কয়েকদিন আগে আমাদের সময়ে আমার একটি কলাম ছাপা হয়েছে। তার সাথে জ্বলজ্বল করছিল তাঁর একটি লেখা। অনেকদিন পর তাঁর লেখা দেখে পাঠ আগ্রহের সাথে পাঠ করলাম। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ ও এর আবেগ নিয়ে লেখা, জানতাম গাল-মন্দ চলবে। কমেন্ট কলামে তাঁকেও আমার মতো মালাউন, ‘ভারতের দালাল’ বলা এই মানুষগুলো কামড়াতে না পারলেও সারমেয়র মতো চিৎকার ছাড়ে না।
অপরাধ তাঁর একটাই, দেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সরাসরি কথা বলা। শুধু লেখালেখি করার অপরাধে আজ তিনি বেঁচে না থাকলেও আমরা মেনে নিতে বাধ্য হতাম। আমি যখন হুমায়ূন আহমেদের প্রশংসা করে লিখি অনেকে মনে করিয়ে দেন, হুমায়ূন আহমেদ তুই রাজাকার বলালেও মাওলানা মান্নানের কাগজে লিখতেন।
বহু ঘাতক দালালের পারিবারিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন। যখন তাঁর এই অনুজের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আস্থা ও দৃঢ় ভূমিকা নিয়ে লিখি তখনো এরা নাখোশ হন। বলেন, এ আর এমন কি কয়খানা বৈজ্ঞানিক ফিকশন আর কিশোর-কিশোরীর জন্য লেখালেখি।
কিন্তু তাঁরা ভুলে যান ‘ভূতের বাদশা সলোমান’ বইটির জন্য তাঁর করোটি দুভাগ করতে চেয়েছিলো জঙ্গি। তাঁর মুখে শোনা গল্প, সে ছেলেটিকে তিনি এই বই পড়িয়ে কারাগারে দেখতে গেলেন। জানতে চেয়েছিলেন ধর্মবিরোধী কি পেয়েছে এই পুস্তকে? না সূচক জবাব দিলেও যুবকটি তাঁকে জানিয়েছিল তার কোনো আফসোস নাই।
এই বইতে না লিখলেও কোথাও না কোথাও তিনি নাস্তিক আর ধর্মবিরোধী। আপনি আমি মুখে বলি বটে এখনো অক্ষত আছি।
তিনি যখন তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নৌকা বিহারে পুরো বাংলাদেশ ঘুরে দেখার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তাঁর সহধর্মিণী ইয়াসমীন হক মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে ঠাট্টা করে বলছিলেন, দৃশ্যটা ভাবলেই তাঁর পুলক জাগে, একটি নৌকায় তাঁরা দুজন আর পেছনে পেছনে নৌকা করে পাহারা দিতে দিতে যাচ্ছে গাদা বন্দুক হাতে পুলিশ।
কল্পনা কি মিথ্যা? বদলে যাওয়া বদলে দেওয়ার এই সমাজে বদলে যাওয়া মানুষের হাতে মুক্তিযুদ্ধের লেখক বা যে কেউই আজ অনিরাপদ। একান্ত আলাপ অনুষ্ঠান ও পরিচিতির সৌজন্যে বলতে পারি তিনি ছোট হয়ে আসা মুক্তবুদ্ধির দেশে বড় মাপের মানুষ।
তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনিই লিখতে পারেন, পাকিস্তান আমাদের ব্যাপারে নাক গলায় কীভাবে? তাদের নাক তো আমরা ৭১ সালেই কেটে দিয়েছি। গত ২২ ডিসেম্বর ছিলো মুহম্মদ জাফর ইকবালের জন্মদিন। তাকে শুভেচ্ছা।
লেখক : অজয় দাশগুপ্ত – কলামিস্ট ও বিশ্লেষক