1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সুন্দরবনে এতো বাঘ আগে দেখেনি কেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২

পূর্ব সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বনে প্রবেশ করলেই মিলছে বাঘের দেখা। পূর্ব সুন্দরবনের আলীবান্দা, ধাবরী, দাসের ভারনী, পানির ঘাট, কলমতেজীসহ মধ্য সুন্দরবনের কোকিলমুনি, ছাপড়াখালীতেও প্রায়শই দেখা যাচ্ছে বাঘের আনাগোনা।

গত ১২ থেকে ১৫ বছরে এভাবে বাঘের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি।

সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা বাঘ বন্ধু আবুল আসলাম তুহীনসহ অন্যান্য বাঘ বন্ধুরা বাঘের সুরক্ষায় কাজ করেন।

ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম ভিটিআরটির শরণখোলা উপজেলার সুপারভাইজার মো. আলম হাওলাদার বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে কাজ করছি। জরিপের ফলাফলে বাঘের সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়ায় আমরা আতঙ্কিত ছিলাম। বনে ঢুকলে বাঘের তেমন আনাগোনা লক্ষ্য করা যেতনা। এখন বাঘ আতঙ্কে জেলে-মৌয়ালীরা বনে যেতে চাননা।

বনের চাদপাই রেঞ্জ এলাকা থেকে মাঝেমধ্যে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বাঘ। লোকালয়ে বাঘ ঢুকে গত ৬ মাসে অন্তত পাঁচটি গবাদি পশু আক্রমণ করেছে।

চাঁদপাইয়ের ধানসাগর এলাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে মানুষ রাতের আধারে বাঘের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে সাহস পাননা।

চলতি বছর মধু সংগ্রহ করতে যাওয়া মৌয়াল বন সংলগ্ন বগী গ্রামের মো. কামাল হোসেন, চালিতাবুনিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন খান ও জাকির হোসেন হাওলাদার জানান, মধ্য বনের ছাপরাখালী, কোকিলমুনি এলাকায় অনেক বাঘের দেখা পাওয়া গেছে যা আগে দেখা যায়নি।

সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসায়ী শরণখোলার আমিনুল ইসলাম সাগর জানান, বনে ভ্রমণ করতে গেলেই বাঘের চলাচল চোখে পড়ে।

সম্প্রতি পর্যটকরা একসাথে তিনটি বাঘ নদী সাঁতরে যেতে দেখেছেন। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

পাশাপাশি নদীর চরে একসাথে তিনটি বাঘ শুয়ে থাকতে দেখেছেন অন্য একদল পর্যটক।

সুন্দরবনের বাঘ বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে বনজীবীদের কাছ থেকেও। পূর্ব বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বাঘ বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাঘের আবাস্থলে নজরদারি বাড়ানোর ফলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সুন্দরবন সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি সিএমসির শরণখোলা উপজেলার সহ-সভাপতি মো. ওয়াদুদ আকন জানান, বনরক্ষীরা বন রক্ষায় সরকারী দায়িত্ব পালন করলেও রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রাকৃতিকভাবে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সার্বক্ষণিক সুন্দরবন রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। বাঘের ভয়ে মানুষ বনে কম প্রবেশ করায় রক্ষা পাচ্ছে বন।

বাঘের সংখ্যা ১৯৮২ সালের জরিপে ৪৫৩ টির পর হ্রাস পেয়ে ২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপে দাঁড়িয়েছে ১১৪টিতে।

এরপরেও চোরা শিকারিদের খপ্পরে পড়ে, বার্ধক্যজনিত কারণে ও অসুস্থতায় কমছে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা। ফলে হতাশা দেখা দিয়েছে বাঘরক্ষা বিষয়ক কমিটি ও সচেতন মহলে।

গত কয়েকবারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাঘ গণনার ফলাফলে দেখা যায়, ১৯৮২ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৫৩টি।

২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী ও বন বিভাগের যৌথ শুমারিতে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪০টিতে।

২০১৩ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা হয় ১০৬টি। আর ২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপে ১১৪টি বাঘের অস্তিত্ব পান বিশেষজ্ঞরা।

এভাবে বাঘ গণনার নিম্নমুখী ফলাফলে বাঘের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন বনরক্ষীসহ বন সুরক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।

তবে বর্তমানে বনে বাঘের আশানুরূপ উপস্থিতি আশার সঞ্চার করেছে বন ও পরিবেশবাদীদের মাঝে।

জেলে ও মৌয়ালী সূত্র জানায়, পূর্ব সুন্দরবনের বিভিন্ন স্পটে প্রায়ই মিলছে বাঘের দেখা। পর্যটকদের দৃষ্টিও এড়াচ্ছেনা বাঘের আনাগোনা।

বনজীবী ও বন রক্ষীরা জানান, গত ১০ বছরেও এভাবে বনে বাঘের চলাচল লক্ষ্য করা যায়নি। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কেও রয়েছেন তারা।

স্থানীয় সচেতন মহল জানায়, সুন্দরবন রক্ষায় বাঘের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বাঘ বৃদ্ধির ঘটনা সুন্দরবনের জন্য একটি সুখবর।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ