1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নানামুখী রাজনৈতিক তৎপরতা

মোনায়েম সরকার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় দেশে নানামুখী রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিএনপি পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থেকে নিজ নিজ শক্তি দেখাতে তৎপর রয়েছে। বিএনপি এক দফার আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি চাইছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে হটাতে।

অন্যদিকে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। বিএনপি চাইবে রাজপথ দখলে নিতে। আওয়ামী লীগও রাজপথে থাকারই ঘোষণা দিয়েছে। কার আশা পূরণ হবে- সে প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, সাদা চোখে যা দেখা যাচ্ছে, তাতে এগিয়ে আছেন শেখ হাসিনা। কারণ শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি।

আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠন গোছানো শুরু করলেও বিএনপির মুখে আন্দোলন ছাড়া আর কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সমাবেশে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে ভোটের রাজনীতিতে বিদেশিদের আনাগোনা ও তৎপরতা বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করেছে। মার্কিন একটি প্রতিনিধি দলও ঢাকা আসছে। বিদেশিদের ওপর এই নির্ভরতার সমালোচনাও প্রবলভাবেই আছে। আমার ভোট যেহেতু আমি দেবো, সেহেতু এ নিয়ে বিদেশিদের মাথাব্যথা কেন? বিদেশিরা তো ভোট দেবে না।

ভোট দেওয়ার সুযোগ বা অধিকার মানুষ নিজেরাই আদায় করে নেবে। যে যাই বলুক না কেন, যত গুজবই ছড়ানো হোক না কেন, দেশে নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হবে এবং সেটা এই সরকারের অধীনেই। বিদেশিদের চাপ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। কোন্ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে- সেটা তাদের বিষয় নয়। ২০১৪ সালে বিএনপি ও তার মিত্ররা বর্জন করায় একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ওই সময় বিদেশিদের মধ্যস্থতায় দেনদরবার হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি অনড় থাকায় তা ভেস্তে যায়। ২০১৮ সালে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল।

ওই নির্বাচনে সবাই অংশ নিলেও ভোট ডাকাতির অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপিসহ অন্যরা সংসদে যোগ দেয়। তবে এরপর বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও বর্জন করে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপিসহ বিরোধীরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে আসছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নও বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতিও ঘোষণা করেছে।

অন্যদিকে সরকার নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে সংবিধান অনুযায়ী আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার পক্ষে। সে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগের দুই বারের মতো নির্বাচন হবে এটা মনে করে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বসে থাকলে কোনো লাভ হবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মনোনয়ন দেওয়া হবে তাদেরই যাদের জনগণের ও নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি এবার কাউকে জেতানোর দায়িত্বও নিজের কাঁধে নেবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই ঘর গোছাতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সুষ্ঠু ভোট করবেন বলেই দলীয় প্রধান নেতাকর্মীদের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। নিরপেক্ষ ভোটের আয়োজন করে তিনি তার কথা রাখবেন। তাতে দল ক্ষমতায় আসুক বা না আসুক। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জিতে আসার যোগ্যতা আছে যাদের তাদেরই মনোনয়ন দেবেন তিনি।

ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে মাঠের কর্মসূচি আরও জোরালো করার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। পরিকল্পনা সাজাতে জেলা, উপজেলা ও মহানগরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও শুরু করেছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। দেওয়া হচ্ছে নানা দিকনির্দেশনা। নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে জুলাইজুড়েও অব্যাহত থাকবে শান্তি ও প্রতিবাদ সমাবেশ। এর সঙ্গে থাকবে বিক্ষোভ মিছিলসহ অন্যান্য কর্মসূচিও। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এসব কর্মসূচি। তৃণমূল পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের কারণে মাঠ নিজেদের দখলে রাখার পাশাপাশি নেতাকর্মীরা চাঙা থাকবেন।

মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি থাকবে শোকের মাস আগস্টে। সেপ্টেম্বর থেকে আবারও জেলায় জেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভা শুরু হবে। এই সময়ে নানা সভা-সেমিনারেরও আয়োজন করা হবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারের উন্নয়ন চিত্রের পাশাপাশি তুলে ধরা হবে বিএনপি-জামায়াতের নানা ‘অপকর্ম’। এছাড়া সামনের দিনগুলোতে আন্দোলনের মাঠে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের আরও সক্রিয় করতে চায় আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি অতীতের মতো নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রাখা হবে সহযোগী সংগঠনগুলোকেও।

বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের বড় দুর্ভাবনা আছে বলেও মনে হয় না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলন তো আমরা সেই কবে থেকে দেখছি। তাদের হরতাল-অবরোধও সেই কবে থেকেই চলছে। সেগুলোই তো এখনো উঠিয়ে নেয়নি। সুতরাং এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। আমরা আমাদের জনগণকে সতর্ক করছি। নিজেদের সাংগঠনিক তৎপরতাকে আরও জোরদার করার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে দলীয় সভাপতি আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে বলেছেন। দ্বিতীয়ত, বিএনপি-জামায়াতের সময় তারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতিসহ যেসব অপকর্ম করেছেন সেগুলো আমরা জনগণের কাছে তুলে ধরব। তৃতীয়ত, আমাদের সময়ে কী কী উন্নয়ন হয়েছে, সেগুলো আমরা আরও বেশি করে জনগণের সামনে তুলে ধরব।’

অন্যদিকে বিএনপির পরিকল্পনা হলো নব্বইয়ের যুগপৎ আন্দোলনের মতো এক-দফা অর্থাৎ সরকারের পদত্যাগ দাবিতে সরকারবিরোধী ডান-বামের সব রাজনৈতিক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা। নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মতোই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একযোগে কর্মসূচি পালন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। কর্মসূচিতে যাতে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে। সভা-সমাবেশে বাধা ও নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু করার বিষয়ে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন এমপি রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের রূপরেখায় ‘নির্বাচনে ভোট চুরি, ভোট জালিয়াতি, ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, নির্লজ্জ ভোট ডাকাতি, মিডিয়া ক্যু প্রভৃতি প্রসঙ্গ টেনে একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা জাতির সামনে হাজির করা হয়েছিল। ১৯৯০ সালে ঘোষণা দেওয়া তিন জোটের রূপরেখায় চারটি ধারার প্রথম ধারায় ক, খ; দ্বিতীয় ধারায় ক, খ, গ, ঘ; তৃতীয় এবং চতুর্থ ধারায় ক, খ, গ উপধারায় বিন্যস্ত করে বিভিন্ন দাবি জানানো হয়েছিল।

এবার বিএনপি বিভিন্ন দলের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাব নিয়ে একটি স্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করছে। তারা নিজেদের ১০ দফা, রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা, গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফাসহ অন্য দলগুলোর দাবি সমন্বিত করে ৩১ দফার একটি প্রস্তাব তৈরি করেছিল। সেটি গুছিয়ে ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ’কে সামনে এনে এক দফার প্রস্তাবের চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদনের অপেক্ষায় রেখেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

বিএনপি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইলেও রাজনীতির মাঠের বাস্তবতা বড় কোনো আন্দোলনের পক্ষে বলে মনে হয় না। মানুষ ভোট দেওয়ার অধিকার চায়, কিন্তু শান্তি-স্থিতি বিনষ্ট করতে চায় কি? বিএনপি কীভাবে মানুষকে রাজপথে নামাবে দেখার বিষয় সেটাই। শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত কী কৌশল গ্রহণ করবেন তা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত অন্ধকারে পথ হাতড়াতে হবে বিএনপিসহ তার মিত্রদের। সরকারবিরোধীদের মধ্যে ঐক্য ও সমঝোতার ভিত্তি যে খুব দৃঢ় তা-ও নয়। গণ অধিকার পরিষদের বিরোধ এবং জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির মন কষাকষির খবরের মধ্য দিয়েই বিরোধী ঐক্যের নড়বড়ে অবস্থা স্পষ্ট হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের নির্বাচনগুলো মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে, বিএনপি এতে অংশ নেয়নি কিন্তু আওয়ামী লীগবিরোধী প্রার্থী ছিল, ভেতরে ভেতরে প্রচারণা চালানো হয়েছে, ফলাফল সবার জানা। ছয় মাস আগে যারা জোর দিয়ে বলতেন যে, আওয়ামী লীগের জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই, এখন তারাই বলছেন, আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই।

এদের যুক্তি হচ্ছে, বাংলাদেশের মতো একটি দেশে, যেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন সবাই সরকারের পক্ষে এবং জনগণ বিভক্ত, সেখানে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি দলের পক্ষে না গিয়ে বিরোধীদের দিকে যাবে কীভাবে? বিএনপি সমর্থক ভাসমান জনতা, জামায়াতের ক্যাডার ভিত্তি হয়তো বাহ্যত কিছু উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু সেগুলো নির্বাচনের ফলাফলে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। বাংলাদেশের মানুষ ‘ভোট নষ্ট’ করতে চায় না।

সব মিলিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। নির্বাচনের পর কিছু বিতর্ক হয়তো হবে, তবে তাতে বড় ধরনের কোনো সংকট হবে না। আর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার ফিরে আসার বিকল্পও দেখা যাচ্ছে না।

লেখক: মোনায়েম সরকার – রাজনীতিক, লেখক ও মহাপরিচালক, বিএফডিআর।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ