1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশের অর্থনীতি : ঘুরে দাঁড়ানোর ২০২১ সাল!

সুভাষ হিকমত : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১

বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বছর। ২০২১ সালে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন কাটলো সেদিকে তাকালে দেখা যায়, করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ছিল বছরজুড়ে। তবে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে উত্থান-পতনের মধ্যেই পার হলো বছরটি। একদিকে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে শিল্প-কারখানা সচল রাখার চেষ্টা করেছেন উদ্যোক্তারা। এতে করোনাকালেও রফতানিতে বেশ চাঙ্গা ভাব ধরে রাখা গেছে। অন্যদিকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর একের পর এক প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন হাজারো গ্রাহক। শেয়ারবাজারে ধসে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করা যায়নি। অর্থনীতিবিদরাও মনে করছেন, ভালো-মন্দ মিলিয়ে কেটেছে বিদায় নিতে যাওয়া বছরটি। অন্যদিকে গত ৩ জুন দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জাতীয় বাজেট পেশ করা হয় সংসদে। এবারের বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্বস্তির খবরের মধ্যে আছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ রেকর্ড গড়েছে এ বছর। বেড়েছে রেমিট্যান্স, রফতানি আয় ও মাথাপিছু আয়। এগিয়েছে মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের কাজ। উদ্বোধনের অপেক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের লাইফ লাইন পদ্মা সেতু। এ ছাড়া অন্য মেগা প্রকল্পগুলোরও অগ্রগতি হয়েছে বেশ ভালো।

কেমন কাটল ২০২১ সালের অর্থনীতি এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার প্রকোপ এখনও আছে দেশে। তবে ২০২০ সালের তুলনায় বিদায় নিতে যাওয়া বছরটিতে করোনার প্রকোপ কিছুটা কম ছিল। বিশেষ করে বছরের মাঝামাঝি থেকে ভালোর দিকে যায় দেশ। আর এ সময় থেকেই আগের বছর থেকে প্রায় একেবারে থেমে থাকা অর্থনীতির চাকা আবার সচল হতে শুরু করে। এক্ষেত্রে সরকারের সোয়া ১ লাখ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ উদ্যোক্তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে। যদিও প্রণোদনার অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এ ছাড়া এ বছর কারখানা চালু রাখায় রফতানি আয়ও ভালো ছিল। তিনি আরও বলেন, নতুন যে বছর আসছে, এ বছরটিতেও ঘুরে দাঁড়াতে চলে যাবে। তবে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন চোখ রাঙাচ্ছে। ওমিক্রন যদি বাংলাদেশে ব্যাপক হারে ছড়ায় তা হলে সব হিসাব-নিকাশ আবার পাল্টে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

২০২১-এর অর্থনীতি বেশ খানিকটা সুবাতাসও ছড়িয়েছে। গেল বছরের মাঝামাঝি থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ধারা এ বছরও অব্যাহত ছিল। যার ওপর ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও রেকর্ড গড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। যদিও বছরের শেষে রেমিট্যান্সের গতিতে কিছুটা টান পড়েছে।

বাড়-বাড়ন্ত ছিল রফতানি খাত। গেল বছরের প্রথম ৬ মাসে যেখানে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ, চলতি বছরে তা হয়েছে ২৪ দশমিক দুই-নয় শতাংশ। আর একক মাস হিসাবে গেল নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি ৩১ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, করোনার প্রথম বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের প্রথম ১১ মাস জানুয়ারি-নভেম্বরে ২ হাজার ৪৮১ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছিল। চলতি বছরে একই সময়ে রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ১৭৭ কোটি ডলারের পোশাক, যা দেশি মুদ্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে রফতানি বেড়েছে ২৮ শতাংশ।

বিপুলসংখ্যক মানুষকে করোনার টিকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো বছরের শুরুর দিকেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করে। ফলে সেসব দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান গ্রীষ্ম ও বসন্ত মৌসুমের জন্য করোনার আগের মতো ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করে। তা ছাড়া মিয়ানমারে সেনাশাসন ও ভারতে করোনার ভয়াবহতার কারণেও কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়। এর আগে থেকেই ইউরোপ-আমেরিকার অনেক ক্রেতা কিছু ক্রয়াদেশ চীন থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তর করে। বেশ কিছু দিন ভিয়েতনামে করোনার বিধিনিষেধ থাকার কারণেও বাড়তি ক্রয়াদেশ পেয়েছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ক্রয়াদেশ বেশি আসে।

২০২১-এ দুদফায় বেড়েছে মানুষের মাথাপিছু আয়। গত বছর মাথাপিছু আয় ছিল ২০২৪ ডলার, চলতি বছরের মাঝামাঝি হয় ২ হাজার ২২৭ ডলার এবং বছর শেষে এসে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৫৪ ডলারে। করোনার কারণে দেশে ফেরা প্রবাসী শ্রমিকরা ফেরত গেছেন আগেই, নতুন করে বাজার খুলেছে মালয়েশিয়ায়। তবে করোনার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের উৎকণ্ঠা সামলে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি। তবে বছরের মাঝামাঝি ধরা পড়ে বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা। ই-ভ্যালি, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, আলেশা মার্টের মতো ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান প্রায় বিনামূল্যে মোটরসাইকেল বিক্রির পাশাপাশি অতি মুনাফার টোপ ফেলে গ্রাহকের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করে। যদিও প্রতারিত গ্রাহকদের আন্দোলন ও মামলায় ধরা পড়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। তবে প্রতারকদের কাছে আটকে থাকা অর্থ ভুক্তভোগীরা কবে ফেরত পাবেন, সে খবর জানেন না কেউ।

এতকিছুর পরও বাংলাদেশ চলতি বছরে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। বিশেষ ধরনের মুদ্রাবিনিময় ব্যবস্থা ‘কারেন্সি সোয়াপ’-এর মাধ্যমে এই ঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কা তাদের মুদ্রায় ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী অর্থ একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জামানত হিসেবে রাখবে। ঋণের মেয়াদান্তে শ্রীলঙ্কা চাইলে তার নিজস্ব মুদ্রায় বাংলাদেশকে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। এটিও এ বছরের অর্থনীতির একটি আলোচিত বিষয় ছিল।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ