1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মুরগির ডিম ফোটানোর ডিজিটাল মেশিন তৈরি তরুণের

অশোক আখন্দ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১

দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রচলিত অ্যানালগ মেশিনে যেখানে ডিম নষ্টের হার হাজারে ৩০-৪০টি, সেখানে রাশেদের ডিজিটাল মেশিনে এই হার ৪-৫টি। মাসে তার একটি মেশিন থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৬৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার পর্যন্ত বাচ্চা।

বগুড়ার গাবতলী পৌর এলাকার রাশেদুল ইসলাম রাশেদের বাড়িতে ডিমে তা দেয়ার সময় মা মুরগিকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল শেয়াল। ওই ঘটনার পর একটি ডিম ভেঙে তিনি দেখতে পান, কয়েক দিন পরই ফুটত বাচ্চা। তবে মা মুরগির না থাকায় বাচ্চা ফোটানো আর সম্ভব ছিল না।

রাশেদ পরে ডিমগুলো একটি কার্টনের মধ্যে রেখে বৈদ্যুতিক বাল্ব দিয়ে তাপ দেন। এতে ৭ দিন পর সব ডিম থেকে ফোটে বাচ্চা। ১৪ বছর আগের সেই ঘটনার পর থেকেই মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর ডিজিটাল মেশিন তৈরির চেষ্টা শুরু করেন রাশেদ।

এত বছরের পরিশ্রম শেষে সফল হয়েছেন রাশেদ। এই বছরের জুনে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম মেশিন তৈরি করেছেন তিনি। সেই মেশিনের সফলতার পর তৈরি করেছেন আরও কয়েকটি। ফলও পাওয়া যাচ্ছে ভালো।

দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রচলিত অ্যানালগ মেশিনে যেখানে ডিম নষ্টের হার হাজারে ৩০ থেকে ৪০টি, সেখানে রাশেদের ডিজিটাল মেশিনে এই হার ৪-৫টি। মাসে তার একটি মেশিন থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৬৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার পর্যন্ত বাচ্চা।

পোল্ট্রি ও হ্যাচারি ব্যবসায়ীদের জন্য আধুনিক এ যন্ত্র তৈরি করা তরুণ প্রকৌশলী রাশেদের বাড়ি গাবতলী পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক বিষয়ে। এ ছাড়া নিয়েছেন দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ।

রাজশাহী কোর্ট স্টেশন মোড়ের তাকি পোলট্রি ফার্ম প্রথম রাশেদের ডিম ফোটানোর মেশিনটি কেনে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুস্তাগীর রহমান জানান, এনালগ মেশিনের চেয়ে ডিজিটাল মেশিন নেয়ার পর থেকে শতকরা ৪০ ভাগের বেশি লাভ করছেন তারা।

তাকি ফার্মে সফলতার পর দেশের বেশ কয়েকটি জেলার হ্যাচারিতে ডিজিটাল মেশিন স্থাপন করেছেন রাশেদ।

তার মধ্যে রয়েছে জয়পুরহাটের আর্কেলপুর থানার সোনামুখি এলাকার মেসার্স মাহিন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, ফারুক আহম্মেদের ইশা পোলট্রি, বরিশালের বানারীপাড়ায় ইউসুফ আলী পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি। এসব মেশিনে বাচ্চা ফুটানোর সক্ষমতা মাসে ৬৮ হাজার।

জয়পুরহাটের মেসার্স মাহিন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির মালিক গোলাম মোস্তফা বিদ্যুৎ জানান, পাঁচ বছর আগে পোলট্রি হ্যাচারি শুরু করেন তিনি। ৬ মাস আগে রাশেদের কাছ থেকে ডিম ফোটানোর ডিজিটাল মেশিন নেন তিনি। প্রতি মেশিন তৈরিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা।

তিনি আরও জানান, তার মেশিনে মাসে দুই বারে ৬৮ হাজার ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো যায়। হাজারে ডিম নষ্টের হার ৪-৫টি। ডিজিটাল মেশিন ব্যবহারের পর তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন।

জয়পুরহাটে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ পোলট্রি খামার রয়েছে। মেশিনটির ব্যবহার বাড়লে হ্যাচারি ব্যবসায়ী ও খামারি উভয়ই লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

রাশেদ জানান, মেশিনের ধারণক্ষমতা চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানো সম্ভব। তবে মেশিনটি ব্যবহার করতে হলে উন্নতমানের জেনারেটর থাকতে হবে। তিনি ১ লাখ ৩০ হাজার ডিম ধারণক্ষমতার মেশিনও তৈরি করছেন। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।

এরই মধ্যে তিনি নারায়ণগঞ্জের মোল্লা হ্যাচারি ও স্টার হ্যাচারি অ্যান্ড পোলট্রি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৌফিক পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, গোদাগাড়ী উপজেলার তৌহিদ হ্যাচারি পোলট্রি, নরসিংদীর অরকো পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারিতে মাসে ১ লাখ ৩০ হাজার বাচ্চা ফুটানোর মেশিন তৈরি করে দিয়েছেন। আরও কয়েকটি জেলায় কাজ চলছে।

তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য মুরগির বাচ্চা ফোটানোর ডিজিটাল মেশিন তৈরির একটি আধুনিক কম্পানি স্থাপন করা। এতে হ্যাচারি ও খামারি প্রকল্পে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশে ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ হবে। বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।’

বগুড়ার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, রাশেদের মুরগির ডিম ফোটানোর ডিজিটাল মেশিন আমি নিজ চোখে দেখেছি। এ মেশিনে পোলট্রি ও হ্যাচারি খামারিদের খরচ ও অপচয় রোধের পাশাপাশি মানসম্মত বাচ্চা ফুটানো সম্ভব।

‘এই মেশিনে ডিম ফুটানো সহজ, তাই স্বল্প পুঁজিতে বেকাররা খামার স্থাপন করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে।’


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ