1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দেশের গন্ডি পেরিয়ে সিরাজগঞ্জের ঘোল যাচ্ছে বিদেশে

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩

সিরাজগঞ্জের সলপের ঘোল এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। দেশি পানীয় হিসেবে ঘোল বা মাঠার কোনো তুলনা নেই। বাঙালির কাছে এখনো এর ব্যাপক চাহিদা। ইতোমধ্যে দেশজুড়ে সিরাজগঞ্জের সলপের ঘোলের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ ছাড়াও সলপের ঘোলের চাহিদা তৈরি হয়েছে সারা দেশে। প্রতি দিন আড়াইশ থেকে তিনশ মণ সলপের ঘোল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। রোজার মাসে এর চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। তখন প্রতিদিনের চাহিদা ৫শ মণ ছাড়িয়ে যায় বলে জানান এখানকার ঘোল উৎপাদনকারীরা। স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা দুধ দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় সুস্বাদু ঘোল ও মাঠা। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ রেলস্টেশন এলাকায় তৈরি এই ঘোল খ্যাতি পেয়েছে ‘সলপের ঘোল’ হিসেবে, যা প্রতি কেজি ঘোল এখন ৮০ টাকা এবং মাঠা ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।

জানা যায়, ১৯১৫-১৬ সালে সলপ স্টেশন নির্মিত হয়। তৎকালীন জমিদার সলপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র নাথ দাসগুপ্ত ও তার ভাই অ্যাড. সচিন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত পাশের দমদমা গ্রাম থেকে সাদেক আলী খানকে এনে স্টেশনের পাশে ঘোলের ব্যবসা শুরু করান। সাদেক খানের ঘোল চলে যেত কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায়। ট্রেন যোগাযোগ ভালো থাকায় এখানে উৎপাদিত ঘোল সহজেই বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো যেত। সাদেক খানের মৃত্যুর পর তার পরবর্তী বংশধরেরা আজও এই ব্যাবসা ধরে রেখেছেন। এখনো সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছেন তারা।

সলপ স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি না থাকায় উৎপাদিত ঘোল বাজারজাত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই স্টেশনে সকালে মাত্র একটি লোকাল ট্রেন সকালে ও সন্ধ্যায় যাত্রাবিরতি দেয়। এতে ঘোল বাজারজাত করতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা ছামাদ ফকির (৬৫) জানান, শত বছর আগে সলপ এলাকার দমদমা গ্রামের সাদেক আলী কাজের খোঁজে রাজশাহী যান। সেখানে এক ঘোষের কাছ থেকে ঘোল ও মাঠা বানানো শিখে আসেন। ১৯২২ সালে সলপ রেলস্টেশন এলাকায় তৎকালীন জমিদারের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যবসা শুরু করেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ ও পঞ্চক্রোশী উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুজ্জামান বলেন, ব্রিটিশ আমলে তৎকালীন জমিদারের উৎসাহে সাদেক খান ঘোলের ব্যবসা শুরু করেন। সাদেক আলীর মৃত্যুর পর তার ছেলেরা এই ব্যবসার হাল ধরে আছেন। তাদের তৈরি ঘোলের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। দেখাদেখি আরো অনেকে এই ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হন। বর্তমানে ১০-১২টি কারখানায় ঘোল, মাঠা, ঘি তৈরি হচ্ছে।

ঘোল ব্যবসায়ী আবদুল মালেক খান বলেন, ঘোল ও মাঠার ব্যবসা কেবল অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়, এটি এখন এই অঞ্চলের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন তার কারখানায়ই ৪০/৫০ মণ ঘোল তৈরি হয়। সব কারখানা মিলে ৩শ মণ দুধ নেওয়া হয়। রোজার মধ্যে আরো বেশি দুধ নেওয়া হয়। সে সময় ৫শ মণের বেশি ঘোল মাঠা উৎপাদন ও বিক্রি হয়। তিনি জানান, তার ঘোল কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছেন। এই ব্যবসাকে আরো প্রসারিত করতে তিনি সলপ স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি ও স্থানীয় সড়কগুলোর উন্নয়নের দাবি জানান। সরকারি সহযোগিতা পেলে এই ব্যবসা আরো প্রসারিত হবে বলেও তিনি আশা করেন।

সলপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন জানান, সলপের ঘোলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছর এখানে মেলার আয়োজন করা হয়। সলপের ঘোলের স্বাদ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ঘোল ব্যবসায়ীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার দাবিও জানান তিনি।

 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ