1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সরকারের দূরদর্শিতায় পাল্টে যাচ্ছে বৈদেশিক সম্পর্কন্নয়নের দৃশ্যপট

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সরকার গঠন নিয়ে অনেক মহলের অনেক ধরনের জল্পনাকল্পনা ছিল। এসবের মূলে ছিল নির্বাচন-পরবর্তী নতুন সরকার আন্তর্জাতিক মহল থেকে কতটকু এবং কীভাবে স্বীকৃত হবে। প্রথমত, সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ ছিল তা হচ্ছে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা। আমরা এদিক দিয়ে বলতে পারি সরকার একশতে একশই পেয়েছে। নির্বাচন প্রভাবিত হয়েছে, বিচ্ছিন্নভবে কিছু দাবি করা হলেও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত উত্থাপিত হয়নি। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন-পরবর্তী নবগঠিত সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়টি সরকারের জন্য যতটুকু না চিন্তার কারণ ছিল, তার চেয়ে বেশি আগ্রহের বিষয় ছিল দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলোর জন্য। এ ক্ষেত্রে সরকার গঠনের দুই সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন সরকারের জন্য একের পর এক শুভেচ্ছা বার্তা এবং একত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সামনের দিনগুলোয় কাজ করতে চাওয়ার আগ্রহের মধ্য দিয়ে নতুন সরকারের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যেকোনো বাধা অপসারিত হয়ে গেল বলেই প্রমাণিত হয়।

যেকোনো দেশে সাধারণ নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হয়, তখন তা ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই যে বিষয়টি সবার আগে চলে আসে, তা হচ্ছে নির্বাচন-পরবর্তী বৈদেশিক নীতি কী হবে। বিশেষ করে সরকার পরিবর্তন হলে এবং ঘন ঘন সরকার পরবর্তন হলে বিষয়টি আরও বেশি আলোচনায় আসে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সুবিধার জায়গায় আছে তা হলো ২০০৯ সাল থেকে একই দলীয় সরকারের পরিচালনায় কূটনৈতিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জায়গায় নিজেদের একটি শক্ত ভিত প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এ সময়ের মধ্যে আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সব লক্ষ্য পূরণ করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছি। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আগের চেয়ে অনেক আস্থার সম্পর্কে উপনীত হতে পেরেছি, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যেকোনো দেশের উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয় যখন প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পপর্কে চির ধরে বা অবনতি হতে থাকে। এর বাইরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগের জায়গা হচ্ছে দুটি। এক. আমাদের জনশক্তি রপ্তানি আর দুই. আমাদের পণ্য রপ্তানি। গত দুই যুগের মধ্যে আমাদের রপ্তানি আয় বর্তমানে যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতির একটি অর্জন হিসেবে দেখা যায়। একটি সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা যেটি হয়ে দাঁড়ায়, তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আস্থাহীনতার বিষয়টি। গত দুই যুগের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় যেখানে ছিল ৫৭৫ কোটি ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারে। (সূত্র : প্রথম আলো, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩)। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে আমাদের রপ্তানি আয় ১০ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বর্তমান অর্থবছরের জন্য রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা সাড়ে ৭ হাজার কোটি ডলারের বেশি। এসবই একটি সরকারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নির্দেশ করে। এর বাইরে যখন বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের সরকারের ভাবমূর্তি, নিষেধাজ্ঞা, ইমেজ সংকট ইত্যাকার বিষয় সামনে নিয়ে আসা হয়, প্রকারান্তরে এগুলোকে রাজনৈতিক ইস্যু ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।

বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার ধারাবাহিকতায় প্রতি মুহূর্তে আমাদের রপ্তানির বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমরা চীনের শীর্ষস্থানটি নিজেদের করে নিতে পেরেছি। বৈশ্বিক পর্যায়ে বাজার অর্থনীতি যেভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে, এ জায়গা থেকে কোনো দেশের সরকার চাইলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয় বা সরকারের নীতি নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার সুযোগ থাকে না। নির্বাচন নিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে সে দেশের ক্রেতাদের প্রভাবিত করে বাংলাদেশের শ্রমিকদের দাবি উস্কে দিয়ে এক ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা লক্ষ করেছি। এ জায়গাটিতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা রাজনীতির চোরাফাঁদ থেকে নিজেদের মুক্ত করে চলেছেন। সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি এবং অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা যেমন ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের এবং ভোক্তাদের কর প্রদোনে পরিচালিত উন্নত রাষ্ট্রও একপর্যায়ে তাদের প্রচ্ছন্ন প্রভাব সৃষ্টির জায়গা থেকে সরে আসতে শুরু করেছে। আর তাই আমরা দেখছি যে সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জায়গাটি এখন রাজনীতির ঠুনকো জায়গা থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ স্বার্থের অনুকূলে চলে এসেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমাদের বৈদেশিক নীতি অনেকটা লবিস্টনির্ভর। আর তাই সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আমরা আমাদের রাজনীতি, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির মতো জায়গাগুলোয় কিছু পশ্চিমা দেশকে বাংলাদেশের বিরোধী কিছু দলের ভাষায় কথা বলতে শুনেছি। নিষেধাজ্ঞার মতো কিছু বিষয় সরকারকে চাপে ফেলতে পারে বা পশ্চিমাদের চাওয়া মেনে নিতে বাধ্য করতে পারে, এ ধরনের বিষয় তখনই ঘটে যখন সরকারের দিক থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক জায়গাগুলোয় কোনো সমস্যা সৃষ্টি করা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার অবস্থান থেকে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে দৃঢ়তার দিকটি ছিল সাংবিধানিক বিধিবিধানের আওতায় থেকে সরকার পরিচালনা এবং নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকটি নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বিবেচনায় আসে, তা হচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে খোদ দেশের মানুষের দিক থেকেও কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহের উদ্রেক হয়নি। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের নিজ থেকে একে নিয়ে নতুন করে কোনো ধরনের মন্তব্য করা বা সরকারের অবস্থান নিয়ে নিজেদের মতো করে কোনো অবস্থান ব্যক্ত করার অর্থ বাংলাদেশের জনগণের কাছে পশ্চিমাদের বিষয়ে এক নেতিবাচক বার্তা যাবে। সেদিক দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এ দেশের কিছু দলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা সবচেয়ে বড় যে ধাক্কাটি খেয়েছে তা হচ্ছে দিনশেষে এ দলগুলোর পক্ষে কোনো ধরনের জনমত গড়ে ওঠেনি। এই বাস্তবতায় ভারত, চীন ও রাশিয়া আগে থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন তথা অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নিয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করার যে নীতিতে ছিল তা-ই যথার্থ বলে পরিগণিত হয়েছে। আর সেজন্যই উল্লিখিত দেশগুলোর জন্য নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে কোনো ধরনের বিলম্ব ঘটেনি। ধোঁয়াশা কেটেছে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমাবিশ্ব তথা ইইউ, কমনওয়েলথ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অবস্থান নিয়েও।

দেরিতে হলেও পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে, সেই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কমনওয়েলথ, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে নতুন সরকারের প্রতি শুভেচ্ছা এবং একত্রে কাজ করার আশাবাদ জানিয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে তাদের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা তাদের নিজেদের কারণেই ঘটেছে এবং এর মধ্য দিয়ে তারা সরকারকে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, দিনশেষে সেগুলোও ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে। সেই অর্থে ভাবমূর্তির সংকটের বিষয় বলে যদি কিছু থাকে তবে তা ঘটেছে তাদের ক্ষেত্রে, কোনোভাবেই বাংলাদেশ সরকারের জন্য এমন কিছু ঘটেনি। সরকারকে কেবল পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন বা বজায় রাখার চেয়ে অনেক বেশি ভাবতে হয়েছে আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার মধ্য দিয়ে যে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে তা হলো, প্রতিটি দেশই তার নিজেদের জাতীয় স্বার্থের আলোকে তাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে। পশ্চিমা সরকার এ ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ একচেটিয়াভাবে দেখতে গিয়ে তাদের দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ তথা জনগণের দিকটিকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় আনেনি। দিনশেষে যখন দেখা গেল আমাদের জন্য তাদের যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে তাদের নিজেদের জন্য আমাদের ওপর নির্ভরশীলতার গুরুত্ব অনেক বেশি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি তথা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এখন বহুমাত্রিক ধারায় প্রবাহিত। একদা পশ্চিমানির্ভর নীতি থেকে সরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’, এ নীতিটি এখন সরকারের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। আর তাই বাংলাদেশের সঙ্গে বিগত বছরগুলোয় ধীরে ধীরে উন্নত হওয়া রাশিয়া ও চীনের সম্পর্কে চির ধরাতে নানা ধরনের কৌশলে হুমকিধমকি দিয়ে আসছিল পশ্চিমা দেশগুলো। চীনের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ প্রবেশ ছাড়াও বাংলাদেশের এ পর্যন্ত গড়ে ওঠা বড় ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনের পক্ষ থেকে যে ধরনের কারিগরি এবং আর্থিক সহায়তা পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে প্রাপ্তির পরিমাণ কোনো তুলনা চলে না। এর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ আর্থিকভবে যতটুকু সক্ষম হয়েছে এর পুরোটাই নিজেদের কূটনৈতিক সামর্থ্যে অর্জন করেছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি ঢেলে সাজিয়ে কেবল পশ্চিমানির্ভর না হয়ে নিজস্ব একটা অবস্থান সৃষ্টি করার গুরুত্ব বাংলাদেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ক্রমেই আরও সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আমাদের বর্তমান সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পোক্ত। দ্বিপক্ষীয় সমস্যা এখনও যা রয়েছে তা আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানযোগ্য। বাংলাদেশের এ ভারসাম্যপূর্ণ নীতিই আমাদের এক অনন্য অবস্থানে নিয়ে গেছে, যা সামনের দিনগুলোয় বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক সামর্থ্য আরও সক্ষমতার দিকে নিয়ে যাবে।

লেখক: ড. ফরিদুল আলম – কূটনীতি-বিশ্লেষক, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ