1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রতি কেজি ৩ টাকা চুক্তিতে ৫০০-৭৫০ টাকা আয় উত্তরাঞ্চলের চা শ্রমিকদের

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২

চা চাষ প্রকল্পের আওতায় বাগান এবং কারখানায় কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে উত্তরাঞ্চলের চা শ্রমিকদের। এখানকার শ্রমিকরা হাতের বদলে কাস্তে দিয়ে পাতা কাটেন। ফলে ছয়-সাত ঘণ্টায় ১৮০-২৫০ কেজি চা সংগ্রহ করেন তারা। এতে কেজি প্রতি তিন টাকা চুক্তিতে ৫০০-৭৫০ টাকা আয় হয় তাদের। বাকি সময় অন্য কাজও করেন অনেকে। আবার যারা ধান চাষের সঙ্গে যুক্ত তারা মৌসুম শেষে চা শ্রমিকের কাজ করেন।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উত্তরের পাঁচ জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও দিনাজপুরে চা চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ৯ হাজার ৭৪৭ দশমিক ৮০ একর, ঠাকুরগাঁওয়ে এক হাজার ৩৭০ দশমিক ৩০ একর, লালমনিরহাটে ১৬৮ দশমিক ৮৮ একর, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৩৭ একর এবং নীলফামারী জেলায় ৬৮ দশমিক ৫৯ একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এসব এলাকার সমতল জমিতে চা চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় এ পাঁচ জেলায় এ পর্যন্ত ৯টি নিবন্ধিত ও ২১টি অনিবন্ধিত বৃহদায়তন এবং এক হাজার ৭৪৫টি নিবন্ধিত ও ৬ হাজার ৩২২টি অনিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তন পর্যায়ে চা বাগান গড়ে উঠেছে। এর বাইরে এক হাজার ২৬৩ দশমিক ৩৭ একর জমিতে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ চলছে। এসব চা বাগান এবং কারখানায় প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেন।

২০০৫ সালে মাত্র দুটি চা কারখানায় ১ লাখ ৬০ হাজার কেজি তৈরিকৃত চা উৎপাদন হয়। আর ২০২১ সালের ২১টি চা কারখানায় ১ কোটি ৪৫ লাখ কেজি চা উৎপাদনের রেকর্ড করে। বর্তমানে জেলায় ২২টি কারখানায় চা উৎপাদন হচ্ছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আরও কয়েকটি কারখানা চা উৎপাদন করবে।

তৈরিকৃত চা উৎপাদনে চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পায় উত্তরাঞ্চল চা চাষ প্রকল্প। চলতি চা উৎপাদন মৌসুমে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়েছে। এবার গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় ৩৫ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা স্থানীয় চা বোর্ডের।

উপজেলা সদরসহ তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকরা সারিবদ্ধভাবে কাস্তে দিয়ে চা পাতা কাটছেন। এসব চা শ্রমিক সকাল ৬টা থেকেই কাজে যোগ দিয়েছেন। দুপুর ১২টার আগেই তাদের পাতা তোলার কাজ শেষ হয়ে যায়। দিনের মাত্র ছয়-সাত ঘণ্টা কাজ করেই একেক জন চা শ্রমিক ১৮০-২৫০ কেজি চা পাতা সংগ্রহ করতে পারেন।

উপজেলা সদরের অমরখানা এলাকার চা শ্রমিক আইজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিলেট চট্টগ্রামের মতো হাত দিয়ে চা পাতা তুলি না। এভাবে তুললে আমাদের পোষায় না। আমরা কাস্তে দিয়ে ৩ টাকা কেজি চুক্তিতে বাগান থেকে কাঁচা পাতা তুলি। প্রতিদিন সকাল ৬টায় কাজ শুরু করি। দুপুর ১২টার আগেই আমরা একেক জন শ্রমিক ২০০-২৫০ কেজি পাতা কাটতে পারি। তবে নারীরা ১৫০-১৮০ কেজি পর্যন্ত পাতা কাটতে পারে। সেই হিসাবে আমরা ৬০০-৭৫০ টাকা পেলেও নারীরা ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। তবে সবাই চাইলে দিনের বাকি সময় অন্য কাজও করতে পারি।’

তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার চা শ্রমিক করিমুল ইসলাম বলেন, ‘আগে পাথর তোলার কাজ করতাম। কিন্তু নদীতে ড্রেজার দিয়ে এবং সমতল জমি খনন করে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমরা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এলাকায় পাথরের জমিতে ব্যাপকভাবে চা চাষ হওয়ায় সবাই এখন চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। চা বাগানে আমরা চুক্তিভিত্তিক কাঁচা পাতা তুলি। প্রতিদিন যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে, ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাই। চা বাগানে কাজ করে আমাদের অভাব দূর হয়েছে। আমরা ভালো আছি।’

উপজেলা সদরের ধাক্কামারা এলাকার ক্ষুদ্র চা চাষি ও হুমায়রা চা বাগানের স্বত্বাধিকারী এসএম হাসিবুল করিম বলেন, ‘আমার বাগানে তিন টাকা কেজি চুক্তিতে চা শ্রমিকরা পাতা উত্তোলন করেন। একজন শ্রমিক প্রতিদিন ২০০ কেজির বেশি চা পাতা কাটতে পারেন। সেই হিসাবে তাদের ৫০০-৭৫০ টাকা মজুরি দিতে হয়। এরপরও স্থানীয় শ্রমিকদের চাহিদা আরও বেশি। তারা আমাদের লাভ লোকসান দেখেন না।’

শ্রমিকদের সচ্ছলতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে শ্রমিকের মূল্য এমনিতেই বেশি। আমরা এর কম দিতে চাইলে শ্রমিক পাওয়া যায় না। বাগান করে ক্ষুদ্র চা বাগান মালিকদের চেয়ে এখানকার শ্রমিকরাই বেশি লাভবান হয়েছেন।’

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উত্তরাঞ্চল চা চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, প্রকল্পের আওতায় দিনদিন চা চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক চা বাগান এবং কারখানায় কাজ করেন। এখানকার চা শ্রমিকদের জীবনমান বেশ উন্নত। এখানে সিলেট বা চট্টগ্রামের চা শ্রমিকদের মতো রেজিস্টার্ড কোনো শ্রমিক সংগঠন নেই। তারা বাগান মালিকদের সঙ্গে তিন টাকা কেজি চুক্তিতে চা পাতা উত্তোলন করেন।

তিনি আরও বলেন, পুরুষরা দৈনিক ৬০০-৭৫০ টাকা আয় করলেও নারীরা ৫০০ টাকার মতো পান। বাগান মালিকদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কাজ করে এখানকার শ্রমিকদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে, জীবনমান উন্নত হয়েছে এবং তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ