1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রেমের টানে গত ৬ মাসে বাংলাদেশে এলো ১৩ বিদেশি

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২

দুই দেশের দূরত্ব আট হাজার ২১৮ মাইল। দুজনের ভাষাও ভিন্ন। সংস্কৃতিও আলাদা। তবে এসব কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াইনি দুজনের চার হাত এক হতে। একসঙ্গে ঘর বেধেছেন দুজনে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে বাংলাদেশের ইমরান খানকে বিয়ে করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক লিডিয়া লোজা। শুধু তাই নয়, ছুটে এসেছেন বাংলাদেশে।

ইমরান খান (২৮) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরমী গ্রামের আহসান উল্লাহ খানের ছেলে। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শেষ সেমিস্টারের ছাত্র। মা–বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে ইমরান সবার ছোট। লিডিয়া লোজা (৩১) যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের মেয়ে।

বিয়ের চার মাস পর ঈদুল আজহার দিন রাতে আরিজোনা থেকে শ্রীপুরে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন লিডিয়া। চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে লিডিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় ইমরান খানের।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই ছয় মাসে প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন ১৩ ভিনদেশি তরুণ-তরুণী। ঘর বেধেছেন পছন্দের মানুষটির সঙ্গে। এদের মধ্যে তিনজন তরুণও রয়েছেন যারা ছুটে বাংলাদেশে।

ভিনদেশি এসব তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মালয়েশিয়া থেকে তিনজন এসেছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্টের দুজন, নেপালের একজন, অস্ট্রেলিয়ার একজন, অস্ট্রিয়ার একজন, সৌদি আরবের একজন, ইন্দোনেশিয়ার একজন, ইতালির একজন, জার্মানির একজন ও ভারতের একজন রয়েছেন।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামের রেজাউল ইসলাম আকুঞ্জির ছেলে ইব্রাহিম হোসেন মুন্নার (২৫) সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় কলকাতার ব্যারাকপুরের তালপুকুর এলাকার মেয়ে বহ্নিশিখ ঘোষের (২৭)। চার বছর প্রেম চলে। কয়েক মাস আগে চলে আসেন সাতক্ষীরা। তারপর প্রেমিক মুন্নাকে বিয়ে করেন। স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তার নাম রাখা হয় ফারজানা ইয়াসমিন।

ফারজানা ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। নিজের চেয়ে কমবয়সী ছেলেকে বিয়ে করেও অনেক সুখে আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

জার্মানিতে একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে প্রায়ই দেখা ও কথা হতো শুভ ও আলিসার। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে জার্মানিতেই আলিসাকে বিয়ে করেন শুভ। পরে গত ৪ মার্চ নববধূকে নিয়ে দেশে আসেন।

শুভ বরিশালের চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের ছেলে। রেলওয়ে ডিপ্লোমা পাস করে ২০১১ সালে জার্মানিতে পাড়ি জমান। সেখানে সিটি রেলওয়ে সার্ভিসের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ নেন। একপর্যায়ে স্থানীয় বেইলি ফিল্ড ডায়ালন্ড্রোভ এলাকার বাসিন্দা আলিসা থেওডোরা পিত্তার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আলিসা পেশায় একজন নার্স। তার বাবা ও মা সেখানকার চাকরিজীবী।

প্রেমের টানে গত ২৯ মে প্রেমিকার নানা বাড়ি গাজীপুরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশৌরী অঙ্গরাজ্যের কানসাস সিটির নাগরিক রাইয়ান কফম্যান। সাইদা ইসলাম (২৬) নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। এরআগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিজের নাম রাখেন ‘রায়হান ইসলাম’।

সাইদা ইসলাম জানান, ২০২১ সালের এপ্রিলে ডেটিং অ্যাপে রাইয়ান কফম্যানের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় হয়। পরে তারা নিজেদের ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডি ও ঠিকানা বিনিময় করেন। এরপর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ হতো তাদের মধ্যে। ফেসবুক ও ফোন নম্বরে ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে দুজন সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার।

আট বছর আগে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান রাজশাহীর বিনোদপুর এলাকার জুলফিকার। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। সেখানে পরিচয় হয় স্যান্ডি (২০) নামের এক তরুণীর সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম। একপর্যায়ে জুলফিকার দেশে ফিরে এলেও যোগাযোগ বন্ধ থাকেনি।

স্যান্ডিও হারাতে চাননি জুলফিকারকে। মালয়েশিয়া থেকে উড়ে আসেন রাজশাহী। খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করেন। গত ১৪ জুলাই ধর্মীয় রীতি মেনে তাদের বিয়ে হয়।

স্যান্ডি (মুসলিম হওয়ার পর নাম আলিশা অ্যানি) মালয়েশিয়ার পাসপোর্ট অফিসে চাকরি করেন। জুলফিকার একজন ব্যবসায়ী।

১০ বছর ধরে মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে ব্যবসা করেন কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার শিলমুড়ি ইউনিয়নের দীঘলগাঁও গ্রামের সাইফুল ইসলাম। সেখানে পরিচয় হয় মালয় তরুণী নুর আজিমার সঙ্গে। তারা দুই বছর প্রেম করেন। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন সাইফুল-আজিমা।

ঈদুল আজহার তিনদিন পর বাংলাদেশে আসেন নুর আজিমা। তার সঙ্গে আসেন খালা ও খালাতো বোন। পরেরদিন তাদের বিয়ে হয়। বাংলাদেশেই থাকতে চান বলে জানিয়েছেন এ মালয় তরুণী।

প্রেমের টানে গত ৭ আগস্ট দিনাজপুর শহরের আব্দুল রাজ্জাকের মেয়ে রুম্পার কাছে ছুটে আসেন অস্ট্রিয়ান নাগরিক অ্যাড্রিয়ান বারিসো নিরা। ৯ আগস্ট রাতে দিনাজপুর শহরের একটি রেস্তোরাঁয় রুম্পাকে বিয়ে করেন তিনি।

পরিবার সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রুম্পার সঙ্গে দেখা হয় অ্যাড্রিয়ানের। পরে পরিচয় থেকে প্রেম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতে থাকে। তারা বিষয়টি তাদের পরিবারকে জানান। পরে দুই পরিবার কথাবার্তার মাধ্যমে ২০২০ সালে তাদের বিয়েতে সম্মত হয়। তবে করোনার কারণে বাংলাদেশে আসা হয়নি অ্যাড্রিয়ানের। শেষে আগস্ট বাংলাদেশে এসে রুম্পাকে বিয়ে করেন তিনি।

প্রেমে পড়ে ঠাকুরগাঁও এসেছেন আলী সান্ড্রে চিয়ারোমিন্ডে নামের এক ইতালিয়ান যুবক। জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার অজোপাড়াগাঁ চাড়োলের খোকোবাড়ি গ্রামের মারকুস দাসের মেয়ে রত্না রানী দাস তার সেই মনের মানুষটি। গত ২৫ জুলাই রাতে সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দুজনে।

রত্নার বাবা মারকুস দাস জানান, তার এক ভাই ইতালি থাকেন। তার মাধ্যমেই সান্ড্রের সঙ্গে পরিচয় হয় রত্না রানীর। তারপর মোবাইলে তাদের কথাবার্তা হয়। ২৫ জুলাই বাংলাদেশে আসেন সান্ড্রে। পরেরদিন ধুমধাম করে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়।

১০ বছর আগে মালয়েশিয়া যান গাজীপুর মহানগরের জোলারপর এলাকার যুবক জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে লিঙ্কন ইউনিভার্সিটিতে মেইন্টেইনেন্স বিভাগে চাকরি পান। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিলর নুর কারমিলা বিনতে হামিদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে দুজনে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

করোনা মহামারির আগে দেশে ফিরে আসেন জাহাঙ্গীর। পরে করোনা জটিলতায় আর মালয়েশিয়া যাওয়া হয়নি। তবে দুজনের মধ্যে যোগাযোগ কিন্তু বন্ধ থাকেনি।

গত ১৭ জুলাই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চলে আসে প্রেমিকা নূর কারমিলা। পরে সেখান থেকে তাকে গাজীপুরের জোলারপাড় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান জাহাঙ্গীর আলম।

দুই পরিবারের সম্মতিতে ২১ জুলাই গায়েহলুদ এবং পরদিন স্থানীয় মসজিদে কাজির মাধ্যমে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।

প্রায় চার বছর আগে ফেসবুকে ইন্দোনেশিয়ার তরুণী ফানিয়া আইয়প্রেনিয়ার (২৮) সঙ্গে পরিচয় হয় লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার রাসেল আহমেদের (৩০)। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। গত ৭ মার্চ বাংলাদেশে চলে আসেন ফানিয়া। পরেরদিন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা।

ফানিয়া ইন্দোনেশিয়ার দিপক এলাকার বাসিন্দা। তিনি সেখানকার একটি কল সেন্টারে চাকরি করেন। রাসেল আহমেদ লক্ষ্মীপুরের রাখালিয়া গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন পোশাক ব্যবসায়ী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক যুবকের প্রেমে পড়ে বাংলাদেশে ছুটে আসেন হালিমা (৩৬) নামের এক সৌদি নারী। গত ২৯ জুলাই রাত ২৩টা ৪৫ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইনসে করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।

সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই যুবকের নাম ইসাক মিয়া (২৮)। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার থোল্লাকান্দি গ্রামে। তার বাবা মৃত আব্দুর রহমান।

২০১৭ সালে সৌদির জিজান শহরের বোফিয়া নামের একটি ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করতেন ইসাক। সেখানে কাজ করার সুবাদে হালিমার সঙ্গে তার পরিচয় ও পরে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।

হালিমার দুই ভাই পুলিশে কর্মরত। তিনি তার পরিবারের সম্মতিতে বাংলাদেশে আসেন। হালিমাকে রিসিভ করতে বিমানবন্দরে আসেন ইসাক মিয়া এবং তার মা নাজমা বেগম।

ফেসবুকে সুনামগঞ্জের ছাতক থানার খামারগাঁও এলাকার যুবক সাদিক মিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় অস্ট্রেলিয়ান তরুণী আরিয়া ভংগাসাকদার। পরিচয় থেকে প্রেম। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন আরিয়া। ওই বছরের ১০ অক্টোবর ঘরোয়া পরিবেশে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।

নিজের নাম পরিবর্তন করে ‘সীমা বেগম’ নাম ধারণ করেন আরিয়া। পরবর্তী সময়ে সীমা অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেলেও করোনা মহামারির কারণে আর বাংলাদেশে ফিরতে পারেননি। তাই সম্পন্ন হয়নি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় গত ১ জুন বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর বাধেন সীমা-সাদিক।

সিঙ্গাপুরে চাকরির সুবাদে ময়মনসিংহের ছেলে পলাশ পালের সঙ্গে পরিচয় হয় নেপালি তরুণী অনুদেবী ভুজেলের। পরে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। আড়াই বছর প্রেম করার পর দুজনে সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার।

এ সিদ্ধান্তে বাঁধ সাধে কনের পরিবার। ভিনদেশি ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাননি তারা। তবে পরিবার না চাইলে কী হবে! অনুদেবী ঠিকই চাচ্ছিলেন পলাশ পালকে।

গত ৭ মার্চ নেপালিকন্যা অনুদেবী চলে আসেন বাংলাদেশে। পলাশের বড় বোন চিত্রনায়িকা জ্যোতিকা জ্যোতি ঢাকায় তাদের বিয়ের আয়োজন করেন। জমকালো আয়োজনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

১২ মার্চ ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সহনাটি ইউনিয়নের হতিহর গ্রামে বরের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় বৌভাত।

তবে আবেগের বশবর্তী হয়েই প্রেমের টানে তরুণ-তরুণীরা বাংলাদেশে আসছেন মনে করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিচালক ও বিশ্ব মনোবিজ্ঞান সমিতির সদস্য ড. আনওয়ারুল হাসান সুফি।

তিনি বলেন, ‘যারা ফেসবুকে পরিচিত হয়ে আবেগের বশে এ কাজগুলো করছেন তাদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত নয়। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে এমন কাজ খুবই কম দেখা যাচ্ছে। আবেগের বশে সম্পর্কে জড়ানোর ফলে তাদের প্রেমের সম্পর্কগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয় না। উচ্চশিক্ষিতদের ক্ষেত্রে কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হলেও বেশিরভাগ সম্পর্কই ভেঙে যায়। যার প্রভাব তাদের ছেলেমেয়েদের ওপর পড়ছে।’


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ