1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

গুজব ও বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩

বিএনপিসহ আন্দোলনরত সব জোটভুক্ত দলের নেতারা গত বছর থেকেই অভিযোগ করে আসছেন যে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ধ্বংস করে ফেলেছে, কেউ কেউ বলছেন দেশ ধ্বংসের খাদের কিনারায় এখন অবস্থান করছে। ধ্বংস হওয়া এই দেশকে টেনে তোলা নাকি বেশ কষ্টের হবে। জোটভুক্ত এই দলগুলো তাই রাষ্ট্র মেরামতের একটি তত্ত্ব হাজির করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখে প্রতিদিনই কারো না কারো দেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়া, শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া, ধ্বংসের বা খাদের কিনারায় পৌঁছে যাওয়ার কথা বক্তৃতা, বিবৃতি এবং টিভির টক শোতেও শোনা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এর আরো বেশি খবরাখবর ভেসে বেড়াচ্ছে। বিদেশ থেকে অনেকেই অনলাইনে প্রতিদিন দেশের ভয়ানক পরিস্থিতির কথা প্রচার করছেন। নানা ‘তথ্য’ যুক্ত করে বলাও হচ্ছে যে দেশের সব কিছুই শেষ হয়ে গেছে। ব্যাংকে টাকা নেই, ডলার নেই—এ কথা তো গত তিন-চার মাস থেকে অবিরত বলা হচ্ছে। দেশ থেকে টাকা প্রতিদিন পাচার হচ্ছে—এমন কথা বিদেশে বসেও অনেকে দিব্যি বলে যাচ্ছেন। নাম ও নেতাসর্বস্ব দলের অপরিচিত, কম পরিচিত নেতারাও এখন প্রতিদিন বক্তৃতা কিংবা টিভির টক শোতে দেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা বলে যাচ্ছেন। ‘দেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার’, ‘খাদের কিনারায় চলে যাওয়ার’ কথা এখন একটি নিত্যদিনের প্রচার-প্রচারণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এসব কথা যাঁরা প্রতিদিন উচ্চারণ করছেন, তাঁরা প্রমাণ হাজির করে দেশ ধ্বংসের কোনো নমুনা দেখাচ্ছেন না। টাকাপাচার, অর্থপাচার, লুটপাট ইত্যাদি নিয়েও তাঁদের বক্তব্য সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণবিহীন। এককথায় গত্বাঁধা। অনেকটাই অভ্যস্ত বা গা-সওয়া বিষয় হয়ে পড়েছে।

এরই মধ্যে দেশ শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হয়ে যায়নি কিংবা পাকিস্তানের মতো ভয়ানক কোনো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে পড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে না, বরং আন্তর্জাতিক নানা সংস্থা এখনো বলছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ বছর ৫.২ শতাংশ হতে পারে, আগামী অর্থবছরে তা ৬.২ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু আমাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সব নেতাই এক সুরে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে যে কোরাস মাসের পর মাস গেয়ে যাচ্ছেন, সেটি এখন শোনার আগ্রহ বোধ হয় অনেকেই হারিয়ে ফেলেছেন।

সাধারণ মানুষ গণমাধ্যমে নেতাদের মুখের কথা শোনে। এতে কেউ কেউ সাময়িক বিভ্রান্ত হয়। কিন্তু যেভাবে মাসের পর মাস নেতারা বলে আসছেন, তাতে সাধারণ মানুষের কাছে এখন এসব কথাবার্তা তেমন কোনো অর্থ বহন করে বলে মনে হয় না। যদি করত, তাহলে মানুষ অনেক আগেই দেশ বাঁচাতে শ্রীলঙ্কার মতো রাস্তায় নেমে পড়ত। রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানানোর কোনো প্রয়োজন পড়ত না। মানুষ পেটের দায়েই সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে পড়ত। কিন্তু তেমন পরিস্থিতি তো কোথাও দেখা গেল না। নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিএনপি বিভাগীয় শহর এবং ঢাকায় সমাবেশ করে। এতে তাদের দলীয় এবং জোটভুক্ত দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই অংশ নেন। দীর্ঘদিন এসব নেতাকর্মী ঘরে বসা ছিলেন। তাঁরা উজ্জীবিত হয়ে সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু এতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। মানুষ এখন যার যার কর্মব্যস্ত দিন নিয়েই সময় কাটায়। রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে গিয়ে বক্তৃতা শোনার সময় দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরের কারো তেমন একটা নেই। এখানেই বুঝতে হবে দেশের রাজনীতিতে এখন যা কিছু হচ্ছে এবং দেখা যাচ্ছে, তাতে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাইরে কেউ খুব একটা অংশ নিচ্ছে না। দেশ ধ্বংস হয়ে গেলে কিংবা খাদের কিনারায় পৌঁছে গেলে মানুষ মোটেও ঘরে বসে থাকত না। কিন্তু বিরোধী দলগুলো চার-পাঁচ মাস ধরে দেশ সম্পর্কে যা দাবি করে আসছে তার প্রতি মানুষের যদি বিশ্বাস, আস্থা এবং কর্ণপাত করার মতো কিছু থাকত, তাহলে অনেক আগেই বিরোধী দলের কথিত ‘গণ-অভ্যুত্থান’ শ্রীলঙ্কার মতো এ দেশে ঘটেই যেত। কিন্তু সে রকম কিছু ঘটার মতো পরিস্থিতি দেশে এখনো তৈরি হয়নি, সেটিই প্রমাণ করে।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ মানুষও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে কমবেশি অবহিত। করোনায় দুই বছর বিশ্বের সব দেশের মতো আমরাও একটি সংকটকাল অতিক্রম করেছি। তবে অতিমারির সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়েও ভালো করেছে—এ কথাও তারা ভালো করেই জানে। বিনা পয়সায় অন্তত তিনটি টিকাই সবাই পেয়েছে। এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মার্কিন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে ভয়ানক একটি সংকট তৈরি হয়েছে। আমদানি করা দ্রব্যের দাম বেশি। ডলারের সংকট বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়গুলো সাধারণ মানুষও কমবেশি বোঝে এবং জানে। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কারো কারো কষ্ট হলেও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না এর প্রধান কারণ বৈশ্বিক। দ্বিতীয় কারণ দেশের অভ্যন্তরে অতি মুনাফালোভী নানা সিন্ডিকেট, যারা অতি মুনাফার নামে কারসাজি করছে। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি এখন মানুষের কাছে জানা বিষয়। এর জন্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ার বাস্তব যুক্তিসংগত কোনো কারণ সাধারণ মানুষ দেখে না।

মৌলিক যে বিষয়টি সবাই স্বীকার করবে তা হচ্ছে, গত এক যুগে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গ্রামে এখন আগের মতো দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি নেই। কর্মসংস্থানেরও তেমন কোনো অভাব নেই। তা ছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো বিরাট একটি অংশের অর্থ গ্রামের পরিবারগুলোর হাতে চলে যাচ্ছে। গ্রামগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন, মাঝারি ও ছোট শিল্প এবং আয়-উপার্জনের নানা উপায় এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। গত বোরো ও আমন ফসল মানুষের ঘরে খাবারেরই শুধু সংস্থান করছে না, অনেকে বেচাকেনা করেও দুই পয়সা উপার্জন করছে। এই মৌসুমে গ্রামগঞ্জে বিয়ে, আত্মীয়-স্বজনের নানা অনুষ্ঠান যথারীতি হচ্ছে। শহরেও এসবের কোনো ঘাটতি নেই। পিকনিক, পর্যটন এখন চারদিকে চোখে পড়ার মতো।

শেখ হাসিনা বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতেও নানাভাবে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংকটের কথা কেউ অস্বীকার করছে না, তবে দেশে রিজার্ভ নিয়ে যেসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা হীন উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে বলে বেশির ভাগ মানুষ মনে করছে। দেশে দুর্নীতি আছে, সুশাসনের অভাব আছে, মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, দলীয় নেতাকর্মীদের কারো কারো মধ্যে বিচারবোধের অভাবও আছে। গ্রামাঞ্চলে সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির প্রবণতাও আছে—এ ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা আমাদের দেশের জন্য মোটেও নতুন কিছু নয়। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় আমরা দু-দুটি ভয়ানক সংকট যেভাবে মোকাবেলা করে টিকে আছি, সেটি বৃহত্তর জনসাধারণ কমবেশি উপলব্ধি করতে পারছে।

দেশ ২০০৯-১৯ সাল পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে অর্থনৈতিক ঊর্ধ্বমুখিনতায় চলে এসেছে। এর ফলেই করোনা এবং বর্তমান আন্তর্জাতিক সংকটকে মোকাবেলা করে আমরা এখনো পৃথিবীর অনেক দেশ ও অঞ্চলের চেয়ে ভালো আছি। এটি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মতামতেও বের হয়ে আসছে। ফলে দেশ এমন বৈশ্বিক পরিস্থিতিতেও এগিয়ে চলছে। তবে চ্যালেঞ্জ এখনো পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রেরই পিছু ছাড়েনি। বলা হচ্ছে, এমন পরিস্থিতি আরো এক-দেড় বছর অন্তত চলতে পারে। সুতরাং আমাদের উচিত হবে সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহস জোগানো।

সামনে নির্বাচন আছে। সেই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও সবার অংশগ্রহণমূলক হয় সে ব্যাপারে যা কিছু করা দরকার, তা করা সরকার ও বিরোধী দলগুলোর দায়িত্ব। সেটি আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমেও হতে পারে। কিন্তু অযথা দেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়া কিংবা খাদের কিনারায় পৌঁছে যাওয়ার অভিযোগ করে তেমন কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না। মানুষের কর্মসংস্থানের এবং খাদ্যের ব্যবস্থা চলমান থাকলে মানুষ নৈরাজ্যকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টিতে পা বাড়াবে না। কারণ সব মানুষের মধ্যেই এখন নিজেদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভালো রাখার মানসিকতা ও বোধ বেড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর হঠকারী কোনো কর্মসূচিতে জড়িয়ে কেউ নিজেদের নিশ্চিত বর্তমান ও ভবিষ্যেক ধ্বংস করতে চায় না।

আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের এই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতেই হবে। দেশ ধ্বংসের বুলি আওড়ালেই সবাই তাতে হুড়মুড়ি খেয়ে পড়বে—এমন পরিস্থিতি কল্পনায় সৃষ্টি হবে না।

লেখক : মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী – অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত

সুবর্ণজয়ন্তীতে বিজয় হোক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের

৭ নভেম্বর: সেনানিবাসে বিশৃঙ্খলা ও মুক্তিযোদ্ধা সেনা হত্যার ষড়যন্ত্রময় অধ্যায়

মামুনুলের পারিবারিক দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হচ্ছে রাহমানিয়া মাদ্রাসা

গ্রামীণ টেলিকম : কর্মচারীদের ২৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে ছড়ানো হয় গুজব

সার্বিক নিরাপত্তায় রাজধানীর সড়কে র‍্যাবের ২৪৬ টহল টিম

ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার ১১

বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং : প্রধানমন্ত্রী

রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপ

টাকায় একমাত্র জাতির পিতার ছবি থাকবে : শেখ হাসিনা

দেশে একটা শ্রেণি রয়েছে, যারা এই উন্নয়ন দেখে না : প্রধানমন্ত্রী