1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পশ্চিমা বিশ্বের উস্কানি ও ভ্রান্ত নীতির ‘বলীর পাঁঠা’ ইউক্রেন!  

অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

ইউক্রেন সংকট ঘিরে রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে যে শত্রুতা তৈরি হয়েছে; সেটি বলা যায় পুরোনো সংকটের নতুন রূপ। ইউক্রেন সংকট বোঝার জন্য দেশটির ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং এর আগের ইতিহাস দেখা প্রয়োজন। আমরা জানি, ইউক্রেন কেবল রাশিয়ার প্রতিবেশীই নয়, বরং দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নেরও সদস্য ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতার পর ইউক্রেন স্বাভাবিকভাবেই সিআইএস (কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটস)-এর সদস্য। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার প্রতিবেশী হওয়ায় ইউক্রেনের অবস্থান ও নিরাপত্তার সঙ্গে রাশিয়ার কৌশলগত স্বার্থ জড়িত। বস্তুত আমরা দেখছি, রাশিয়াকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার অংশ হিসেবেই ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব এক ধরনের খেলা শুরু করেছে।

বলাবাহুল্য, ইউক্রেন প্রসঙ্গে রাশিয়া ও পশ্চিমের শক্তির মাঝে চলমান বৈরিতার কেন্দ্রে রয়েছে নিরাপত্তা জোট ন্যাটো। রাশিয়া স্বাভাবিকভাবেই চাইছে, তাদের প্রতিবেশী ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম শরিক ইউক্রেন কখনোই ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের ওপর চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে রাশিয়া সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। রাশিয়া ন্যাটোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে পূর্ব ইউরোপের সব ধরনের সামরিক সম্প্র্রসারণ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে। রাশিয়ার দাবি, ন্যাটো পুরো অঞ্চলকে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। পশ্চিমা বিশ্বের যুক্তি, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রনীতিতে রাশিয়া নাক গলাতে পারে না। তারা যদিও ন্যাটোর ‘খোলা দরজা নীতি’র কথা বলছে; অর্থাৎ যে কোনো ইউরোপীয় রাষ্ট্র ন্যাটোর সদস্যপদ চাইতে পারে কিন্তু তার পেছনের উদ্দেশ্য আসলে রাশিয়াকে বেকায়দায় ফেলা। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইউরোপজুড়ে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৯৪৯ সালে যে ন্যাটো গঠিত হয়; সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পরও সংস্থাটি তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। এ সময়ে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই শক্তিশালী হয়। আমরা দেখেছি, ন্যাটো পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে মনোযোগ দেয়। যেগুলোর অনেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য ছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন-পরবর্তী রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের নেতৃত্বের দুর্বলতায় ন্যাটো শক্তিশালী হয়। পরবর্তীকালে যখন ভদ্মাদিমির পুতিন রাশিয়ার ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেননি। রাশিয়ার ‘নিয়ার অ্যাবরোড’ নীতি তথা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্রগুলোর সুরক্ষা নীতির কারণে ইউক্রেনে অন্যদের হস্তক্ষেপ কিংবা তাদের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার বিষয়টি রাশিয়া ভালোভাবে নিচ্ছে না। বলাবাহুল্য, সেটি রাশিয়ার নিরাপত্তার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী হিসেবে ইউক্রেনে পশ্চিমাদের আধিপত্য রাশিয়ার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। তা ছাড়া ইউক্রেনের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ ভাষার দিক থেকে রাশিয়ান।

এ বিষয়গুলোর দিকে তাকালে ইউক্রেন সংকট সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করছেন কিংবা তিনি রাশিয়ান সৈন্যদের ইউক্রেন সীমান্তে সমাবেশ ঘটাচ্ছেন। এসবও কিন্তু যতটা না যুদ্ধের মহড়া, তার চেয়েও বেশি রাশিয়ার কৌশল। যেখানে পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য পশ্চিমা বিশ্ব প্রচেষ্টা চালাচ্ছে; রাশিয়াকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে; সেখানে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে রাশিয়া চুপ থাকবে- এটা চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র। রাশিয়া অবশ্য ইউক্রেনের প্রতিবেশী বেলারুশের ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর মাধ্যমে ইউক্রেন আক্রমণের যে কথা চাউর হয়, সেটি নাকচ হয় বটে। বস্তুত রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশের ‘টার্গেট’ যতটা না ইউক্রেন, তার চেয়ে বেশি পশ্চিমাদের দেখানোর একটি মহড়া মাত্র।

অতি সম্প্রতি ইউক্রেনে আরেকটি নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। সেখানে পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়ে সেনা পাঠিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন। রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে তারা স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক শেয়ারবাজারেও সূচক পড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই ইউক্রেন সীমান্তে রুশ প্রেসিডেন্টের আরও সেনা পাঠানোর নির্দেশ ও পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ায় যুক্তরাজ্য ও তার বেশ কয়েকটি পশ্চিমা মিত্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। বলাবাহুল্য, সে ক্ষেত্রে রাশিয়াও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্ববাজারে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিতে রাশ টানতে পারে। মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক হলো রাশিয়া।


পশ্চিমা শক্তিগুলো মনে করছে, বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের অঞ্চলগুলোকে ভদ্মাদিমির পুতিনের স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে রুশ সৈন্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে প্রবেশের পথ সুগম হয়েছে। এমনিতেই দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের স্বঘোষিত দুটি প্রজাতন্ত্র রাশিয়া-সমর্থিত বিদ্রোহীদের আবাসস্থল, যারা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে আসছে। বস্তুত এটিও রাশিয়ার এক ধরনের কৌশল। এর মাধ্যমে রাশিয়াকে আগ্রাসী মনে হতে পারে; কিন্তু ইউরোপের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার সামনে আর বিকল্প কী? আগেই বলেছি, রাশিয়ার নিরাপত্তার স্বার্থেই দেশটি সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। বস্তুত এবারের সংকট ১৯৬২ সালে ‘কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস’-এর সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার ওই ১৩ দিনের উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে; এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভালো কোনো কৌশল নয়। রাশিয়াকে উস্কে দিয়ে সব দোষ যদি দেশটির ওপর দেওয়া হয়, তাও গ্রহণযোগ্য নয়। বলাবাহুল্য, ইউক্রেন সংকটের কারণে ভদ্মাদিমির পুতিন নিজেও লাভবান হচ্ছেন। পুতিন যখন এ সময় দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সৈন্য পাঠাচ্ছেন; এর মাধ্যমে তিনি তার দেশে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিচারী মনোভাবেরও প্রকাশ। একদিকে তারা রাশিয়ার গণতন্ত্রের সমালোচনা করছে, অন্যদিকে সেখানে পুতিনকে তার পদক্ষেপের মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তুলছে।
ইউক্রেন নিজেও বিপজ্জনক নীতি গ্রহণ করছে। দেশটি তার নিজের অবস্থান বিবেচনা না করে যেভাবে পশ্চিমাদের পক্ষ নিচ্ছে এবং ন্যাটোর সদস্য হতে চাইছে, তার পরিণতি সুখকর নয়। এ অবস্থায় দেশটির কৌশলগত নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। এদিক থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। অনেকে বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট কোনো পরাশক্তির পক্ষে যাওয়ার কথা বলেন। আদতে তা ছোট রাষ্ট্রগুলোর জন্য বিপজ্জনক পরিণতি বয়ে আনে। ইউক্রেন সংকটে যুদ্ধের শঙ্কা না থাকলেও দেশটি ভেঙে যেতে পারে। পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করতে পারলেও তার বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। এর ফলে দেশটি অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে এবং এর নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে।

লেখক : ড. দেলোয়ার হোসেন – অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ডেপুটেশনে পাবলিক সার্ভিস কমিশন-পিএসসির সদস্য হিসেবে নিয়োজিত। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত

বান্দরবানে ১৩০ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল! 

জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে নকল ও নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ

জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে নকল ও নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ

ভবিষ্যতের জন্য ডলার বুকিংয়ের সুযোগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক, সার্কুলার জারি

মোবাইল কোর্টে যুক্ত হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী : বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত

সৌদিতে হজ করেছেন ১৮ লাখ হাজি

রিয়াল থেকে ইউনাইটেডে কাসেমিরো, খরচ ৬৭০ কোটি টাকা 

সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে 

প্রথমবারের মতো ছাদখোলা ট্যুরিস্ট বাসে ভ্রমণপিপাসুদের রোমাঞ্চকর যাত্রা

সাবেক বুয়েট শিক্ষার্থীকে হত্যার হুমকি দিলো ‘রাজনীতি না চাওয়া’ গোষ্ঠী