1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মসলিনের প্রত্যাবর্তন!

প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২

দুই শ বছর আগেও ঢাকাই মসলিনের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। অভিজাত শ্রেণির লোকজনকে প্রায়ই দেখা যেত এই কাপড়ের পোশাকে। কেন হঠাৎ করে হারিয়ে গেল এত জৌলুসময় একটি ধারা?

এর পেছনে অনেক কিংবদন্তি আছে। তবে মসলিন হারিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ এই কাপড় তৈরির কারিগরের সংকট। এ শিল্প হারিয়ে যাওয়ার পর কোথাও এটি বানাবার কারিগর অবশিষ্ট নেই।

অল্প কিছুদিন হলো শেখ হাসিনা সরকার মসলিন কাপড়কে পুনরুজ্জীবিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এ কাজে পদক্ষেপ নিয়েছে তাঁত উন্নয়ন বোর্ড।

মসলিন কাপড়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটির সুতা তৈরিতে ব্যবহৃত বিশেষ এক ধরনের কার্পাস তুলা। এই তুলার জাতটিও হারিয়ে গেছে। মসলিন তৈরির এই বিশেষ জাতের কার্পাস ফুলের সন্ধানে অর্ধেক পৃথিবী চষে বেড়িয়েছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা। স্থানীয়ভাবে এটি ‘ফুটি কার্পাস’ নামে পরিচিত। এটির তুলা থেকে তৈরি সুতা দিয়েই বোনা হয় ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক আক্তার উজ জামান বলেন, ‘জৈব চাষ পদ্ধতিতে আমরা এ তুলা উৎপাদন করি। এই তুলায় প্রাকৃতিক সিল্কি আভা আছে। এই সুতা এত সূক্ষ্ম যে প্রায় দেখাই যায় না। শুভ্রতায় সম্ভবত এটি বিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল।’

ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিলুপ্ত হয়ে গেছে মসলিন। তবে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সম্প্রতিক উদ্যোগে আশার মুখ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যে কার্পাস ফুল থেকে মসলিনের সুতা পাওয়া যায়, সেই ফুটি কার্পাসের ফলন বাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উদ্ভিদবিদরা। পরীক্ষামূলকভাবে খামারে এই ফুলের চাষ হচ্ছে।

আক্তার উজ জামান বলেন, ‘এই তুলার গুণমান এতই সূক্ষ্ম যে প্রায়ই লোকেরা এটিকে সিল্কের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে।’

ইতিহাসবিদরা বলছেন, মসলিনের ব্যবসা বাংলাদেশ বা গাঙ্গেয় ব-দ্বীপকে এক সময় করে তুলেছিল বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল।

শিল্প বিপ্লবের পর ইংল্যান্ডে যে কলকারখানা গড়ে উঠেছিল, সেগুলো সূক্ষ্ম কাপড়ের বাজারকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল।

নতুন প্রজন্ম এখন সেই হারিয়ে যাওয়া শিল্প শেখার চেষ্টা করছে। এর জন্য অবশ্য শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। কারণ উদ্ভিদের অতি-সূক্ষ্ম সুতা বুনতে যথেষ্ট দক্ষ তাঁতি খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল না।

তাঁতশিল্পী সুমি বেগম বলেন, ‘আমরা খুব গর্বিত। কারণ আমরা ইতিহাসের অংশ হতে পেরেছি। আমাদের ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে পেরেছি।’

ঢাকাই মসলিনে ৮০০ থেকে ১২০০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার হয়, যা বর্তমান বাজারে অন্য যেকোনো সুতি কাপড়ের তুলনায় অনেক সূক্ষ্ম। মসলিন ফিরিয়ে আনার এই প্রকল্পের জন্য ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে জামদানি শাড়ি বোনার কারিগরদের খুঁজে বের করা হয়। কয়েক মাসের প্রশিক্ষণ শেষে মসলিন তৈরিতে দারুণ পারদর্শী হয়ে উঠেছেন তারা।

তাঁতশিল্পী মোকাদ্দেশ হোসেন বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দিনে দেড় ইঞ্চি কাপড় বুনতে পারি। শীতের সকাল হলো কাজ করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। খুব গরম বা আর্দ্রতা থাকলে কাজ করতে পারি না। আসলে পুরো বিষয়টা নির্ভর করে সুতার ক্যাপ্রিসের ওপর। এই কাপড় বুনতে একাগ্রতার প্রয়োজন। কাজও করতে হয় ধীর গতিতে। এক ইঞ্চি বা তার কম কাপড় বুনতে দুইজনের আট ঘণ্টার বিরামহীন শ্রম লাগে।’

মোকাদ্দেশ হোসেন আরও বলেন, ‘দাদার কাছে মসলিন সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছি। এখন আমি এই ঐতিহাসিক প্রকল্পের অংশ। এখন আমি গর্বের সঙ্গে দাবি করতে পারি, তাঁতি থেকে আমি একজন শিল্পী হয়েছি।’

পুনরুজ্জীবন প্রকল্পটি ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন পরিচালনা করছে।

প্রকল্পের প্রধান আইয়ুব আলী বলেন, ‘মসলিন সম্পর্কে একটি কল্পকাহিনি প্রচলিত আছে। এটি এতই সূক্ষ্ম যে একটি আংটির মধ্যে অনায়াসে তা ঢুকিয়ে রাখা যেত। দেখুন, এটা সত্যি! ভেতরে আরেক টুকরো কাপড় চেপে রাখারও জায়গা আছে!

‘এমন গল্প আছে যে রাজপরিবারের নারীরা বাড়ির ভেতরে এই (মসলিন) পোশাক পরতেন। এটি এতটাই স্বচ্ছ যে বিভ্রম তৈরি করে। পরিধানকারীর মনে হতে পারে তিনি সম্ভবত কিছুই পরেননি।’


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ