1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে দরকার নতুন গণজাগরণ

আলী হাবিব : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

জাতীয় সংসদে নয়, রাজপথে সোচ্চার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনলে যে কারো মনে হতে পারে, দেশ একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ১৪ বছর ধরে যে সরকার দেশের এত উন্নয়ন করল, দেশটিকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে এলো, সেই সরকারের যেন কোনো অর্জন নেই। রাজপথে আন্দোলন গোছাতে ব্যস্ত এসব দলের নেতারা সুযোগ পেলেই বলছেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। অথচ ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বিচারে ২০২২ সালে বিশ্বে গণতন্ত্রের দশায় খুব বেশি পরিবর্তন না এলেও বাংলাদেশের অবস্থান এগিয়েছে দুই ধাপ। পাঁচটি মানদণ্ডে একটি দেশের গণতন্ত্র পরিস্থিতি বিচার করে ইআইইউ গত শুক্রবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে ২০২২ সালে ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে ৭৩ নম্বরে। ২০২১ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৭টি দেশের মধ্যে ৭৫ নম্বরে।

জাতীয় নির্বাচনের এক বছর আগে বিভিন্ন দাবিতে গত অক্টোবর থেকে দেশের বিভাগীয় সাংগঠনিক ইউনিটগুলোতে সমাবেশের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ থেকে ১০ দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এসব দাবি সামনে রেখে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে ও ঢাকায় চারটি কর্মসূচি পালন করেছে তারা। ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ ২৭ দফা ঘোষণা করেছে। এখন তারা সমমনা জোটের সঙ্গে মিলে ‘ন্যূনতম দফার’ আন্দোলনে যেতে চায়।

নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। এখানেও আপত্তি বিএনপির। দলটি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার প্রস্তাব করেছে। ‘যে দলের হোক, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান’—এই কথা বলে বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন করেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি কি তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারেন? তিনি কি আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রীর কথার বাইরে একটা কাজ করতে পারেন? তিনি কি নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেন? তিনি কি একটা আইন পরিবর্তন করতে পারেন? পারেন না।’ জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির আসনটাকে খুব সম্মান করেন তাঁরা। আসুন, সেই সম্মানের উদাহরণ দেখি আমরা।

২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী স্বাধীনভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নিলে বিএনপি তাঁর ওপর আস্থা হারায়। ২০০১ সালের ১৯ জুন বিএনপি সংসদীয় দলের সভা শুরু হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরদিন বিএনপির সংসদীয় দলের সভা শেষে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে সর্বসম্মতিক্রমে আহবান জানানো হয়। তৎকালীন চিফ হুইপ খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে লেখা ছিল, ‘১৯ ও ২০ জুন দলের সভায় বিস্তারিত আলোচনার পরে এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে বিএনপি সংসদীয় দল মহামান্য প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ওপরে আস্থা হারিয়েছে বিধায় তাঁকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অবিলম্বে পদত্যাগের আহবান জানানো হচ্ছে।’ ২১ জুন সব খবরের কাগজে প্রধান শিরোনাম হয়, ‘রাষ্ট্রপতি আজ পদত্যাগ করবেন।’ সম্মানের আরো নমুনা দেওয়া যেতে পারে। সংসদ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া মন্তব্য করেন, ‘রাষ্ট্রপতি দলের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছেন, তা ক্ষমাহীন ব্যাপার। ভুলেরও একটা মাত্রা আছে। তিনি সে মাত্রা ছাড়িয়ে গেছেন।’ ২০০২ সালের ২৯ জুন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘যে যত বড়ই হোন না কেন, ষড়যন্ত্র করে কেউ পার পাবেন না এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের শিকড় কেটে দেওয়া হয়েছে।’ এই হচ্ছে বিএনপির সম্মানের নমুনা।

‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ’—এই বাগধারাটি আমাদের জানা আছে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীদের বিষয়ে এমন অনেক উদাহরণ আছে। একেবারে সাম্প্রতিক উদাহরণটি হচ্ছে, সংসদে সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম একটি চিঠি দেখিয়ে জানালেন, ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি বিএনপি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, এ বিষয়টি সত্য। শুধু জাপানকে নয়, তাঁরা অনেক দেশকে চিঠি দিয়েছেন। অর্থাৎ বিদেশিদের কাছে দেশ ছোট হয় হোক, সরকার যেন বিপাকে পড়ে বিদায় হয়, সেটাই তাদের লক্ষ্য।

ফেব্রুয়ারির জন্য আবার বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে সম্প্রতি। বিএনপি মহাসচিব মনে করেন, এই সরকার ‘জনগণের নয়’। তাই তারা ‘দুর্দিনে’ বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বারবার বাড়াচ্ছে।

অন্যদিকে ধাপে ধাপে একগুচ্ছ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে সময়সূচি নির্ধারণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

বিশ্বগ্রামের একটি অংশ বাংলাদেশের অর্থনীতি করোনার অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। ভুগতে হচ্ছে ভোক্তাকে। এই অবস্থায় পড়লে কী করত বিএনপি? দেশ ও মানুষের কল্যাণে কী সিদ্ধান্ত নিত তারা?

আমরা কথায় কথায় উন্নত বিশ্বের উদাহরণ দিয়ে থাকি। আসুন, দেখা যাক কী করে তারা সমন্বয় করছে। সেদিন একটি আলোচনা শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেখানে বক্তব্য দেন প্রবাসী এক ব্যাংকার, যিনি অর্থনীতির মতো গভীর বিষয় সহজ করে লিখতে পারেন। তিনি বললেন, পশ্চিমা দেশের মানুষের জীবনযাত্রা টিকে আছে মাথাপিছু ব্যক্তিগত ঋণের (হাউসহোল্ড লোন) ওপর। পশ্চিমা দেশের মাথাপিছু ব্যক্তিগত ঋণ ১৭০ শতাংশ। এটা মর্টগেজ বা বন্ধকি ঋণের বাইরে। তাঁর মতে, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ যদি এখন এমন সিদ্ধান্ত নেয় যে মাথাপিছু ব্যক্তিগত ঋণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে, তাহলে ওসব দেশের অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়বে। কিন্তু বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের মতো আরো অনেক দেশের ওপর এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোনো প্রভাব ফেলবে না।

সেদিন এক ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে একজন আইনজ্ঞ বলেছেন, ‘গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য অল্প সময়ের জন্য অনির্বাচিত সরকার থাকলে তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না।’

নির্বাচিত সরকার ও সেই সরকারের উন্নয়ন দেখে যাঁদের গায়ে জ্বালা করে, তাঁদের মুখে এমন অগণতান্ত্রিক সরকারের কথা উচ্চারিত হওয়াটা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। দেশের এই গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীদের এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে নতুন গণজাগরণ দরকার। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, বিশেষ করে তরুণসমাজকে সঙ্গে নিয়ে সেই কর্মসূচি শুরু করার সময় এসেছে।

লেখক : আলী হাবিব – সাংবাদিক ও ছড়াকার


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ