1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নিজ শিশুকন্যাকে ধর্ষণের মামলা বিএনপি নেতা রুমির বিরুদ্ধে

নাজিম আজাদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ডা. ইব্রাহীম রহমান রুমির বিরুদ্ধে নিজের চার বছরের কন্যা সন্তানকে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন তারই স্ত্রী । চলতি ডিসেম্বরের প্রথম দিন রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলা (মামলা নম্বর কলাবাগান-১/২২৩) করেন তিনি।

মামলার বাদী অভিযোগ অভিযোগ করেন, মামলার পর তিন সপ্তাহ ধরে আসামি ইব্রাহীম রহমান প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। উপরন্তু, চলতি সপ্তাহে হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমানের ছেলে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ডা. ইব্রাহীম রহমান রুমি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনি মামলার আইও’র (তদন্ত কর্মকর্তা) সঙ্গে কথা বলুন।’

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত চলছে। তিনি চিকিৎসকদের প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছেন।

জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর কলাবাগান থানায় দায়ের করা মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালের ২৬ জুন পারিবারিকভাবে ডা. ইব্রাহীম রহমান রুমি (৩৫) এর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর বিবাদীর সঙ্গে সংসারকালে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সংসার জীবনে বনিবনা না হওয়ায় গত বছরের ২৬ আগস্ট রুমির সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটে।

এজাহারে মামলার বাদী উল্লেখ করেন, বিবাদীর (ইব্রাহীম রহমান রুমি) সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর চলতি বছরের ২৩ মার্চ বিকাল আনুমানিক সাড়ে চারটায় তার অনুপস্থিতিতে চার বছরের শিশুকন্যাকে উত্তরার তার (আফিয়ার) বাসা থেকে নিয়ে যান রুমি। গত ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রুমি তার কন্যাকে কলাবাগানের বাসায় নিজের হেফাজতে রাখেন। শিশুটির মাযের অভিযোগ, ওই সময় ফেরত চাইলেও তার কন্যাকে নিতে দেননি রুমি। পরে এ বছরের ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশে কন্যাশিশুকে নিজের হেফাজতে নেন তিনি।

এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, এ বছরের ১২ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৮টায় আবারও শিশুসন্তানটিকে নিজের কলাবাগানের বাসায় আনেন ইব্রাহিম রহমান রুমি। পরদিন ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে শিশুর মা কলাবাগান থেকে চার বছরের শিশুটিকে উত্তরায় নিজের বাসায় ফিরিয়ে আনেন। বাসায় আনার পর পরিহিত পোশাক পরিবর্তনকালে মেয়ের শরীরে নির্যাতনের ছাপ দেখতে পান তিনি। এজাহারে শিশুটির ওপর শারীরিক নিপীড়ন ও নিগ্রহের অভিযোগ বর্ণনা করেন বাদী।

নির্যাতিত শিশুর মা এজাহারে উল্লেখ আরও করেন, গত ২৩ মার্চ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর এবং ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিবাদীর বর্তমান ঠিকানার বাসায় আমার মেয়ের অবস্থানকালে বিভিন্ন সময়ে মেয়ে… (প্রকাশযোগ্য নয়)। এরপর গত ২৭ নভেম্বর বিকালে নিপীড়নের শিকার শিশুসন্তানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান তার মা। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শিশুটিকে ওসিসিতে (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) ভর্তির জন্য রেফার করেন। ২৭, ২৮ ও ২৯ নভেম্বর নির্যাতনের শিকার শিশুটির যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

শিশুটির ওপরে নির্যাতনের অন্তত একমাস পর কেন অভিযোগ করা হলো— এমন প্রশ্নের জবাবে শিশুটির মা বলেন, ‘ও যে সময়টাতে তার বাবার বাসায় ছিল, আমি তখন ইটালিতে ছিলাম। আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাইনি। ওর মুখের ভেতর ঘা, পিঠে নখের আঁচড় দেখে আমি ওকে (শিশু) জিজ্ঞাসা করি। ও তখন বলে— ওর পাপা কী কী করেছে (প্রকাশযোগ্য নয়)। এরপর আমি ওর বাবাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করি— তোমার মেয়ের সঙ্গে কী করেছো? ও তো তোমার কথা বলছে। ওর বাবা বলে— ও মিথ্যা বলছে।’

শিশুটি বর্তমানে শারীরিকভাবে ভালো থাকলেও মানসিকভাবে ভালো নেই বলে জানান তার মা।

গত ১ ডিসেম্বর ইব্রাহীম রহমান রুমির বিরুদ্ধে মামলার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) তার জামিন পাওয়ার খবরটি মামলার বাদীকে জানান কলাবাগান থানার সাব ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম।

শিশুটির মা বলেন, ‘আমি বলেছি— কবে জামিন পেয়েছে বলুন। তদন্তকারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, তিনি ছুটিতে ছিলেন, এসে দেখেন জামিনের কাগজ। কিন্তু কবে জামিন পেয়েছেন, কোন কোর্ট জামিন দিয়েছে সেটা বলেননি।’

বাদী অভিযোগ করেন, মামলার পর আসামি ইব্রাহীম তার পিতার এলাকায় আছেন, এমন খবর দেওয়া হলেও তদন্তকর্তা আসামিকে গ্রেফতারের বিষয়ে কোনও গুরুত্ব দেননি।

তিনি জানান, ইব্রাহীম রহমানের বাসায় থাকার সময় দুদিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল শিশুটিকে। ওই সময় সে হাতে ব্যথা পেয়েছে বলে আমাকে বলা হয়। যদিও কোন হাসপাতালে নেওয়া হয়, তা আমাকে জানানো হয়নি। জানতে চাইলেও বলে না। নিপীড়নের শিকার শিশুটির দুটি পরীক্ষা এখনও বাকি আছে বলে জানান শিশুর মা।

জানতে চাইলে কলাবাগান থানার সাব ইন্সপেক্টর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। বড় কথা হচ্ছে— ডাক্তারের রিপোর্ট আসবে, এরপর স্বাক্ষ্যপ্রমাণ আসলে বলা যাবে। হাইকোর্ট থেকে আসামি জামিনে আছেন। আমি তিন-চার দিন আগে খবর পেয়েছি।’

মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ মামলা তদন্তাধীন আছে। ডাক্তারের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।’

১ ডিসেম্বর মামলার পর আসামির অবস্থান জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গ্রেফতার করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। টিমসহ চেষ্টা করেছি। সুতরাং, অভিযোগ সঠিক নয়।’

মামলার বাদীর মা (শিশুটির নানি) বলেন, তার মেয়েকে আসামি ইব্রাহীম রহমান শারীরিকভাবে মারধর করতো। পাশাপাশি সে নানা ধরনের হয়রানিও করছে।

পুরো পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহীম রহমান রুমির বাবা সাবেক এমপি মসিউর রহমান এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এফএলএডি) এর আইন ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম বলেন, ‘জামিন পাওয়া সবার অধিকার। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হওয়া সত্ত্বেও অপরাধীকে গ্রেফতার না করার কোনও বিকল্প থাকে না। এ মামলার আসামি যেহেতু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি। তাই তার বিরুদ্ধে আনা মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থেকেও তিনি যে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন, সেখানে দুইটি বিষয় ঘটতে পারে। এক. মামলায় জামিন পাওয়ার উপযুক্ত কারণ ছিল বিধায় তাকে আদালত জামিন দিয়েছেন। অথবা দুই. আদালতকে মিসগাউড করে তিনি জামিন পেয়েছেন। কেননা, প্রায়ই এমন নজির আমাদের সামনে এসেছে। তাই মামলার নথি পর্যালোচনা করলে তার জামিনের পেছনে উপযুক্ত কারণ খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত