1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আমাদের আত্মাই তো রবীন্দ্রনাথ!

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

ছোটবেলায় প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা তিনি নেননি। বাড়িতে গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্কুলের বাঁধাধরার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ছোটবেলা থেকেই ছিল তাঁর অনাগ্রহ। তাঁর জীবনস্মৃতি বইয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, যে অল্পকাল তিনি স্কুলে পড়েছিলেন সেসময় স্কুলের পাঠ ও পরিবেশ এবং স্কুলের দিনগুলো তাঁর কাছে কেমন মুখবিবরের মধ্যে প্রাত্যহিক বরাদ্দ গ্রাসপিণ্ডের মতো লাগত। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বা কলকাতার বাইরে পারিবারিক বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতেই বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ মাকে হারিয়েছিলেন তাঁর চৌদ্দ বছর বয়সে। তাঁর বাবা অনেক সময় কাটাতেন দেশের বাইরে। ফলে রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল গৃহভৃত্যদের শাসন ও সান্নিধ্যে। এই তথ্য আমাদের সবার জানা। আমরা আরো জানি তাঁর যখন এগারো বছর বয়স তখন তিনি কয়েকমাসের জন্য বাবার সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। এর মধ্যে পাঞ্জাবে হিমালয় পাহাড় ঘেরা ডালহাউসি শহরে থাকাকালীন বাবার কাছে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতেন। ওই পাহাড়ি শৈলাবাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৭৩ সালে লিখেছিলেন তাঁর প্রথম গান গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বালে। বলা হয় এটি ছিল পাঞ্জাবি একটি ভজনের অনুবাদ। ওই সময় অমৃতসরে এক মাস যখন তিনি বাবার সঙ্গে ছিলেন, তখন বাবা ও ছেলে নিয়মিত যেতেন স্বর্ণমন্দিরে।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন, সেসময় ওই মন্দিরের ভজন সঙ্গীত তাঁর ওপর বড়ধরনের প্রভাব ফেলেছিল। রবীন্দ্রনাথকে হিন্দু মনে করে যারা আকছার গালি গালাজ করেন তাদের জন্য এই তথ্য। এই মানুষটিকে আমরা আসলে চিনতে পারিনি। আসলেই না। আমাদের ধারণা তিনি এক গীতিময় কবি। যিনি মনে করতেন তাঁর আর কোনো কিছু না টিলেও গান টিকবে। গান যে টিকে গেছে তা এখন চোখ বন্ধ করেই বলা যায়। কিন্তু তাতেই সীমাবদ্ধ তিনি? আবার দেখুন যে কবি তাঁর গানের অমরত্ব নিশ্চয়তা দিচ্ছেন তিনিই লিখেছেন আজি হতে শতবর্ষ পরে/কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি কৌতুহল ভরে?

যার মানে তিনি নিশ্চিত ছিলেন শতবর্ষ পরেও তাঁর কবিতা পাঠ করবে বাঙালি। শুধু যে পাঠ করে তা নয় এখনো নানা অনুষঙ্গে জীবন প্রবাহে রবীন্দ্রনাথের কবিতা অটল অটুট। এমনকি প্রতিবাদেও তিনি থাকেন সাথে। কেন থাকবেন না? ব্রিটিশ সরকার ১৯১৫ সালে তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংরেজ শাসকের প্রবর্তিত এক বিল, যার আওতায় বিনা বিচারে যে কোন লোককে আটক রাখার বিধান পাশ করা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী প্রায় দুহাজার নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে। তিনি ইংরেজ সরকারের কাছে তাঁর প্রতিবাদপত্রে লিখেছিলেন, একদল অসহায় মানুষকে যে কঠোর শাস্তি দেয়া হয়েছে এবং যেভাবে সে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তার কঠোরতা অপরাধের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ। কোন সভ্য সরকার যে একাজ করতে পারে তার কোন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে নেই। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে ওই মর্মান্তিক গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ইংরেজ সরকারের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল। প্রতিবাদের ধরণ ছিল নীরব কিন্তু ঠিক জায়গায় গিয়ে লাগার মতো। তিনি জানতেন কিভাবে কি করতে হয় এই রবীন্দ্রনাথ আমাদের অচেনা নয়।

আমরা বঙ্গভঙ্গের সময় ও তাঁর ভূমিকা দেখেছি। জোড়াসাঁকোর কাছে যে নাখোদা মসজিদ সে মসজিদে হেঁটে গিয়ে রাখি বন্ধনের ব্যবস্থা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। হিন্দু মুসলমানের মিলন কামনায় তাঁর অবদান ছিল সে সময় অসামান্য। এসব জানার পর ও আজকাল আমাদের এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী তা মানতে নারাজ। তাদের এক কথা রবীন্দ্রনাথ মুসলিম বিরোধী। এখন যোগ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিরোধিতার গাল গল্প। যে বিশ্ববিদ্যালয় সূচনা লগ্নে তাঁকে বরণ করে নিয়েছিল সে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানী মানুষরা কি জানতেন না যে কবি তাঁদের বিরুদ্ধাচারণ করেছিলেন? আসলে আষাঢ়ে গল্পে আমাদের আগ্রহ বরাবর একটু বেশী। যোগ হয়েছে সামাজিক মিডিয়া নামের অবাধ ভুলভাল তথ্যের নতুন ইন্ধন । যে জানে সে তো বলেই যে জানে না সে বলে আরো অধিক। এই বলা না বলার ঠেলায় বিপাকে আছে বাঙালি। আমি খুব বিনয়ের সাথে বলতে চাই শ্রেষ্ঠ বা অশ্রেষ্ঠ এমন কোন বাছ বিচারে তাঁকে না জড়ানো ই ভালো তিনি আমাদের কবি। যে কবি জন্মদিনের জন্য নিজের কোন সময় রাখতেন না।
অনেকে জানেন তিনি বাংলার বহু মনীষার জন্মদিনে কবিতা গান লিখে শুভেচ্ছা জানালেও নিজের জন্য লিখতেন না। সকলের অনুরোধে হে নতুন দেখা দিক আরবার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ গানটি নতুন করে লিখেছিলেন। কে জানতো সেটাই হবে তাঁর শেষ জন্মদিন। শেষ গান। আমাদের রবীন্দ্রনাথের আর একটা বড় পরিচয় তাঁর প্রেমিক সত্তা। যে মানুষটি অল্প বয়সে স্ত্রী হারিয়েছিলেন তাঁর জীবনে প্রেম এসে ফিরে যাবে? কিন্তু আপনি হাজার চেষ্টা করলেও সীমানা ডিঙ্গানো প্রমাণ করতে পারবেন না। আর্জেন্টিনার ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে তিনি ডাকতেন বিজয়া নামে। এই বিজয়াকে নিয়ে লেখা কবিতায় আমরা যে পবিত্র ভালোবাসার সন্ধান পাই তা দুর্লভ। নিশ্চয়ই মনে রাখবো ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো তাঁকে ভালোবাসার কারণেই ভারতে এসেছিলেন রাজদূত হয়ে । একজন কবির এই নিবিড় যোগ আর আকর্ষণ আজকালের মানুষজন বোঝে না। যে সমাজে যে বাস্তবতায় হৃদয় বলে কিছু থাকে না সে সমাজ তাঁকে কতটা মানবে বা সম্মান জানাতে পারবে তা অবশ্যই প্রশ্নবোধক। কিন্তু এতে কার লাভ? কি লাভ হচ্ছে বাঙালির?

আমরা নিশ্চয় ই ভুলে যাই নি একদা নিষিদ্ধ রবীন্দ্রনাথ কতটা অপরিহার্য ছিলেন। পাকিস্তানি শাসকেরা তাঁকে মানতে পারতো না। তাঁদের এই না মানার কারণ রবীন্দ্রনাথ আপদমস্তক বাঙালি। তিনি লিখতে পারেন বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু বাংলার ফল পুন্য হ উক পুন্য হ উক পুন্য হ উক হে ভগবান। তাঁর আশাবাদ ছিল সব ভাইবোন এক হয়ে গড়ে তুলবে বাঙালি ভূবন। তেমনটা আমরা কিছু হলেও দেখেছি একাত্তরে। আরেক খ্যাতিমান বাঙালি বঙ্গবন্ধুর মনে ছিলেন কবি। ছিলেন বলেই তিনি দেশ স্বাধীন করার কালে রবীন্দ্রনাথকে বুকের ভেতর লালন করতেন। স্বাধীন দেশে জাতীয় সঙ্গীত করা হলো তাঁর লেখা আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। মনে হচ্ছে খুব সাধারণ কথা এগুলো? মোটেও না। যে গানের কথায় বলা হয়েছে, তোমার বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভালোবাসি। তা কি সাধারণ কিছু? বাংলা বাঙালির বদন মলিন করার কু কাজে লিপ্ত সমালোচক নামধারী কুমতলবাবাজদের রুখতে হবে। তারা জানে এই একজনকে বাদ দিতে পারলে বা দূরে সরিয়ে রাখতে পারলে তাদের ষড়যন্ত্র সার্থক হবে। এ জন্যে তারা মরিয়া। দুঃখটা এই, আগে যে বাদ প্রতিবাদ আর ভালোবাসায় তাঁকে আমরা আগলে রাখতাম আজকাল সে প্রবাহে ভাটা পড়েছে । এর বিরুদ্ধে অপশক্তির বিরুদ্ধে রবীন্দ্রজাগরণ জরুরী। যে মানুষটি ভোর থেকে রাত অবধি সাথে থাকেন, যাঁর গানের কলি মানেই পাখির কন্ঠে আপনি জাগাও আনন্দ/ ফুলের বক্ষে ভরিয়া দাও সুগন্ধ তাঁকে অপমান করা মানে পাখি ফুল আকাশ বাঙালিকে অপমান করা । এই অপমান কোন কালে মানি নি আমরা। আজকের বাংলাদেশ যেন ও না মানে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের আত্মা। তাঁর বিনাশ নাই। ‘

লেখক: অজয় দাশগুপ্ত – সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ