1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

লবিস্ট নিয়োগের রাজনীতি

সাইফুর রহমান তপন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

গত ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের র‍্যাব এবং তার বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়। চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে; একই অভিযোগে ইতোমধ্যে সদ্যসাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের মার্কিন ভিসা বাতিল হয়েছে। তিনি চেষ্টা করেও যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারেননি। একই ধরনের গুজব তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সম্পর্কেও ছড়ানো হয়। সংশ্নিষ্ট ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে খুব দ্রুতই জানানো হয়, জেনারেল আজিজ বা প্রতিমন্ত্রী পলকের সঙ্গে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারপরও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও ট্রেজারি বিভাগ আরও বহু বাংলাদেশি কর্মকর্তার নাম তালিকাভুক্ত করেছে, যাদের ওপর ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। অবশ্য ১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান এবং বৈদেশিক কার্যক্রমবিষয়ক হাউস কমিটির সভাপতি গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস যখন ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই, তখন এসব গুজবে একটু ভাটা পড়ে।

গুজবের রাশে টান পড়লেও সরকার কিন্তু বসে থাকেনি। বাংলাদেশ প্রশ্নে বাইডেন প্রশাসনের এমন তৎপর হয়ে ওঠার পেছনে কারা আছে তার খোঁজ-খবর চালায় তারা। তারই ফল হিসেবে বেরিয়ে আসে বিএনপি ও তার প্রধান রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর লবিস্ট নিয়োগের কথা। সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করা হয়, যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধসহ আরও কিছু ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে ৮টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে এবং গত ১০ বছরে এ জন্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিএনপি নেতারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও এটা বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এখন আর কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এগুলো এখন ‘আন্তর্জাতিক’ ইস্যু। অতএব আন্তর্জাতিক মহলকে এসব বিষয়ে ‘অবহিত’ করা এবং তাদের ‘এনগেজ’ করার চেষ্টার মধ্যে কোনো দোষ নেই। সাংবাদিকদের খোঁচাখুঁচিতে সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো মুখ ফসকে বলেই ফেলেন, ‘বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য, মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য।’

বিএনপি নেতারা এখানেই থেমে থাকেননি। তারা পাল্টা অভিযোগ করেন, সরকার বরং ‘জনগণের করের টাকায়’ তার ‘অপকর্ম’ আড়াল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। সরকার অবশ্য বলছে, তারা বিএনপি-জামায়াতের ‘অপপ্রচার’ ও ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ধ্বংসের’ চেষ্টার মুখে ‘সঠিক’ বিষয়টি তুলে ধরার জন্য মার্কিন একটি পিআর ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছ

উভয় পক্ষের এ কথা চালাচালি এখনও চলছে। আরও কিছুদিন তা চলবে বলে মনে হয়। কারণ বিএনপি নেতারা মনে করছেন, বহুদিন পর তারা মার্কিন প্রশাসনকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে ‘এনগেজ’ করতে পেরেছেন। গ্রেগরি মিকস যে বলেছেন, তিনি এ বছরই বাংলাদেশে আসবেন, সরেজমিন এখানকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য তাকে তারা ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তারা আশার জাল বুনছেন, এবার যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটি ‘অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন করিয়ে ছাড়বে। বিএনপি নেতাদের এ আশা কতটুকু পূরণ হবে, তা ভবিষ্যৎই বলবে। তবে এটা স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাইরের কোনো শক্তিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিতে আমাদের প্রধান দলগুলোর কারোরই দ্বিধা নেই। তাদের এ প্রয়াসকে খুব সহজেই দলগুলোর জনবিচ্ছিন্নতার প্রকাশ হিসেবে দেখা যায়। কেউ কেউ হয়তো আরেকটু বেড়ে এটাকে দলগুলোর রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বও বলতে পারেন। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা, তা হলো এমন প্রয়াস খাল কেটে কুমির আনার সমতুল্য।

যুক্তরাষ্ট্র যার বন্ধু, তার আর শত্রুর দরকার নেই- কথাটা এমনিতেই চালু হয়নি। ইরাকের যেসব রাজনৈতিক শক্তি সাদ্দাম হোসেনের ‘স্বৈরশাসন’কে উৎখাত করতে সেখানে মার্কিন রাষ্ট্রপ্রতি জর্জ বুশ জুনিয়রকে স্বাগত জানিয়েছিল, তারা এখন হায় হায় করছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের গণতন্ত্র তো দূরস্থান, তাদের দিকটাও দেখেনি; নিজের স্বার্থটা বুঝে নিয়ে ফুলের মতো দেশটাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে পাততাড়ি গুটিয়েছে। সিরিয়ার বাশার আল আসাদবিরোধী নেতারাও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বের মাজেজা বুঝতে পারছেন। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিল গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেই। শেষ পর্যন্ত তালেবানের হাতে দেশটাকে তুলে দিয়ে এক প্রকার পালিয়ে গেছে। বিশ্বে একটা দেশও দেখানো যাবে না যেখানে যুক্তরাষ্ট্র তার পছন্দের সরকার বসিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকামীরা যুক্তি দিচ্ছেন, তারা এত বছর ধরে চিৎকার করেও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করাতে পারেননি, যা ‌ র‍্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর থেকে ‘বন্ধ’ রয়েছে। আমাদের সুশীল সমাজের নেতৃস্থানীয় কোনো কোনো ব্যক্তিও একই সুরে কথা বলছেন। তাদের এমন বিশ্নেষণ ও সিদ্ধান্ত সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। কারণ তাদের এটুকু বোধ নেই যে, আমার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের লড়াই আমাকেই করতে হবে; কস্মিনকালেও তা অন্যেরা করে দেবে না। যে কোনো রাষ্ট্রে তা ধনতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক যা-ই হোক; শাসকের স্বাভাবিক প্রবণতা হলো, সুযোগ পেলেই জবরদস্তির মাধ্যমে তার সিদ্ধান্তগুলো জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। যে দেশের জনগণ রাষ্ট্রের এ প্রবণতা সম্পর্কে যতটুকু সচেতন এবং নিজেদের গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার নিয়ে যতটুকু সোচ্চার; সে দেশের সরকার ততটুকু গণতান্ত্রিক হয়। টেকসই গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এভাবেই গড়ে ওঠে।
তাই গণতন্ত্রপ্রিয় রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর দায়িত্ব হলো জনগণকে সে লক্ষ্যে সংগঠিত করা। তা না করে ক্ষমতাপ্রত্যাশী যে রাজনৈতিক দল শর্টকাট পন্থায় বিশ্বের স্বঘোষিত মোড়লদের সহায়তায় কার্যসিদ্ধ করতে চায়, তারা আর যাই হোক দেশের জন্য কাজ করছে না। তারা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গের আয়োজনে লিপ্ত – এমনটা বললে খুব ভুল বলা হবে না।

লেখক : সাইফুর রহমান তপন, সাবেক ছাত্রনেতা।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ