1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জামায়াতের লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প

এহ্‌সান মাহমুদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২

বেশ কয়েক বছর নিভৃতে থাকার পর সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামী খোদ রাজধানীতে ‘ঝটিকা’ বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক কেন্দ্রীয় নেতার মুক্তির দাবিতে ঢাকায় মিছিল করেছে দলটি। ২২ ফেব্রুয়ারি মদের লাইসেন্স প্রদানে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে দলটির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা। আবার সর্বশেষ জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ‘সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে বিদ্যুৎ সেক্টরে মহাবিপর্যয়’-এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলটি।
বস্তুত প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতে ইসলামীকে নানা কৌশল করেই টিকে থাকতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করলেও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজেদের ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে। বিশেষত দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অতীতে আন্দোলনের জোট ও নির্বাচনী জোটে দলটিকে যেভাবে কাছে টেনে নিয়েছে, তাতে এ প্রতিষ্ঠা সহজ হয়েছে।
পঁচাত্তরের মর্মান্তিক পট পরিবর্তনের পর ধর্মভিত্তিক দলগুলো রাজনীতিতে আসার সুযোগ পায়। সেই সুযোগ জামায়াতও গ্রহণ করেছে। পরবর্তী প্রায় সব সময়েই বড় দুই দলের সঙ্গে থেকেছে। একবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে তো পরের বার বিএনপির সঙ্গে; এভাবে কখনও ক্ষমতার সঙ্গে, আবার কখনও ক্ষমতার বাইরে থেকেছে দলটি।

অবশ্য দলটি সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থায় পড়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে শীর্ষ নেতাদের শাস্তি হলে দলটি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এরই মাঝে দলটির নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে। তারপর থেকেই দলটি আড়ালে চলে গিয়েছিল। সম্প্রতি আড়াল ভেঙে রাজপথে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়া কি নতুন কোনো ইঙ্গিত?

প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হলেও নিষিদ্ধ হয়ে যায়নি। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এখনও কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলিরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধের জন্য দলটির বিচার করতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে। এর আগে ২০০৯ সালের এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন। রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে আপিল বিভাগের সংশ্নিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল ও আপিল করেছিল দলটি। এত দিনেও তার নিষ্পত্তি হয়নি। আবার বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে সংগঠনের বিচার ও শাস্তির বিধান নেই। তাই দলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মুখে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বললেও আদতে তারা তা চায় কিনা, তা আইন সংশোধনে অনীহা কিংবা মামলার দীর্ঘসূত্রতা থেকেই অনুমান করা যায়। রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই- কথাটি প্রচলিত হলেও এর মোদ্দা কথা হচ্ছে;
রাজনীতিতে শত্রু-মিত্র চিরস্থায়ী নয়। এ কথা স্মরণ করা কঠিন নয় যে, ৯০ দশকের মাঝামাঝি আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করেছিল, তাতে জামায়াতকে সঙ্গী করা হয়েছিল।

২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল, সেখানে জামায়াতের অংশীদারিত্ব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামী স্বনামে নির্বাচন করতে পারেনি। জামায়াতের ২২ জন প্রার্থী বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করলেও কোনো আসন পাননি। এ দলটি ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ১০টি, ১৯৯১ সালে ১৮টি, ১৯৯৬ সালে ৩টি, ২০০১ সালে ১৭টি এবং ২০০৮ সালে ২টি আসন পেয়েছিল। তাই নির্বাচনী জোট কিংবা আন্দোলনের জোটভুক্ত দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর চাহিদা এখনও ফুরিয়ে যায়নি বলে মনে হয়।

এই ধারণা আরও শক্ত ভিত্তি পায় বিএনপির সাম্প্রতিক অবস্থান বিচারে। নিজেদের ‘মাঠের বিরোধী দল’ দাবি করা এই দল তাদের ‘আন্দোলনের অংশ’ হিসেবে দেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন নেই এমন

দলের সঙ্গেও আলোচনার টেবিলে বসেছে। তবে এই সময়ে ঘুরেফিরে এসেছে জামায়াত প্রসঙ্গ। কিন্তু বিএনপির শীর্ষ নেতারা কেউই এ বিষয়ে খোলাসা করেননি। জামায়াতের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেননি, আবার সম্ভাবনা নেই- এমনটাও বলেননি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ প্রায়ই বলে থাকেন, বিএনপি দেশের স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে না। কিন্তু মজার বিষয়, আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নিচ্ছে না; আবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে ঘায়েল করতেও ছাড়ছে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে- বিএনপি জামায়াতকে ত্যাগ করলে আওয়ামী লীগ যে তাকে গ্রহণ করবে না- এই নিশ্চয়তা তো পাওয়া যাবে না। অন্তত বিএনপি জামায়াত প্রশ্নে যেভাবে ঝুলে আছে, তাতে তা মনে করা অযৌক্তিক নয়।

এমন পরিস্থিতিতে গত এক দশকে শীর্ষ নেতৃত্ব হারিয়ে বিপর্যস্ত জামায়াতে ইসলামী রাজপথে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে আরও এক দফা নিজেদের দর বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছে কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে। জনপ্রিয় বাংলা গানের মতো জামায়াতে ইসলামীর এই ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’ পরিবেশনের পেছনে ক্ষমতার ‘হাতছানি অল্প’ আছে কিনা- সেই জবাব বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সম্ভবত সবচেয়ে ভালো দিতে পারবে।

লেখক : এহ্‌সান মাহমুদ – কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ