কোনো পাপেট শোর চরিত্র, কিন্তু আদতে তা নয়। এ মানিক মিয়া গল্পকথক এক রোবট, যার প্রধান নির্মাতা শেখ নাঈম হাসান মুন।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন অ্যান্ড অন্ট্রুপ্রেনিয়রশিপ বিভাগের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র নাঈম। তার ধ্যান-জ্ঞান রোবোটিকস। ‘মানিক মিয়া’সহ এ পর্যন্ত ৩০টি রোবট বানিয়েছেন যশোরের এ তরুণ; পেয়েছেন পুরস্কারও। কথা হলো নাঈমের সাথে।

ধারণা এলো কীভাবে

২০১৯ সালের আগস্টে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়। সেই অ্যাওয়ার্ড জয়ীদের একজন ছিলাম আমি। ‘গ্যারি’ নামের একটি রোবটের জন্য অ্যাওয়ার্ডটি পাই। এটি মূলত নেটওয়ার্কিং রোবট, যেটা সাইবার সিকিউরিট দেয়। তো সেই সময়ে মুজিববর্ষকে সামনে রেখে কে, কোন ধরনের ইনোভেশন করবে, তার একটা আলোচনা চলছিল। আমার মাথায় তখন কমপ্লিট একটু কিছু করার প্ল্যান আসল। অর্থাৎ এমন কিছু একটা করা, যেটা হবে কমপ্লিট প্যাকেজ। এতে একসঙ্গে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলার ইতিহাস জানা যাবে। আর সেই থেকেই কাজটা শুরু করি।

দলে ভাঙা-গড়া

এ রোবটটা বানাতে গিয়ে আমি রিসার্চে অনেক টাইম দিয়েছি। আমার টিম ব্যাপক ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে গেছে। চারবার টিম ভেঙেছে। কারণ টিম মেম্বারদের সবার সমান ডেডিকেশন ছিল না। আমার তখন বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের দুটি অংশ মাথায় আসছিল। সেগুলো হলো ‘আমাদের দাবায়া রাখতে পারবা না’, ‘যার যা কিছু আছে তা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ো।’ এই ইন্সপিরেশন নিয়ে প্রজেক্ট থেকে না সরে এগিয়ে গেছি। ফাইনালি চারজনের দল নিয়ে এটা বানাতে পেরেছি। এ দলে আমার সঙ্গে আছে আর এন বাধন, মনিরুজ্জামান হৃদয় ও নাঈমুল ইসলাম অরণ্য।

নির্মাণের সময়

আমার প্রথম টার্গেট ছিল মুজিববর্ষ শুরুর দিন ২০২০ সালের ১৭ মার্চ রোবটটা লঞ্চ করা, কিন্তু সে সময় আমার পর্যাপ্ত ফান্ডিং ছিল না। এ কারণে কাজটা পিছিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে টার্গেট ধরলাম ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর। তখন ফেইল করলাম অন্য একটা কারণে। আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা হবে কি হবে না, সেটা নিয়ে একটা দোটানা ছিল। অক্টোবরে জানতে পারলাম আমাদের অটোপাস দেয়া হয়েছে। এর পরে দুই মাস সময়ে এ কাজ কমপ্লিট করা সম্ভব ছিল না। তাই রোবটটা বানাতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করলাম। এবার আমি একটু নীরবে কাজ করতে থাকি। এ বছরের জুলাইয়ের শেষের দিকে এসে আমি টিম নিয়ে কাজ শুরু করি। তখনই আসলে হিউম্যানয়েড রোবট নিয়ে কাজ করার বিষয়টা জানাজানি হলো। আমার টিমমেটরা হার্ডওয়ার্ক করেছে। তাদের কারণে এই ১৬ ডিসেম্বরে বেটা ভার্সনটা রিলিজ করতে পেরেছি।

টাকার জোগান কীভাবে

রোবটটার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও ফাইনাল প্রোডাক্ট মিলিয়ে মোট খরচ ৯ লাখ টাকার কাছাকাছি। আমার নিজের একটা আইটি ফার্ম আছে ‘এনাবেল আইডি’ নামে। এটা মূলত রোবোটিকস, সাইবার সিকিউরিটি এবং অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করে। সেখানে আমার ব্যক্তিগত আয়ের কিছু অংশ থেকে ৬ লাখ টাকার মতো আরঅ্যান্ডডি (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) খাতে ব্যয় করি। বাকি তিন লাখ টাকার মতো দিয়েছেন নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন।

মানিক মিয়া নামকরণ কেন

বেটা ভার্সন রিলিজের আগে নভেম্বরে আমরা নামটা ফিক্স করি। যেহেতু আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুকে জানানো, সেহেতু এ কাজে তারই কাছের একজনকে বেছে নেয়া হয়েছে। সে মানিক মিয়া কে, তা যথাসময়ে জানানো হবে।

কী বার্তা দেবেন মানিক মিয়া

বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে নেটে জানতে গেলে তথ্য পাওয়া গেলেও অনেক সময় তা বিক্ষিপ্তভাবে থাকে। অর্থাৎ একসঙ্গে কমপ্লিট আকারে পাওয়া যায় না। আমরা সে কাজটা করতে চাই। ধরা যাক, বঙ্গবন্ধু অবসরে কী কী কাজ করতেন, কী খেতেন, এমন তথ্য হয়তো নেটে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু সেটা এতটা ডিটেইল আকারে পাওয়া হয়তো যাবে না। আমরা মানিক মিয়াকে দিয়ে ডিটেইল বলাব। এ রোবট একই সঙ্গে বাংলাদেশের সংগ্রামের ইতিহাস, বাংলার ইতিহাসের কথা বলবে।

ইতিহাস জানাতে রোবট কেন

ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে আমাদের সভা-সেমিনারগুলোতে অনেক সময় বক্তার কথায় মনোযোগ থাকে না শ্রোতাদের। বক্তা রোবট হলে কিন্তু স্বাভাবিক কারণেই আগ্রহ বাড়বে। আর এটি চিন্তা করেই হিউম্যানয়েড রোবট বানিয়েছি আমরা।

আপনাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী

আমরা চাই বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানুক। সে কারণে আমরা ফাইনাল ভার্সনটা সময় নিয়ে গুছিয়ে করার চেষ্টা করছি। আমাদের এরই মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) রেডি হয়ে গেছে। এরপরও আমরা সেটি সংযুক্ত করিনি। আমরা একটা গাইডলাইন খুঁজছি। তার আলোকে আমরা কাজটা করব।

চূড়ান্ত সংস্করণ কবে আসবে

আমাদের টিমের লক্ষ্য আগামী বছরের শুরুর মাসগুলোতে রোবটটাকে পাবলিক করা, তবে সে সময়কে চূড়ান্ত বলতে পারছি না। কারণ এটা খুবই সেনসিটিভ একটা কাজ। এখানে একটা ভুলে বড় ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে; অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আমরা চাই বিষয়টা আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখাই। তিনিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আমরা গাইডলাইন নেব। আমরা ডেটা টিমও গোছাচ্ছি। সবকিছু ঠিকঠাক হলে বিষয়টা ফাইনালাইজ করব।

সাড়া কেমন পাচ্ছেন

বেটা ভার্সন নিয়ে এরই মধ্যে অনেকে আগ্রহ দেখিয়েছে। পলক ভাই (আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক) কংগ্রাচুলেট করেছেন। মাশরাফি ভাই (জাতীয় দলের ক্রিকেটার) প্রেইজ করেছেন। এর বাইরে অনেকেই পারসোনালি কংগ্রাচুলেট করেছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ