1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

এয়ারবাস কেনার প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা

নাজিব হায়দার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ফরাসি প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কিনবে বাংলাদেশ বিমান। গত মে মাসে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এগুলো কেনা হবে, যার মধ্যে আগামী জুলাইতে দুটি দেশে আসবে।

বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত ১১ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এয়ারবাস কোম্পানির তৈরি ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। ইউরোপীয় উড়োজাহাজ শিল্পে আস্থা রাখার জন্য আমি আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) ধন্যবাদ জানাই। ১০টি এয়ারবাস এ-৩৫০ কেনার এ প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ৷’

বর্তমানে বিমান বহরে ২১টি উড়োজাহাজ আছে৷ এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭, ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ ৮ মডেলের । ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত বিমান বছরের পর বছর ধরে লোকসান দিয়ে আসছিল। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিবছরই বিমানের মুনাফার পরিমাণ বাড়ছে। যেখানে বিমানকে ২০১১-২০১২ অর্থবছরে ৫৯৪.২১ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে, সেখানে এর ঠিক ১০ বছর পর ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে বিমান বাংলাদেশ ৪৩৯.৭৮ কোটি টাকা লাভ করেছে।

বাংলাদেশের জনগণের কাছে এখন পর্যন্ত বিমানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, যেমন: সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান এবং মালয়েশিয়াও  সিঙ্গাপুরের মতো প্রধান এশীয় দেশগুলোতে ভ্রমণ করা। যাইহোক, দ্রুত বিশ্বায়ন এবং বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য এবং অপ্রচলিত বাজারে পণ্য ও পরিষেবার রপ্তানি বহুমুখী করার লক্ষ্যে বিমানের জন্য আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। এগুলো হলো:

উত্তর আমেরিকায় যাত্রী বহন করা

গত ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া শিক্ষার্থীর হার বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। ২০১৬-’১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর দেশ ছিল বাংলাদেশ।গত এক দশকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে, যা ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে ৩,৩১৪ থেকে বেড়ে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ১০,৫৯৭ দাঁড়িয়েছে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, গত ৫ বছরে কানাডা এবং যুক্তরাজ্যে ভ্রমণকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

শুধু শিক্ষার্থীই নয়, এসব দেশে অভিবাসী ও ভ্রমণকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বুকিং তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে  ১ লাখ ৫২ হাজারেরও বেশি যাত্রী নিউইয়র্ক-ঢাকায় যাতায়াত করেছেন। তাই, বিমানের এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমনকি ক্যালিফোর্নিয়ার মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দূরবর্তী অংশেও তার কার্যক্রম সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। উত্তর আমেরিকায় ফ্লাইট উড়ানোর সামর্থ্য থাকলে বাংলাদেশ বিদেশি এয়ারলাইন্সকে ডলার দিতে হবে না।
মালামাল বহন করা

বাংলাদেশের প্রধান রফতানিমুখী পণ্য, যেমন: তৈরি পোশাক, পাট, মাছ, চামড়া ইত্যাদিকে তাদের রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে এবং বৃহত্তর বৈশ্বিক বাজারের শেয়ার দখলের জন্য অপ্রচলিত বাজারের সন্ধান করতে হবে। বর্তমানে, বাংলাদেশের আরএমজি রফতানির সিংহভাগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ( ২০২২ সালে ১০ বিলিয়ন অতিক্রম করেছে ) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যায়। এ ধরনের বাণিজ্য লাভের জন্য, বাংলাদেশের নিজস্ব মালবাহী বিমান থাকা দরকার, যাতে বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরিবহন খরচ কমাতে পারে।

বিমানের কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য বোয়িং ৭৮৭ বা এয়ারবাস এ-৩৫০-এর মতো আরও আধুনিক দূরপাল্লার বিমানের প্রয়োজন। মার্কিন রুটে সম্প্রসারণের জন্য নিশ্চিতভাবে আরও উড়োজাহাজ প্রয়োজন, যদিও একটি কম ফ্রিকোয়েন্সি অপারেশন, অর্থাৎ সপ্তাহে একবার বিদ্যমান নৌবহরের সাথে এখনও কার্যকর হতে পারে। কিন্তু এটি বাণিজ্যিক লাভজনকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। অন্যদিকে পণ্য পরিবহনের জন্য বিমানের কোনো মালবাহী বিমান নেই। অপ্রচলিত রফতানি গন্তব্যে রফতানি করতে এবং বাজারের শেয়ার বাড়াতে বাংলাদেশকেও মালবাহী বিমান সংগ্রহ করতে হবে।

চলতি বছরের মে মাসে বোয়িং ১০টি বোয়িং ৭৮৭-১০ বিমানের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ১০টি এয়ারবাস এ-৩৫০ ওয়াইড বডি এয়ারক্রাফ্ট অর্ডার করেছে, যার মধ্যে দুটি এ-৩৫০এফ মালবাহী বিমান রয়েছে। বোয়িংয়ের চেয়ে এয়ারবাসের সক্ষমতা কয়েক গুণ বেশি। এয়ারবাস এ-৩৫০-১০০০ প্রশস্ততার কারণে এর আসন সংখ্যা অনেক বেশি। এ ৭৮৭-১০-এ ৪৪০ যাত্রী বসতে পারেন, সেখানে এ-৩৫০-এ আরও ৪০টি বেশি আসন রয়েছে। এ-৩৫০-১০০০ জ্বালানি ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে, এ-৩৫০-১০০০-এর  ১,৫৮,৭৯১ লিটার জ্বালানি বহন করার ক্ষমতা রয়েছে, যা ৭৮৭-১০-এর চেয়ে বেশি। কারণ ৭৮৭-১০-এর জ্বালানি ১,২৬,৩৭২ লিটার। অন্যদিকে ৭৮৭-১০ রেঞ্জ ১১,৯১০ কিলোমিটার; কিন্তু এয়ারবাসের রেঞ্জ ১৫,৬০০ কিলোমিটার। যার ফলে এটি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারে। এ-৩৫০-১০০০ আইবিএফ ৯৭,০০০, অন্যদিকে ৭৮৭-১০-এর আইবিএফ ৭৬,০০০ উচ্চতর থ্রাস্ট রয়েছে, যার ফলে এয়ারবাস ২০০ মিটার ছোট রানওয়ে থেকেও উড্ডয়ন করতে পারে।

এছাড়াও এয়ারবাস এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটির (বিএসএমআরএএউ) সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এ স্মারক অনুসারে বিএসএমআরএইউ তাদের পাঠ্যক্রম, উপকরণ এবং পাঠ্যক্রম ডিজাইন করতে এবং পাইলট ও প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণের জন্য এয়ারবাসের প্রশিক্ষকদের দ্বারা বছরের একটি সময়ে ক্লাসরুম কোর্স পরিচালনা করতে রাজি হয়েছে। অন্যদিকে, এয়ারবাস এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এবং এয়ারপোর্ট অপারেশনে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা করেছে।

যদি এয়ারবাস চুক্তিটি এ-৩৫০-১০০০ ভেরিয়েন্টের জন্য হয়, তবে তা বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে। ঢাকা থেকে মার্কিন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশে এখন যে বিমান আছে, তার থেকে অনেক বেশি রেঞ্জের বিমান প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনীয়তা পূরণে এ-৩৫০-১০০০ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও বড় দরজার কারণে এয়ারবাসে করে সহজেই মালমাল পরিবহন করা যাবে। এছাড়াও বাংলাদেশের জনশক্তিকে প্রশিক্ষণ দেয়া এটি বাংলাদেশেরে জন্য একটি বিশাল অর্জন।

লেখক:  নাজিব হায়দার – দ্য কনফ্লুয়েন্সের ব্লগ ম্যানেজার।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ