1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

যুব দক্ষতা ও আমাদের ভবিষ্যৎ

ড. মতিউর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০২২

২০১৪ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে—যুব সম্প্রদায়ের জন্য কর্মসংস্থান, শোভন কাজ এবং উদ্যোক্তা হিসেবে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশলগত গুরুত্ব উদযাপন করার উদ্দেশ্য। সেই থেকে, বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস তরুণদের, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (TVET) প্রতিষ্ঠান, ফার্ম, নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিক সংগঠন, নীতি-নির্ধারক এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সংলাপের জন্য একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করেছে।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ— এজেন্ডা-২০৩০ অর্জনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ৪ এ বলা হয়েছে ” সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং সকলের জন্য আজীবন শিক্ষার সুযোগের প্রচার করা”।

এজেন্ডা ২০৩০ এ কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা অর্জন ও দক্ষতা উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে স্বল্প খরচে উন্নত মানের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ (TVET); কর্মসংস্থান, শোভন কাজ এবং উদ্যোক্তার জন্য প্রযুক্তিগত এবং বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জন; লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা এবং দুর্বলদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।

বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০২২ কোভিড-১৯ মহামারি থেকে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধারের দিকে অগ্রসর হওয়ার দিকে জোর দিয়েছে যা জলবায়ু পরিবর্তন, সংঘাত, অব্যাহত দারিদ্র্য, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে আন্তঃসম্পর্কিত। ২০২২ সালের বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবসের থিম বা মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ‘ভবিষ্যতের জন্য যুব দক্ষতার রূপান্তর’।

আমরা জানি দক্ষতা জীবনকে বদলে দেয় এবং দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব। আর দক্ষ ও যোগ্য যুব সমাজ গড়তে শিক্ষার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। জাতিসংঘ ঘোষিত এই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য হল বিশ্বের যুবদের বিভিন্ন দক্ষতায় দক্ষ হওয়ার আহ্বান জানানো এবং ভবিষ্যতের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ যুবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করা।

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ (TVET) যুবকদেরকে কাজের জগতে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা দিয়ে প্রস্তুত করতে পারে, যার মধ্যে স্ব-কর্মসংস্থানের দক্ষতাও রয়েছে। এছাড়াও TVET কোম্পানি এবং সম্প্রদায়ের পরিবর্তিত দক্ষতার চাহিদার সাথে নিজেদেরকে প্রস্তুত ও উন্নত করতে পারে এবং উৎপাদনশীলতা ও মজুরি বৃদ্ধি করতে পারে।

TVET কাজের জগতে প্রবেশের বাধা কমাতে দূর করতে সহায়তা করে, উদাহরণস্বরূপ, কর্ম-ভিত্তিক শিক্ষা এবং অর্জিত দক্ষতাগুলি স্বীকৃত এবং প্রত্যয়িত হয়েছে তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। TVET স্বল্প-দক্ষ লোকদের জন্য দক্ষতা বিকাশের সুযোগও দিতে পারে যারা আধা দক্ষ, বেকার, যারা স্কুলের বাইরে রয়েছে এবং কোনো শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণে নেই এমন যুবদের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে।

জাতিসংঘ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদেরকে যুব হিসেবে নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় যুব নীতি অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৩৫ বয়সীরা যুব হিসেবে স্বীকৃত। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক বাংলাদেশে যুবসমাজের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৪ শতাংশ। উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের শ্রমবাজারে বছরে প্রায় ২২ লাখ মানুষ প্রবেশ করে। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে মাত্র ১২-১৩ লাখ যুবকের।

অন্য কথায়, তাদের প্রায় অর্ধেকই কর্মসংস্থানের বাইরে থেকে যাচ্ছে। যুবসমাজকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারাটা একটা বড় জাতীয় অপচয়। তাদের মতে, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে স্ব-কর্মসংস্থানের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এই বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।

কোভিড-১৯ মহামারির ভয়াবহ প্রভাবের কারণে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। তদুপরি শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সব সেক্টরই প্রায় ধসে পড়েছে। এই বৈশ্বিক মহামারী শিক্ষা খাতকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে। ইউনেস্কো জানিয়েছে যে সারা বিশ্বে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর অন্তত এক বিলিয়ন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত চার কোটি শিশু প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই মহামারীর কারণে বাংলাদেশের শিক্ষার অবস্থাও জীর্ণ।

গত বছর (২০২১) পিপিআরসি এবং বিআইজিডি দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে করোনা মহামারির কারণে প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তরে এবং ২.৫ মিলিয়ন মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রাথমিক স্তরের কমপক্ষে ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে অক্ষমতার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে ঝরে পড়ার হার মাধ্যমিকে (৩৭.৬০ শতাংশ) এবং মাধ্যমিক পরবর্তী শিক্ষায় (১৯.৬০ শতাংশ), ব্যানবেইস-এর সাথে যা সামঞ্জস্যপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, আয় ও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে অনেকেই তাদের সন্তানদের শিশুশ্রমে নিযুক্ত করছেন এবং করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাবে বাল্যবিবাহের হারও বেড়েছে। এক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। অপুষ্টিতেও বাংলাদেশ একটি শীর্ষস্থানীয় দেশ।

সুতরাং, একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। যদিও বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন উপায়ের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে, ব্যাপকভাবে বাজার চাহিদা-ভিত্তিক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (TVET) এবং স্বল্প মেয়াদী বিভিন্ন ট্রেড কোর্সে আধা-দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান লক্ষ লক্ষ ঝরে পড়া ছাত্র এবং বেকার যুবকদের জন্য একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।

তাদের চাকরির সুযোগও নিশ্চিত করতে হবে। এভাবেই ভবিষ্যতের জন্য যুব দক্ষতার রূপান্তর ঘটাতে হবে। তাহলে তারাই হবে আমাদের সম্পদ, এবং আমরা আমাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার লভ্যাংশ (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট) আমাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারব।

তারুণ্য বা যুব শক্তি যে কোনো দেশের মূল্যবান সম্পদ। জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি মূলত যুবদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করে। একটি জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে ওঠে যুবকদের মেধা, সৃজনশীলতা এবং সাহসকে ঘিরে। কোন সন্দেহ নেই যে ভবিষ্যতে একটি প্রজন্ম তাদের শিক্ষা, দক্ষতা এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকারের দিক থেকে একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। করোনা মহামারীর পরে তারা আমাদের সমাজের জন্য বোঝা হতে পারে।

সুতরাং, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, এনজিও এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে আরও শক্তিশালী সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে এই সংকট থেকে উত্তরণে সরকারকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। এখনই যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের সবাইকে হারানো প্রজন্মের জন্য উচ্চ মূল্য দিতে হবে। তবে আশার কথা বাংলাদেশ সরকার যুব সমাজকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে ও দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (TVET) সহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

লেখক : ড. মতিউর রহমান – গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ