1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

স্লোগানের অপমান মেনে নিবো না!

হামজা রহমান অন্তর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৭ আগস্ট, ২০২১

ব্যারিস্টার সাহেবদের সরকারি দলের পদ বনাম সাবেক ছাত্রনেতা ওসি আকতার হোসেন এর সংগ্রামী অতীত নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই।

আমরা যারা ছাত্ররাজনীতি করি, তাদের জীবনের সবচাইতে সেরা ও আবেগঘন মূহুর্ত হলো স্লোগানের স্মৃতিগুলো। রোদ-বৃষ্টি, আলো-আঁধারে কখনো এই স্লোগানকে কেউ থামিয়ে দিতে পারতো না। প্রায়ই আমার মনে পড়ে শাহবাগের দিনগুলোতে ছাত্রলীগের সবাই মিলে কেমন করে স্লোগানে স্লোগানে আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে তুলতাম। আমার মনে পড়ে প্রতিটি মিছিলের দ্বিতীয় সারিতে দাঁড়িয়ে কিভাবে গলা ফাটাতাম! আমার মনে পড়ে প্রতিটি সম্মেলনে প্রানপ্রিয় নেত্রী যখন মঞ্চে আসেন, ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর চোখেমুখে স্লোগানের উত্তাপে কি উচ্ছ্বাস, কি আনন্দ! আমায় স্পর্শ করে শোকাবহ আগস্টের প্রতিটি অনুষ্ঠানে করতালিবিহীন স্লোগানের চাপা নীরবতাগুলো। ব্যারিস্টার সুমন সাহেবদের এমন অভিজ্ঞতা আছে কিনা আমার জানা নেই।

“জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” স্লোগান দেয়া শরীয়তপুরের পালং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকতার হোসেন সরকারি কবি নজরুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই নিজ ক্যাম্পাসে অবস্থানরত অবস্থায় ছাত্রদলের সশস্ত্র ক্যাডারদের অতর্কিত হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন এই সাবেক ছাত্রনেতা। একজন ছাত্রনেতা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা ব্যয় করে রাজপথে, এতো সহজে কি এই সময়টা ভুলে যাওয়া যায়? “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” কোনো নির্দিষ্ট দলের রাজনৈতিক স্লোগান নয়, এটি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্লোগান। এই স্লোগানকে আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ ধারণ করতে না পারলে সেটা তাদের ব্যর্থতা, তাদের সীমাবদ্ধতা। কিন্তু তাই বলে এই স্লোগান কখনো আওয়ামী লীগের নিজস্ব সম্পত্তি হয়ে যায় নি।

প্রতিটি জাতিরাষ্ট্রের এক বা একাধিক জাতীয় স্লোগান আছে, যেটা তাদের পরিচয়। আমাদের পরিচয় আমাদের অস্তিত্ব “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু”। এই অস্তিত্বকে যারা স্বীকার করতে চায়না, তারা এই স্লোগানকে কোনদিনও স্বীকার করে নাই। তারাই জয় বাংলার বিপরীতে “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ”, বাংলাদেশ বেতারের বিপরীতে “রেডিও বাংলাদেশ” চালু করেছিলো। এতো ষড়যন্ত্র করেও তারা বাঙালির একমাত্র স্বাধীন রাষ্ট্রকে দাবায়ে রাখতে পারে নাই। বাঙালি ঠিকই নিজের পরিচয় নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

ওসি আকতার হোসেন এই দেশের একজন দেশপ্রেমিক সূর্যসন্তান। শোকের মাসে জাতিরপিতার বড় ছেলে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মদিনে তিনি জাতীয় স্লোগান দিয়েছেন, তিনি পিতা মুজিবের নামে স্লোগান দিয়েছেন। জাতিরপিতা আমাদের সবার। শ্রাবণের সেই ভয়াল রাতে শাহাদাৎবরণকারী জাতিরপিতা ও তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি শ্রদ্ধা জানালে কেউ রাজনৈতিক নেতা হয়ে যায় না। একজন বাঙালি হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়। কারন জাতিরপিতাকে যারা হত্যা করেছিলো তারা সবাই বাঙালি ছিলো। আগামী একশো বছর হাহাকার করলেও কি এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের রক্তঋণ কখনো শোধ করা সম্ভব?

ব্যারিস্টার সুমন সাহেবরা পার্টির সুসময়ে এসে বড় বড় কথা বলেন, কিন্তু এতো সুখের সময় পাড়ি দিয়ে আজকের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। আওয়ামী লীগ তার লাখো নেতাকর্মীর রক্তের এপিটাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। আওয়ামী লীগ করতে গিয়ে অনেকের শরীর থেকে এতো রক্ত ঝরেছে, আমাদের সারাজীবনের সকল পরিশ্রমের ঘামও এতো হয় নাই। এই পার্টি ক্ষমতায় আছে টানা ১৩ বছর প্রায়, এই সময়ে সবচাইতে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই। কারা করে নির্যাতন? তারা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে কোথায় ছিলো? এই প্রশ্নের জবাব এখন আর চাইতে ইচ্ছে করে না। আওয়ামী লীগের লাখো নেতাকর্মী আছে বুকে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করে ক্ষুদার্ত পেটে বিনিদ্র রজনী কাটায়। এতো বঞ্চনার পরেও তারা আওয়ামী লীগ ছাড়ে না, এটাই আওয়ামী লীগের অমরত্বের রহস্য। আর আওয়ামী লীগের নিভৃতচারী নেতাকর্মীদের এই ত্যাগের সুযোগ নেন ব্যারিস্টার সাহেবরা। উনারা পার্টির দুঃসময়ে বিদেশে যাবেন, আরাম-আয়েশে থেকে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে এসে সুসময়ে নীতিকথা শোনাবেন। “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্লোগান, এই স্লোগানের বিরোধিতাকারীরা কখনো আওয়ামী লীগের লোক হতে পারে না, আওয়ামী লীগ করার অধিকার তাদের নাই। ধর্মান্ধ হিংস্র হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের সময় এই সুমন সাহেবরাই তখন গর্তে লুকিয়ে ছিলেন, জাতি তাদের কোনো বক্তব্য দেখতে পায় নাই, কিন্তু জাতীয় স্লোগানের বিরুদ্ধে ঠিকই মাথাচাড়া দিয়ে লাইভে এসেছেন। অবিলম্বে ব্যারিস্টার সুমন সাহেবকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, অন্যথায় তাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করতে হবে।

“জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” আমাদের পরিচয়, আমাদের অস্তিত্ব। এই স্লোগানের অপমান মেনে নিবো না। বাঙালির অস্তিত্বে হাত দিলে হাত ভেঙে দিতেও জানি। ওসি আকতার হোসেনের পাশে আছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাঙালির জয় হোক, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

 

লেখকঃ- হামজা রহমান অন্তর, ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ