1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সংঘাত থামানোর চেয়ে বাঁধানোয় মার্কিন পারদর্শিতা প্রশ্নাতীত

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বহুল আলোচিত যুক্তরাষ্ট্র সফর সদ্যই শেষ হলো। বহুল আলোচিত বলার কারণ, যে নরেন্দ্র মোদিকে ১০ বছর আগে মার্কিন প্রশাসন নিষিদ্ধ করেছিল, সেই মোদিকে লাল গালিচা, গার্ড অব অনার আর কংগ্রেসে ভাষণ দেয়ার সম্মান দিয়ে সম্মানিত করছে মার্কিন প্রশাসন। যা হোক, তাদের প্রধানমন্ত্রীর বহুল আলোচিত এই সফর নিয়ে ওদের মিডিয়া সঙ্গত কারণেই সরব হলেও, ওদের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে আমাদের এখানেও আলোচনা-বিশ্লেষণ বেশি বই কম নয়। ওদের আগ্রহের কারণটা যেমন বোধগম্য, ওদের সরকারপ্রধানের এই সফর নিয়ে আমাদের আগ্রহের এই বাড়াবাড়িটাও একইভাবে সহজবোধ্য।

ধারণা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু হবে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের সম্প্রীতি দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশের জন্য বিশেষ ভিসা পলিসির ঘোষণা সম্প্রতি দিয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পররাষ্ট্র দপ্তর। মুখে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের জন্য এই নতুন ভিসানীতি প্রযোজ্য হবে বলা হলেও, স্পষ্টতই এটি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির একটি চালমাত্র। যেসব সরকারি কর্মকর্তা এবং সুবিধাভোগী সম্প্রদায় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আঙুল ফুলে এই সরকারের ঘাড়ে কাঁঠাল ভেঙে কলাগাছ হয়ে সেই কলাগাছের একটা বড় অংশ মার্কিন মুলুকে পাচার করেছেন, তারা মার্কিন ভিসাসংক্রান্ত এমন অনিশ্চয়তায় সরকারবিরোধী শিবিরের দিকে ঝুঁকে পড়বেন এই প্রত্যাশা থেকেই যে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন ভিসানীতির ঘোষণা এসেছে তা যে কোনো বোকাকেও বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে যুক্তিতে বাইডেন প্রশাসন এবং তাদের স্থানীয় ভক্তকুল মুখে ফেনা তুলছেন তা মোটেও তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব বা পরবর্তী কোনো ইতিহাসই এ দেশে এত দিনের একটানা গণতান্ত্রিক শাসন আর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের সাক্ষ্য দেয় না, যা আজকের বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করছে। এটা ওদের ভালোই জানা। যেমন তারা জানে যে এসব ভিসা নীতি-টিতি দিয়ে আর যাই হোক গণতন্ত্র কায়েম হয় না। যদি হতো তাহলে সোমালিয়া কিংবা সুদান এত দিনে পৃথিবীর সবচাইতে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতো। কারণ এ দুটো দেশের ক্ষেত্রে মার্কিনিরা অনেক আগেই একই ধরনের ভিসানীতি প্রয়োগ করে অশ্বডিম্ব প্রসব করেছেন।

আসলে ওদের মূল লক্ষ্য হলো ওই কলাগাছগুলো আওয়ামী লীগের বাগান থেকে বিএনপির বাগানে স্থানান্তর করা। এতে অবশ্য আওয়ামী লীগের ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশি। কারণ এতে করে আওয়ামী লীগ অনাকাঙ্ক্ষিত জঞ্জালমুক্ত হবে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টতই আমেরিকার এসব ভিসানীতি আর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার থোরাই পরোয়া করছেন।

তবে বিষয় আসলে এটি নয়। বিষয়টা অন্যখানে। পৃথিবীর ক্ষমতাসীন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিজ্ঞতার ঝুলি সবচাইতে সমৃদ্ধ। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় তার খুব ভালো করেই জানা-বোঝা আছে মার্কিনিদের ব্যাপারে ইরানের ক্ষমতাচ্যুত শাহের সেই ঐতিহাসিক, কিন্তু চিরন্তন মূল্যায়ন, ‘মার্কিনিরা যার বন্ধু, তার কোনো শত্রুর প্রয়োজন নেই’। মার্কিনিরা এক দিন নিজেরাই বুদ্ধি-পরামর্শ এবং ট্রেনিং দিয়ে এ দেশের র‌্যাব নামক যে বিশেষায়িত বাহিনীটির সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিল, তারাই কদিন আগে এই বাহিনীটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অথচ বাংলাদেশে মৌলবাদের বংশ নির্বংশ করায় র‌্যাবের যে প্রশংসনীয় ভূমিকা তা সর্বজনবিদিত। এখন শুরু হয়েছে নতুন আরেক চক্রান্ত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছয়জন আইন প্রণেতা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে আবদার করেছেন, যাতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ বন্ধ করা হয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে থাকে বাংলাদেশ। যদি সত্যি-সত্যি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের জাতিসংঘের মিশনগুলো থেকে ফিরিয়ে আনা হয় তবে বিশ্বের আনাচে-কানাচে সংঘাত বন্ধে এত শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ কোথা থেকে পাবে এ নিয়ে কোনো উল্লেখ অবশ্য এই বিজ্ঞ ছয় আইন প্রণেতার চিঠিতে নেই। অবশ্য সেটাই প্রত্যাশিত। কারণ সংঘাত থামানোর চেয়ে বরং বাঁধানোয় মার্কিন পারদর্শিতা প্রশ্নাতীত। মার্কিন রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে ওই এক খেপাটে ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া আর একজনের নামও কেউ মনে করতে পারবেন না যিনি পৃথিবীতে কোথাও না কোথাও বড় কোনো একটা যুদ্ধ বাঁধাননি। প্রধানমন্ত্রী মোদির আমেরিকা সফরের যে প্রসঙ্গটি এ লেখাটির প্রারম্ভে, সেই সফরের প্রাক্কালে আইন প্রণেতাসহ ৭৫ জন বিশিষ্ট মার্কিন নাগরিক রাষ্ট্রপতি বাইডেনের কাছে প্রধানমন্ত্রী মোদির নামেও নালিশ করে একটি চিঠি দিয়েছেন। এ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় কারও কোনো মাথাব্যাথা নেই, অথচ ছয়জনের স্বাক্ষরিত ওই এক চিঠির জ্বরে কাঁপছে পুরো বাংলাদেশ।

যেমনটা বলছিলাম বিষয়টা অন্যখানে। বিষয়টা অত সহজ নয়। বাংলাদেশে ‘সো কল্ড’ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আসলে মার্কিনিদের সর্বশেষ এজেন্ডাতেও নেই। থাকলে গণতন্ত্রকে সকাল-বিকাল লুণ্ঠিত করা হয় যে পাকিস্তানে, সে দেশের প্রতি মার্কিনিদের নিঃশর্ত সমর্থন কখনোই এভাবে অবারিত এবং অবধারিত হতে পারত না। মার্কিনিদের সহসা এমন খেপাটে আচরণের পোস্টমর্টেম চলছে গত কয়েক মাস ধরেই, কি চায়ের আড্ডায়, কি ফেসবুকে, কি টক শোতে। শেষমেশ ব্রেকিং নিউজটা দিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। কাতার এবং সুইজারল্যান্ডে তার সাম্প্রতিক সফর-পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে সেন্ট মার্টিনে মার্কিন ঘাঁটি করার অন্যায় দাবির কাছে নতি স্বীকার করে দেশ বিক্রির সিদ্ধান্ত না নেয়াতেই তিনি এবং তার সরকার এখন মার্কিনিদের এতটা বিরাগভাজন। এটাও অবশ্য নতুন কিছু নয়। বাইডেন-পূর্ববর্তী জমানার আরেক মার্কিন ডেমোক্র্যাট রাষ্ট্রপ্রতি বিল ক্লিনটনের আবদারে দেশের গ্যাস সম্পদ মার্কিনিদের হাতে তুলে দেয়ায় অসম্মতি জানানোতেই ২০০১ সালে ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল শেখ হাসিনার সরকারকে। একইভাবে একাত্তর সালে মার্কিনিদের পেয়ারে পাকিস্তানকে ভেঙে বাংলাদেশ স্বাধীন করার অপরাধে বঙ্গবন্ধুকে পঁচাত্তরের পনের আগস্ট সপরিবারে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করতে হয়েছিল। কাজেই আজকে আরেকটি নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে ঘিরে মার্কিনিদের যে পোড়ামাটি নীতি তা আসলে নতুন বা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এটি ১৯৭৫ আর ২০০১-এর ধারাবাহিকতা মাত্র।

তবে এই দফায় মার্কিনিদের কাছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অপরাধটা অনেক বেশি গুরুতর, প্রায় ১৯৭১-এর সমতুল্য। কারণ বঙ্গবন্ধুর কন্যা যে শুধু বাংলাদেশকে তার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক শাসন উপহার দিয়ে সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের আর টেকসই ধারাবাহিকতার একটি অনুস্মরণীয় রোল মডেলে পরিণত করেছেন তা-ই নয়, পাশাপাশি তিনি মার্কিনিদের কাছে দেশ বিক্রিতে অসম্মতি প্রদানের মতো ধৃষ্টতাও দেখিয়েছেন। এই বাস্তবতার মুখে স্বাধীনচেতা শেখ হাসিনার সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জটা আজকে যেমন অনেক বড়, তেমনি এবার আমাদের প্রস্তুতির জায়গাটাও অসাধারণ। একসময়ে সবার কাছে অপাঙ্‌ক্তেয়, তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ এখন সবার কাছেই আরাধ্য। আমাদের যারা ঐতিহাসিক মিত্র তারা সেই একাত্তরের মতোই আজও আমাদের পক্ষে একাট্টা। অন্যদিকে পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতায় আমাদের পাশে এসে জুটছে নতুন নতুন বন্ধুও। একদিন যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগে দ্বিধা করেননি আজ সেই সব হাইব্রিড বন্ধুরাও আছেন আমাদের সঙ্গে। চৌদ্দ বছর টানা ক্ষমতায় থাকার বাস্তবতায় শেখ হাসিনার যেমন আছে পরীক্ষিত পাশাপাশি হাইব্রিড নেতা-কর্মী, তেমনি একইভাবে দেশের বাইরেও তার আছে পরীক্ষিত আর হাইব্রিড বন্ধুরাষ্ট্রও। আর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ঝুলি কাঁধে, দেশের গরিষ্ঠ মানুষের নিঃশর্ত সমর্থনে বলীয়ান শেখ হাসিনা মার্কিনিদের জন্য আজ অনেক বেশি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। রাজনীতির এই নতুন খেলায় আন্ডারডগ এখন ওরা, আমরা না।

লেখক : অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল – ডিভিশনপ্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্যসচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ