1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নির্বাচনের উৎসবকে আতঙ্কে পরিণত করে কারা?

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪

বিশ্ব রাজনীতিতে প্রতি ১০০ বছর পর পর ক্ষমতার মেরু বদল হয়। গেল সময়ে ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ পশ্চিমের কিছু দেশ নেতৃত্বের নাম ভূমিকায় ছিল। নেতৃত্বের এই সময়টায় তারা বেশ কয়েকটি অযাচিত যুদ্ধ-সংঘাত এবং সিদ্ধান্তকে বিশ্ববাসীর ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। ধারাবাহিক নিয়মে সেসব শক্তি আজ ক্ষয়িষ্ণু পর্যায়ে। নেতৃত্বের শক্তি হারিয়ে আজ তারা বর্তমান নেতৃত্বদানকারী শক্তিগুলোর সহযোগী ভূমিকায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে আজ্ঞাবহ সারথি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতির লেনদেন ডলারে রূপান্তরিত হওয়ায় উত্থিত শক্তি হিসেবে আমেরিকার আবির্ভাব ঘটে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠিত শক্তিগুলো যুদ্ধ-বিগ্রহে শক্তি ক্ষয়ে ফেলায় আমেরিকা প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বীরূপে জেগে ওঠে। যদিও এখন সেই ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে।

বিশ্বব্যাপী আঞ্চলিক শক্তিগুলোর অবিশ্বাস ও বিভেদ আমেরিকাকে আরও কিছুদিন একাধিপত্যসম্পন্ন বিশ্বব্যবস্থার সুযোগ দিত। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, এশিয়াসহ অন্যান্য উত্থিত শক্তিগুলো পারস্পরিক বিরোধ নিরসন করে অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের দিকে মনোযোগী হওয়ায় তা ভেস্তে গেছে। তাই এই উত্থিত শক্তিগুলোকে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে যেন কেউ আগের আঞ্চলিক সমস্যাগুলোকে উসকে দিয়ে সুযোগ নিতে না পারে।

এশিয়ার দেশ ভারত তার আঞ্চলিক ও সীমানা সমস্যা হটিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিয়ে বিশ্বমঞ্চে হাজির হয়েছে। ৭টি দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমানা থাকা সত্ত্বেও বরাবরই সীমানা সমস্যাকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছে। কিন্তু আগামীর পরাশক্তি হওয়ার দৌড় থেকে একে ছিটকে ফেলতে এর সীমানাসংক্রান্ত বিষয়গুলোকে যুদ্ধ এবং সংঘাতে পরিণত করতে এর বিরোধী পক্ষ কাজ করছে। কারণ যুদ্ধ-সংঘাতে ব্যস্ত করতে পারলেই এর স্বাভাবিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।

সম্প্রতি ভারতে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনে আসন সংখ্যা ৫৪৩। ভোটকেন্দ্র ১৫ লাখ। প্রায় ছয় সপ্তাহজুড়ে চলা নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯৬ কোটি ৮০ লাখ। যার মাঝে ৪৯ কোটি ৭০ লাখ পুরুষ এবং ৪৭ কোটি ১০ লাখ নারী ভোটার। অর্থাৎ বৃহৎ গণতন্ত্রযজ্ঞ চলমান। মজার দিক হলো, ভারতের মোট ভোটার সংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, ফ্রান্সের জনসংখ্যার প্রায় সমান। ভারতের নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের ৮০, মহারাষ্ট্রের ৪৮, পশ্চিমবঙ্গের ৪২, বিহারের ৪০, তামিলনাড়ুর ৩৯ আসন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রদেশগুলোরই আসন সংখ্যা বেশি।

আজকের হিসাবে ভারত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিকসহ প্রায় সব পরিসংখ্যানে ঊর্ধ্বগামী। এর জিডিপি সাড়ে তিন লাখ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছর যা যুক্তরাজ্যকে ছাপিয়ে বিশ্বের পঞ্চম বড় অর্থনীতি হয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি প্রায় সাত লাখ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছবে। যা জাপান, জার্মানিকেও ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ ভারতের ওপর শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থাকবে।

এ ধরনের অর্জন ভারতের বিপরীত মেরুতে অবস্থানরতদের জন্য হজম করা কঠিন। কারণ গণতন্ত্র, মুক্তচিন্তা, মানবাধিকারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভারত অগ্রগতি অর্জন করেছে। ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু বাংলাদেশও পাশাপাশি সময়ে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশ পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর প্রদানসহ বিস্ময়কর কর্ম সম্পাদন করেছে। রথী-মহারথীদের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণ করে বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। এসব সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণে। কারণ অবিশ্বাস, নৈরাজ্যের রাজনীতিকে হটিয়ে বাংলার জনগণকে তিনি উন্নয়নমূলক রাজনীতি উপহার দিয়েছেন।

উন্নয়ন, অর্জনের বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ-ভারত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং সারথি। কারণ উভয়েই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে জনগণের উন্নয়ন চায় এবং সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশের মাটিকে কখনই কেউ প্রতিবেশী ভারতকে আক্রান্ত করতে ব্যবহার করতে পারেনি। তা ছাড়া উভয়ের যে সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্ত্বিক বোধ তাও এক এবং অনন্য। যা অন্য কারোর সঙ্গেই মেলানো যাবে না। বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে ভারত এখন প্রায় নাম ভূমিকায় চলে এসেছে। কাজেই একে তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে আরও সহনশীল আচরণের মধ্য দিয়ে এগোতে হবে। বিশ্বব্যবস্থার এই সময়ে কেউ অপ্রতিদ্বন্দ্বী নয়। কাজেই যে কোনো কর্তৃত্ববাদী আচরণ যে কাউকেই দূরে ঠেলে দেবে।

বিশ্বমঞ্চের আরেক শক্তিধর চরিত্রের নাম চীন। অর্থনীতি, আয়তন, জনসংখ্যা সব বিচারেই সে দ্বিতীয়। ইতোমধ্যেই চীন তার বাণিজ্যিক সম্পর্কের মাধ্যমে শ্রীলংকা, নেপাল, মিয়ানমার, মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। এশিয়ার নতুন অর্থনৈতিক শক্তি বাংলাদেশের সঙ্গেও তারা সম্পর্ক জোরদারে তৎপর। কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ঐক্য রয়েছে তা হাজার বছরের। এ কারণে ভারতকেও বৃহৎ শক্তিধর প্রতিবেশী হিসেবে দায়িত্ব নিতে হবে। আয়তন, অর্থনীতিতে ছোট হলেও সব প্রতিবেশীর সঙ্গে শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। অভিন্ন স্বার্থগুলোকে দ্রুত সমাধান করে নিতে হবে।

পৃথিবীর তাবৎ ব্যবসা এবং ক্ষমতা মানুষকেন্দ্রিক। জনসংখ্যা, বাজার এবং আয়তনের বিচারে এশিয়া আগামীর কাঙ্ক্ষিত স্থান। এখানে পৃথিবীর ৬০ শতাংশ মানুষ বসবাস করে। সমতল, সাগর সবকিছুর বিবেচনায় এশিয়া একক ও অনন্য। তবে এই অঞ্চলের মানুষ যুক্তির চেয়ে আবেগ ও বিশ্বাসকে বেশি প্রাধান্য দেয়। এজন্য নির্বাচন, উৎসব এবং উপলক্ষ এলেই শঙ্কা জাগে। কারণ অতীতেও ভিনদেশি বেনিয়ারা নিজেদের স্বার্থ কায়েম করার জন্য এই অঞ্চলের অনুভূতি হানি করেছে। নির্বাচনের মতো উৎসবকে আতঙ্কে পরিণত করেছিল। এসব অভিজ্ঞতাকে বিবেচনা করে ছোটখাটো সংঘাত ও অমীমাংসিত বিষয়গুলো মিটিয়ে ইউনাইটেড এশিয়া গঠনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। এটা বাস্তবায়নে যে আগে এগিয়ে আসবে সে-ই সম্মানিত হবে।

লেখক: হায়দার মোহাম্মদ জিতু – রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব ও সাবেক ছাত্রনেতা 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ