1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ইভ্যালিসহ ৫ ই-কমার্সের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

কয়েক লাখ গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার প্রমাণ পেয়ে ইভ্যালিসহ পাঁচটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশন। বাকি চারটি প্রতিষ্ঠান হলো আলেশা মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম, ধামাকা শপিং ডটকম এবং কিউকম ডটকম। একই সঙ্গে অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে আরও ৮টি প্রতিষ্ঠান। প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলে এসব প্রতিষ্ঠানকেও মামলা ফেস করতে হবে। সূত্র বলছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন অনেকটা হার্ডলাইনে। কেননা এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে দেশের লাখ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও বেহাত হয়ে যাওয়া কয়েক হাজার কোটি টাকা আদায় করা একরকম অনিশ্চিত।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মজিবুল ইসলাম বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, চাইলেও একটি পণ্য অন্যান্য কোম্পানির উৎপাদিত একই পণ্যের দামের তুলনায় অনেক কমে বিক্রি করতে পারবে না। বাজারের পণ্য নিয়ে এ ধরনের আচারণে প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট হবে।’ তিনি জানান, ‘এভাবে বাজার প্রতিযোগিতা নষ্ট করায় পাঁচটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’

সূত্র জানায়, প্রতিযোগিতা কমিশন আইন অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধে কমিশন নিজ দপ্তরে মামলা করতে পারে। অনুসন্ধান শেষে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রতিযোগিতা কমিশন গত জুলাইয়ে প্রথম মামলা করে ইভ্যালির বিরুদ্ধে। এরপর গত দুই মাসে পর্যায়ক্রমে আরও ৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

ই-কমার্স বাণিজ্য নিয়ে বিগত কয়েক বছরে নানামুখী প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এ প্রক্রিয়ায় ইভ্যালিসহ ১১টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কম মূল্যে পণ্য দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এসব টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। গ্রাহকের আস্থা অর্জনের জন্য প্রথমদিকে প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে কিছু পণ্য রিলিজ দিয়ে সাধারণ মানুষকে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো আকৃষ্ট করা হয়। একপর্যায়ে অগ্রিম পেপেন্টসহ হাজার হাজার পণ্যের অর্ডার নিয়ে তারা আর পণ্য সরবরাহ করেনি। এরপর শুরু হয় ব্যাপক জন-অসন্তোষ। একপর্যায়ে ইভ্যালিসহ এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।

মামলা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিশনের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় সরেজমিন গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো গ্রাহক প্রতিযোগিতা কমিশনে অভিযোগ করেনি। কিন্তু কমিশনের আইনে আছে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অভিযোগ দায়ের না করলেও কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করতে পারবে। সে ক্ষমতাবলে কমিশন এ উদ্যোগ নিয়েছে।

জানা যায়, মামলার পর প্রতিষ্ঠানকে শুনানির জন্য ডাকা হচ্ছে কমিশনে। এরই মধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠানের শুনানি হয়েছে। শুনানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আইনে গঠিত আদালতের মাধ্যমে। কমিশন আদালতে চূড়ান্তভাবে অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভারের ১ থেকে ১০ শতাংশ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার যদি এক হাজার কোটি টাকা হয়, সেক্ষেত্রে ১০ শতাংশ অর্থদণ্ডের টাকার অঙ্ক হবে ১০০ কোটি টাকা।

জানা যায়, বিচারাধীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছ থেকে ই-ভ্যালি ১ হাজার কোটি টাকা এবং ৮০৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ধামাকা। কম মূল্যে মোটরসাইকেল দেওয়ার নাম করে ৬৫৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আলেশা মার্ট। এছাড়া সিরাজগঞ্জ শপের বিরুদ্ধে ৪৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর কিউকম ডটকম নিয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।

এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ গ্রাহক রয়েছে। তারা এখনো কোনো অর্থ ফেরত পায়নি। আলেশা মার্টের প্রতারণার শিকার গ্রাহকের মধ্যে জনৈক মিরাজ জানান, দেড় লাখ টাকা জমা দিয়েছেন মোটরসাইকেলের জন্য। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো টাকা ফেরত পাননি। টাকা জমা নিয়ে শুধু একটি চেক দিয়েছে। তিনি এখন আদৌ টাকা ফেরত পাবেন কি না, সেটিও অনিশ্চত। কিছু বলতে পারছে না এবং কার কাছে অভিযোগ করবেন, সেটিও বুঝতে পারছে না। মিরাজের মতো এমন হাজার হাজার গ্রাহক টাকা না পেয়ে ঘুরছেন।

সূত্র জানায়, প্রতারণার অভিযোগে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন নিজস্ব উদ্যোগে সাতটি ই-কমার্সের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। সেগুলো হচ্ছে-আনন্দবাজার, আলাদিন প্রদীপ, ফালগুনি ডটকম, ই-অরেঞ্জ, আদিয়ার্ন মাট, দালাল প্লাস ও টুয়েন্টিফোর টাকা ডটকম। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণাসংক্রান্ত অপরাধ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-কমার্স সেল সূত্রে জানা যায়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে প্রতারণার ভিন্ন কৌশল নিয়েছে প্রতারকরা। বিশেষ করে ই-কমার্স বাণিজ্য ছাড়া অনলাইনে জুয়া এবং এমএলএম ব্যবসা শুরু করেছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে ১০০টি অনলাইন সাইটের তালিকা পাঠানো হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। এসব তালিকা যাচাই-বাছাই করে বিটিআরসির কাছে পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, মাত্র ৬টি সাইট বন্ধ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গ্রাহকের টাকা ফেরত না দেওয়ায় আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে গত বছর সেপ্টেম্বরে দুটি মামলা করে দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ড রঙ বাংলাদেশ। গিফট ভাউচার বিক্রি বাবদ ইভ্যালির চেক প্রত্যাখ্যান হওয়ার অভিযোগে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলকে আসামি করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা করা হয়। সিএমএম আদালতে ১৮৮১ সালের দি নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ও ১৪০ ধারায় মামলাটি হয়েছে। আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করে দুই আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। এরপর তাদের গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রাহকরা পাওনা ফেরত না পাওয়া এবং প্রতারণার দায়ে একাধিক মামলা করেছে ইভ্যালির বিরুদ্ধে। ৬ মাস কারাভোগের পর জামিন পান ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তার স্বামী মোহাম্মদ রাসেল এখনো কারাগারে আছেন। ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা প্রায় ৩০টি।

এদিকে একাধিকবার সময় নেওয়ার পরও ক্রেতাদের সমস্যার সমাধান করেনি ইভ্যালি। এছাড়া ই-ক্যাবের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য প্রদান করেনি এবং ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা-২০২১ পরিপূর্ণভাবে পালনও করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এসব অভিযোগে ইভ্যালির সদস্যপদ স্থগিত করেছে ই-ক্যাব।

এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ, অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের বিরুদ্ধে পাঁচটির বেশি মামলা হয়েছে। এসবের মধ্যে রাজধানীর লালবাগ থানার একটি এবং গুলশান থানার দুটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। এসব মামলায় কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিপন মিয়া এবং কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন অফিসার (হেড অব সেলস) হুমায়ুন কবির (আরজে নিরব) বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে ছিলেন। দীর্ঘ পাঁচ মাস জেল খেটে চলতি বছরের ৭ মার্চ কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিপন মিয়া জামিন পান। বর্তমানে তারা দুজনে জামিনে মুক্ত। ইতোমধ্যে মামলাগুলোর চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাজারমূল্যের চেয়ে কমে পণ্য দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের ধোঁকা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। কিউকম লক্ষাধিক পণ্য অনলাইনে বিক্রি করত। ক্রেতা আকৃষ্ট করতে তারা ‘বিজয় আওয়ার’, ‘স্বাধীনতা আওয়ার’ ও ‘বিগ বিলিয়ন’ নামে ২ থেকে ১৫ দিন সময় দিয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকার মোটরসাইকেল ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রির প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেন ক্রেতারা।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ