1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ফল ও সবজি রপ্তানিতে নতুন দিগন্তের সূচনা

বাণিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশে তাজা ফলমূল ও শাকসবজি রপ্তানি হয়। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত করা খাদ্যের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। পৃথিবীজুড়ে এ বাজারের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী মানসম্পন্ন খাদ্যপণ্য সরবরাহ করতে হয়। আমদানিকারক দেশগুলো কৃষিপণ্য নিতে গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (জিএপি) অনুসরণের শর্ত দিচ্ছে। ইউরোপিয়ান দেশগুলোও এই শর্ত দিয়েছে। কন্ট্রাক্ট ফার্ম বা চুক্তিবদ্ধ কৃষকের কাছ থেকে ফল ও সবজি সংগ্রহ করে যথাযথভাবে মোড়কীকরণের পর তা বিদেশে পাঠানোর জন্য দরকার আধুনিক প্যাকিং হাউস ও ল্যাবরেটরি। সেই লক্ষ্যে ২০১৭ সালে শ্যামপুরের সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউস চালু করা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১২-২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ১৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ ফাইটোস্যানিটারি সামর্থ্য শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সালে সবজি ও ফলমূল রপ্তানির পথ সুগম এবং কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে পুরান ঢাকার শ্যামপুর বিসিক শিল্পনগরীতে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউস নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ মে ইউরোপে আম রপ্তানির জন্য এটি আংশিকভাবে চালু হয়। যে প্যাকিং হাউসের মাধ্যমে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সারাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কন্ট্রাক্ট ফার্ম বা চুক্তিবদ্ধ কৃষকের কাছ থেকে ফল ও সবজি সংগ্রহ করে যথাযথভাবে মোড়কীকরণ করে তা বিদেশে পাঠায়। তবে ল্যাবের জন্য প্রায় ৬০ কোটি টাকার মেশিনারিজ আনা হলেও তিন বছর ধরে প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবলের অভাবে এটি চালু করা যাচ্ছে না। যার কারণে অনেকটাই সনাতন পদ্ধতিতে চলে এই প্যাকিং হাউসের কার্যক্রম। এখনো চোখে দেখে সনাতন পদ্ধতিতে পণ্যের মান যাচাই করে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। ফলে বিদেশের মাটিতে কৃষি পণ্যের দুর্নামও হয়েছে। মাঝে মাধ্যেই নিষিদ্ধ হয় নানা পণ্য, ফেরতও পাঠানেরা হয়। এমনকি অনেক সময় নিষেধাজ্ঞার কবলেও পড়ে। এ ছাড়াও ইউরোপসহ অনেক দেশেই কৃষিপণ্য রপ্তানির পর সবজি বা ফলমূলে পোকামাকড় ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়ায় তা ফেরত কিংবা সে দেশেই ডাম্পিং হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় ল্যাবটি আধুনিকায়ন করতে ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আরেকটি প্রকল্প শুরু করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্যামপুর সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসকে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবে পরিণত করতেই এই প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ পেয়েছেন ড. জগত চাঁদ মালাকার।

কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে প্রতিটি কোম্পানিকে খাদ্য নিরাপত্তা, প্লান্ট কোয়ারেন্টিন ও প্লান্ট প্রটেকশনের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিস্তারিত নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হয়। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সবজি ও ফলমূলের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব না থাকায় রপ্তানিতে বারবার হোঁচট খেতে হচ্ছে। ফলে পুরনো সেই ভুল মাথায় নিয়ে এবার নতুন আঙ্গিকে শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের কার্যক্রম। এ অবস্থায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ফল ও সবজির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

দেশের ফল ও সবজি চাষিদের নতুন সেই স্বপ্নযাত্রা কেমন চলছে তা দেখতে রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে বাঁ দিকে যেতেই পরিবর্তন চোখে পড়ে। এক সময়ের সরু, ঘিঞ্জি ও ময়লার ভাগাড়যুক্ত সড়ক আর নেই। প্রশস্ত সড়ক বেয়ে ৪-৫ মিনিট যেতেই কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসে চোখে পড়ল এক সময়ের ভঙ্কর ভবনের পরিবর্তনের ছাপ। পুরো ভবনে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। উন্নত টাইলস বসানো হয়েছে হাউসের চারপাশে। নতুন করে নির্মাণ হয়েছে সীমানা প্রাচীর। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে সুসজ্জিত অফিসকক্ষ। সবকিছুতে বেশ যত্নের ছাপ। প্যাকিং হাউসের তিনতলা ভবনের নিচতলায় সবজি ও ফলমূলের মান যাচাই-বাছাই, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ধোয়া ও শুকানো এবং মোড়কজাত করার জন্য আলাদা আলাদা অত্যাধুনিক কক্ষ নির্মাণ হয়েছে। দোতলায় একই ব্যবস্থা আছে। আছে ২০০০ কেজি ধারণক্ষমতার কার্গো লিফট। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সবজি ও ফলমূল সংরক্ষণের জন্য নিচতলা ও দোতলায় কয়েকটি কুলিং কক্ষ রয়েছে। ভবনের তৃতীয় তলায় কর্মকর্তাদের জন্য কার্যালয়, রপ্তানিকারকদের প্রশিক্ষণের জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বিশাল আধুনিক প্রশিক্ষণকক্ষ ও একটি সভাকক্ষ আছে। এ ছাড়া নির্মাণ হচ্ছে ১০টি ল্যাব। সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য রয়েছে জেনারেটর, রয়েছে নিজস্ব পাওয়ার স্টেশনও। ভবনের বেসমেন্টে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চোখে পড়ে ল্যান্ডিং স্পেস ও কুলিং চেম্বার। অতিথিদের বিশ্রামের জন্য তৃতীয় তলায় নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত কক্ষ। ইউরোপের যে কোনো দেশে সবজি ও ফলমূল রপ্তানির জন্য নিয়মিতই সালমোনেলাসহ যে কোনো ধরনের দূষণ, কীটনাশকের রেসিডিউ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ রয়েছে কিনা, বিভিন্ন ধরনের এমআরএল পরীক্ষা করা যাবে এখানে। আগের কেনা যন্ত্রের পাশাপাশি ল্যাবরেটরিতে আবারও মাইকোলজি, ব্যাকটেরিওলজি, ভাইরোলজি, নেমাটোলজি, মাইক্রোবায়াল পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে এ জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক ড. জগত চাঁদ মালাকার। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের কাজ শেষ হলে আশা করা হচ্ছে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। সেন্ট্রাল প্যাক হাউসের ল্যাব টেস্টের ওপর বিদেশের বাজার জয় করা নির্ভর করছে। ফলে সব কাজ অত্যন্ত যত্ন ও সচ্ছতার সঙ্গে করা হচ্ছে। কোনো রকম ক্রটি রাখা হচ্ছে না। ১৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শেষ হয়েছে। তিনি জানান, নতুন প্রকল্পের মূল্যায়নের জন্য কৃষিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তারা কাজে মানে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

জনবল সংকট : প্যাকিং হাউসটির ১৩টি পদে জনবল মঞ্জুর করা হলেও বর্তমানে আছেন মাত্র ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এত অল্প জনবল দিয়েই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কাজ। জনস্বল্পতার কারণে বর্তমানে নিজেদের শ্রমিকদের দিয়েই পণ্য ধোয়া, শুকানো কিংবা প্যাকিংয়ের কাজ করাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিটি চালান যাচাই-বাছাই করে ফাইটোস্যানিটারি সনদ (পিসি) ইস্যু করেন। এখানে কর্মকর্তাদের জন্য নেই আলাদা থাকার ব্যবস্থা। আবার আশপাশেও নেই থাকার ভালো ব্যবস্থা। ফলে এখানে চাকরি করতে তারা আগ্রহ দেখান না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু আধুনিক ল্যাব ও প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না, এমন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যারা প্যাকিং হাউসে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারবেন। আর তার জন্য রাখতে হবে নানা সুবিধা। প্রয়োজনে আলাদা কর্তৃপক্ষ করারও দাবি উঠেছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমদানিকারক দেশগুলো কৃষিপণ্য নিতে গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (জিএপি) অনুসরণ করে। সেই লক্ষ্যে আমরা কন্ট্রাক্ট ফার্ম বা চুক্তিবদ্ধ কৃষকের কাছ থেকে ফল ও সবজি সংগ্রহ করে যথাযথভাবে মোড়কীকরণের পর তা বিদেশে পাঠানোর জন্য দরকার আধুনিক প্যাকিং হাউস ও ল্যাবরেটরি। প্যাকিং হাউসটি পুরোদমে চালু হলে রপ্তানির বাজারে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে।

সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউস আধুনিকায়ন হলে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে বাংলাদেশের ফলমূল ও শাকসবজি রপ্তানি বহুগুণ বাড়বে এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কৃষি বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ