1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মেয়র পদে হেরেও রসিকের ৩৩ ওয়ার্ডের ২৬টি আওয়ামী লীগের!

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হারলেও কার্যত আওয়ামী লীগেরই লাভ হয়েছে বলে আলোচনা চলছে। কারণ এ নির্বাচনে তারা জয়ের প্রত্যাশাই করেনি। এছাড়াও নগরীর ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২৬ কাউন্সিলরের বিজয় হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের ভোট আছে, কিন্তু কৌশলের অভাব ছিলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তবে স্থানীয় আ.লীগ নেতারা বলছেন, দুর্বল বিরোধী দলকে শক্তিশালী করতে কৌশলে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। যিনি কখনই আলোচনায় ছিলেন না সেই হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া রসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চমকে দিয়েছিলেন। যদিও ভোটযুদ্ধে সেই চমক ধরে রাখতে পারেননি তিনি। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। জামানত বায়েজাপ্ত হয়েছে তার।

অবশ্য প্রার্থী বাছাইয়ে যোগ্যদের মূল্যায়ন না করায় এই পরাজয়ের কারণ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আ.লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকের একাংশ।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের হাফডজন প্রার্থী মাঠে প্রচারণা চালিয়েছেন। যাদের মধ্যে আলোচনায় ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন, মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু ও জাতীয় শ্রমিক লীগের রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ। তফসিল ঘোষণার পর নতুন করে উঠে আসে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুর নাম।

তখনও হোসেনে আরা লুৎফা ডালিয়াকে নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি তিনি নিজেও কখনো মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রচারণা চালাননি। তবুও তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন।

রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এসব কারণে আওয়ামীলীগের অনেক নেতার মৌন সমর্থন ছিল রংপুর কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সদ্য বহিস্কৃত সহসভাপতি ও বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলনের প্রতি। সেই মিলন ভোটযুদ্ধে নৌকার তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছেন।

এসব বিশ্লেষণের পর রংপুর সিটি কপোরেশন নির্বাচনে সরকার সাপও মারলো, লাঠিও ভাঙলো না বলে মন্তব্য করেছেন মজিবুল নামে এক ভোটার।

তিনি বলেন, সরকার চেয়েছিলো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সুষ্ঠু নির্বাচন করতে। রসিক নির্বাচনে তাই হয়েছে। দুর্বল প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে জাপাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে আসলে।

কারণ হিসাবে তিনি বলেন, রংপুর নগরীতে আওয়ামী লীগের অনেক পরিচিত ও হেভিয়েট প্রার্থী ছিলো। কিন্তু তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সরকারি দল দায়সারাভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবুও রংপুর নগরীতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা যদি ভোট দিতো তাতেও ডালিয়ার জামানত হারানোর কথা ছিলো না। কিন্তু তার উল্টোটা হয়েছে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দীর্ঘদিন থেকে আ.লীগের যেসব মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে থেকে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে জানান দিয়েছিলেন, মনোনয়ন না পাওয়ায় ভেতরে ভেতরে তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। মৌখিকভাবে ডালিয়াকে সমর্থন দিলেও অন্তর থেকে কেউ সর্মথন দেননি। ফলে ভোটযুদ্ধের সময় তারা মাঠে কর্মী নামাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন নির্বাচন করায় দলের একটি অংশ নিরব এবং সরব সমর্থন দিয়েছে মিলনকে। অনেক নেতাকর্মী মিলনের পক্ষে কাজ করেছেন।

জানা গিয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেতাকর্মীদের পেছনে টাকা খরচ করেননি। আবার কেউ বলছেন সামনে জাতীয় নির্বাচন তাই রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে গুরুত্ব না দিয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার চার লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ২২৯টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনে ৯জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াসহ সাত প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। তাদের মোট বৈধ ভোটের আটভাগের এক ভাগ থেকে অন্তত একটি ভোট বেশি পেতে হতো। নির্বাচনে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৬। সে হিসেবে তাদের অন্তত পেতে হতো ৩৪ হাজার ৩৯৩ ভোট।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট।

জামানত হারানো অন্য প্রার্থীরা হলেন – বাংলাদেশের কংগ্রেসের আবু রায়হান (১০ হাজার ৫৪৯ ভোট), জাকের পার্টির খোরশেদ আলম (৫ হাজার ৮০৯ ভোট), খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল (২ হাজার ৮৬৪ ভোট), স্বতন্ত্র মেহেদী হাসান (২ হাজার ৬৭৯ ভোট), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র লতিফুর রহমান (৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট) ও জাসদের শফিয়ার রহমান (৫ হাজার ১৫৬ ভোট)।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেনের সই করা ফলাফল থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭শ ৯৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে জামানত টিকিয়ে রেখেছেন।

এদিকে আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকা মার্কার প্রার্থী জামানত হারানোর বিষয়টি নিয়ে নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করেন হারলেও জামানত হারানোর বিষয়টি দুঃখজনক। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তিমণ্ডল বলেন, আমি মনে করি আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে প্রার্থীকে নির্বাচনী বোর্ড মনোনয়ন দিয়েছে। প্রচারের জন্য প্রার্থী মাত্র ২০ দিন সময় পায়। সময় স্বল্পতার কারণে প্রার্থী সব ভোটারের নিকট পৌঁছাতে পারেনি। এ কারণে প্রার্থীকে দেখতে না পেরে অনেকে ক্ষোভে নৌকায় ভোট দেয়নি। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২৬ কাউন্সিলরের বিজয় হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগের ভোট ছিলো। কিন্তু প্রার্থী সময় মতো ভোটারের কাছে পৌঁছাতে না পারায় ভোট কম পড়েছে। ভোট কম পাওয়ার পেছনে বিদ্রোহী প্রার্থীকেও দায়ী করেন তিনি।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ