1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রযুক্তির সহায়তায় মানসম্মত শিক্ষা

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪

আবহমানকাল থেকে মানুষ তার চিরায়ত অভ্যাস থেকে বের হতে চায় না। অনেকে মনে করেন অনলাইন ব্লেন্ডেড শিক্ষা কোনো শিক্ষা নয়, বিশেষ করে অনলাইন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন অসম্ভব। তবে মুখস্থনির্ভর যে শিক্ষা পদ্ধতিতে আমরা অভ্যস্ত, সেটা বহু আগেই উন্নত বিশ্ব বাদ দিয়েছে। চ্যাটজিপিটির যুগে একজন শিক্ষার্থীর হাতে যদি মোবাইল থাকে, তবে সচরাচর আমরা পরীক্ষায় যে ধরনের প্রশ্নপত্র দিই, তা ক্লাসের শতভাগ শিক্ষার্থী নিমিষেই সমাধান করতে পারবে এবং প্রত্যেকে ৮০ শতাংশের অধিক মার্কস পাবে। অবশ্যই ক্লাসরুম ভিত্তিক সরাসরি শিক্ষা পদ্ধতি ভালো, তবে করোনা, বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনলাইন ব্লেন্ডেড শিক্ষার বিকল্প নেই। আমাদের মূল লক্ষ্য নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখা। এক্ষেত্রে সমস্যা অনলাইন ব্লেন্ডেড শিক্ষার নয়, সমস্যা আমাদের মানসিকতার।

২০১২-১৮ সালে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে আমি বিশ্বের অনেক নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যানভাস, ব্ল্যাকবোর্ড, মুডলসহ বিভিন্ন লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এলএমএস) কার্যকারিতা অন্বেষণ করেছি। তার মধ্যে ছিল হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি আমেরিকা, আথাবাস্কা ইউনিভার্সিটি কানাডা, মোনাশ ইউনিভার্সিটি এবং ওপেন ইউনিভার্সিটিস অস্ট্রেলিয়া, ম্যাসি ইউনিভার্সিটি নিউজিল্যান্ড ও ওপেন ইউনিভার্সিটি ইংল্যান্ড। মানসম্পন্ন শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এলএমএস ছিল তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ, ঠিক কাগজ ও কলমের মতো যা ছিল কোভিড-১৯-এর অনেক আগের ঘটনা।

সার্বিকভাবে এলএমএস হলো এ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ডকুমেন্টেশন, ট্র্যাকিং, রিপোর্টিং, অটোমেশন এবং শিক্ষামূলক কোর্স বা প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের জন্য একটি সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন। এটি মানসম্পন্ন শিক্ষার একটি হাতিয়ার যা গত ২০-২৫ বছর ধরে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ক্লাসের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়। এলএমএস যে কোনো ধরনের শিক্ষাকে সমর্থন করে এবং অনলাইন শিক্ষার সঙ্গে এর বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই। উদাহরণস্বরূপ, করোনার আগে আমরা প্রচলিত শিক্ষায় বেশিরভাগই ক্লাস পরিচালনা করেছি, তারপরে করোনাকালীন সময়ে অনলাইন শিক্ষা চালু করেছি এবং পরে আবার প্রচলিত শিক্ষায় ফিরে গিয়েছি- তিনটি ক্ষেত্রেই আমরা এলএমএসকে নিরবচ্ছিন্ন পরিবর্তনের জন্য একটি কমন প্ল্যাটফর্ম হিসাবে রেখেই কাজ করেছি।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও হয়তো মুডল, ক্যানভাস, ব্লাক বোর্ডের মতো এলএমএস ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক (এইচএসপিই) পর্যায়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ ধরনের সিস্টেম ব্যবহার করা অনেকটা অসম্ভব। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত প্রেক্ষাপটে ব্লেন্ডেড, অনলাইন এবং ডিজিটাল শিক্ষায় ব্যাপক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে একদল শিক্ষার্থী নিয়ে আমরা এলএমএস জিরো নামে একটি প্রকল্প তৈরি করি- জিরো (সেটআপ এবং পুনরাবৃত্তিক) খরচ, জিরো জটিলতা, জিরো রক্ষণাবেক্ষণ। এটি এপিআই ভিত্তিক লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের একীকরণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যার কোনো হোস্টিং সার্ভিস প্রয়োজন নেই। এই প্রকল্পটি প্রচলিত, অনলাইন বা ব্লেন্ডেড শিক্ষার ক্ষেত্রে সমানভাবে কার্যকর।

এখন যদি আমরা প্রয়োজনীয় অনুমতি এবং সমর্থন পাই, তাহলে প্রকল্পটি এক বছরের মধ্যে দেশের সকল স্কুল ও কলেজের ওয়েবসাইটের সঙ্গে সংযুক্ত করা যাবে। ফলে, যে কোনো দুর্যোগে পড়াশোনা চলমান থাকবে, কোনো প্রাণহানির শঙ্কা থাকবে না।

কোভিড-১৯কে শেষ মহামারি হিসাবে বিবেচনা করা উচিত হবে না, এখন সারাদেশ তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত। উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীর ডিভাইসের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করার পরিবর্তে যা আছে, তা পুঁজি করে আমাদের যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখা উচিত। গত এক দশকে এলএমএস সারাবিশ্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে কিন্তু বাংলাদেশে তেমনটি হয়নি। আসুন, মূল কারণগুলো একটু খতিয়ে দেখি-

আমাদের শিক্ষকদের ব্লেন্ডেড, অনলাইন এবং ডিজিটাল লার্নিং বিষয়ে ইতিবাচক মানসিকতা নেই, তাই এলএমএসের সঙ্গে তারা অভ্যস্ত নয়। মহামারি প্রমাণ করেছে যে, এই ধরনের লার্নিং শিক্ষার জন্য নতুন স্বাভাবিক। প্রায়শই আমরা আমাদের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতাগুলোকে অনলাইন এবং ব্লেন্ডেড শিক্ষার ওপর চাপিয়ে দিই, যেটা একেবারে অনুচিত। প্রতিটি এলএমএস সিস্টেমের জন্য সেটআপ এবং পুনরাবৃত্তিক খরচ প্রয়োজন, উদাহরণস্বরূপ ক্যানভাস এলএমএস ব্যবহার করার জন্য প্রতিবছর ছাত্রপ্রতি ২৫ টাকা খরচ হয়। মুডল এলএমএস হোস্টিং পরিষেবা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনেক অর্থ এবং জনশক্তি প্রয়োজন হয়, যা আমরা খরচ করতে চাই না। এমনকি একটি এলএমএস সিস্টেম স্থাপন করার পরে যদি সার্ভারের সামান্য ডাউনটাইম দেখি, তবে আমরা সিস্টেমটিকে চিরতরে খারাপ হিসাবে চিহ্নিত করি, যদিও সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট সাপোর্ট স্টাফ থাকে না বললেই চলে। বেশিরভাগ উচ্চ-ফিচারসম্পন্ন এলএমএস ব্যবহার করা এত সহজ নয়, বিশেষ করে সিনিয়র এবং নন-আইটির শিক্ষকদের জন্য।

এগুলো অনেক গবেষণা দ্বারা সমর্থিত, যেখানে দেখা গেছে যে অপারেশনাল খরচ, সাপোর্ট এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, ব্যবহারের জটিলতা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এলএমএস স্থাপন এবং ব্যবহার না করার মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এলএমএস বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য দক্ষ লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন, সেখানে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এই ধরনের ব্যবস্থা বাস্তবায়নের কথা ভাবা অনেকটাই অযৌক্তিক এবং কল্পনাপ্রসূত মনে হতে পারে- তবে এলএমএস জিরো সেটাকে সম্ভব করতে পারে।

গত পনেরো বছরে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের ফলে সারাদেশে, প্রায় প্রতিটি সেক্টরের পাশাপাশি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিশাল আইসিটি অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) এখন ফাইবার অপটিক্যাল তারের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হচ্ছে, স্কুলগুলো এখন শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব দিয়ে সজ্জিত, হাজার হাজার ইন্টারেক্টিভ কনটেন্ট এবং ই-বুক ডিজাইন ও ডেভেলপ করা হয়েছে ইত্যাদি। এভাবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের দেশে সবার জন্য এলএমএস, সবার জন্য অনলাইন ব্লেন্ডেড শিক্ষা চালু করার জন্য একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। এখন সর্বস্তরের মানুষ এর গুরুত্ব অনুভব করেছে এবং আমাদের এটিকে পুঁজি করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। যদি অনলাইন ব্লেন্ডেড শিক্ষা যথাযথভাবে আমরা বুঝতে পারতাম, তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করতে হতো না, দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষার্থীরা হতাশ বোধ করত না বা তীব্র তাপপ্রবাহে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটত না।

এলএমএস জিরো প্রজেক্ট সহজ, ইনোভেটিভ, বাস্তবায়নযোগ্য, টেকসই, স্কেলেবল এবং ইম্প্যাক্টফুল। এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমঅধিকারভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার পথ প্রশস্ত করতে পারে এবং আজীবন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। একটি মজার বিষয় হলো যে, বাংলাদেশে প্রান্তিক ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪.৮ শতাংশের কাছে টিভি আছে, কিন্তু ৮.৩ শতাংশের কাছে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস রয়েছে। আইটিইউ গিগা বা টেসলা স্টারলিঙ্ক প্রকল্প পুরো ইন্টারনেট দুনিয়ায় নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন আনতে পারে। যাই হোক, ইন্টারনেট ক্রমবর্ধমানভাবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়ে উঠছে। এলএমএস জিরো বাংলাদেশের নতুন জাতীয় পাঠ্যক্রম সমর্থন করবে এবং যদি লাইব্রেরি থেকে ধার নেওয়ার ভিত্তিতেও এটি গুগল ক্রোমবুকের সঙ্গে একীভূত করা যায়, তাহলে প্রকল্পটি বিশ্বব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল শিক্ষার জন্য অন্যতম সেরা সমাধান হিসাবে পরিগণিত হতে পারে।

লেখক: ড. মো. আকতারুজ্জামান – শিক্ষাক্রম, ডিজিটাল শিক্ষা ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ