1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ডেঙ্গু ভয়ংকর রূপ, সচেতনতা জরুরি

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

ডেঙ্গু ভাইরাস-সৃষ্ট মশাবাহিত রোগ। প্রতিবছর বিশ্বের ১০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন মানুষ মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই বাড়তে থাকে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এতে মারাও যাচ্ছেন অনেকে। গত কয়েক বছরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা কিন্তু মোটেও কম নয়।

মশাগুলো সাধারণত দিনের বেলায় মানুষকে কামড়ায়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত মশার রক্তপানের মোক্ষম সময়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রমণে তেমন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। প্রতি চারজনের মধ্যে বলা যায়, একজনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। কারও দেখা দেয় মৃদু, আবার কারও মধ্যে দেখা দেয় ভয়ানক লক্ষণ। মৃদু লক্ষণগুলো অন্য সাধারণ ভাইরাসজনিত রোগের মতোই।

ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ

ডেঙ্গুর সচরাচর যেসব লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো হলো জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখে, বিশেষ করে চোখের পেছনের দিকে ব্যথা, মাংসপেশি, হাড় ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা। কোনো কোনো রোগীর ভাষ্য অনুযায়ী পেটানো ব্যথা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এ রোগের নাম ব্রেক-বোন ফিভার, অর্থাৎ হাড়ভাঙা জ্বর। চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ, ক্ষুধামন্দা, বমি, পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা, প্রচণ্ড দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণও প্রকাশ পায় ডেঙ্গু আক্রমণে। জ্বর, মাথাব্যথা ও চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ—এ তিনটি একসঙ্গে বলা হয় ডেঙ্গুর উপসর্গত্রয়ী। বলা যায়, ডেঙ্গুজ্বরের প্রধান তিন উপসর্গ। এসব উপসর্গ সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। ১ সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

ডেঙ্গুর ভয়ানক বিপদ চিহ্ন

কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভয়ানক কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় ডেঙ্গুর আক্রমণে। যেগুলো তীব্রমাত্রার ডেঙ্গু নির্দেশ করে সেগুলো হলো পেটে ব্যথা, দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া, নাক কিংবা দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড দুর্বলতা, অস্থিরতা, খিটখিটে ভাব, হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন, তাপমাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন, অনেক তাপমাত্রা থেকে হঠাৎ, এমনকি স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়া, বিগত ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার প্রস্রাবে পরিমাণ কমে যাওয়া, রক্তের হেমাটোক্রিট ২০ শতাংশ কমে যাওয়া, রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা অত্যন্ত নিচে নেমে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

ডেঙ্গুতে অনুচক্রিকা কমে যায়

ডেঙ্গুজ্বরে প্রায় সবারই রক্তের অনুচক্রিকা সামান্য কমে যায়। কারও কারও অনুচক্রিকা বিপদজনকভাবে কমে যায়। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ রোগে রক্তের কণিকা হু-হু করে কমে যেতে পারে। সাধারণত জ্বর চলে যাওয়ার পর এমনটি হয়। বলা যায়, জ্বর কমতে থাকে, সঙ্গে সঙ্গে কমে যেতে থাকে অনুচক্রিকাও। অনুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে সেই স্থানে দল বেঁধে ছুটে আসে এগুলো। দেহের আরও অনেক উপাদানের সাহায্য নিয়ে এ অনুচক্রিকা দ্রুতগতিতে রক্তনালি আটকে দেয়। ডেঙ্গু বা অন্য কোনো কারণে অনুচক্রিকা কমে গেলে সৃষ্টি হতে পারে রক্তক্ষরণ। চামড়ার নিচে, দাঁতের মাড়ি, নাক থেকে ঝরতে থাকে রক্ত। অনেক ক্ষেত্রে বমি, প্রস্রাব, পায়খানার সঙ্গে বেরোয় রক্ত। নারীদের রজস্রাবের রক্তক্ষরণ বেড়ে যায়। এমনকি মস্তিষ্কেও শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ। রক্তে অনুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ঘন মিলিমিটারে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। সাধারণত চতুর্থ দিন থেকে দ্রুত কমতে থাকে এ রক্তকণিকা বা প্লাটিলেট।

তীব্র ডেঙ্গু হলে হাসপাতাল

তীব্র ধরনের ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পেলে বাসায় চিকিৎসা করার সুযোগ নেই। মনে রাখবেন, তীব্র ডেঙ্গু এক ধরনের মেডিকেল ইমার্জেন্সি। এসব রোগীর হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা নিতে হবে। গড়ে প্রতি ২০ জনে একজন তীব্র ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। তীব্র ডেঙ্গুতে রক্তচাপ কমে রোগী শকে চলে যেতে পারেন। এমনকি ভয়ানক ডেঙ্গুর আক্রমণে অসংখ্য অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ থেকে শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ। যাদের আগে একবার ডেঙ্গু হয়েছে, তাদের দ্বিতীয় আক্রমণে তীব্র ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

অনুচক্রিকা কমলে করণীয়

রক্তের অনুচক্রিকা কমতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এক লাখের নিচে নেমে গেলে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এ সংখ্যা ৫০ হাজারের নিচে নেমে গেলে ক্ষেত্রবিশেষে দিনে দুবার রক্ত পরীক্ষা করে জেনে নিতে হবে অনুচক্রিকা ও হেমাটোক্রিটের মাত্রা। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুতে কখনো কখনো সকাল-বিকাল অনুচক্রিকার মাত্রায় ব্যাপক তারতম্য হয়ে থাকে। এ সময় শুরু হতে পারে পানিশূন্যতা। এটি যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পানীয়, শরবত, স্যালাইন ও পানি পান করাতে হবে। প্রয়োজনে স্যালাইন দিতে হবে। ডেঙ্গু চিকিৎসার অন্যতম প্রধান দিক হলো- ফ্লুইড থেরাপি বা পানি চিকিৎসা। রক্তের অনুচক্রিকা ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে কিংবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে রক্ত প্রদান করতে হয়। রক্তের অনুচক্রিকা বৃদ্ধির জন্য পেঁপে, পেপে পাতার রস, দুধ, ডালিম ইত্যাদি খেতে হবে। পেঁপে পাতার রস অনুচক্রিকা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর- এটা কিন্তু আজ প্রমাণিত।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা

ডেঙ্গুর কোনো নির্ধারিত চিকিৎসা নেই। প্রকাশিত লক্ষণের চিকিৎসা করতে হবে রোগীদের। সেই জন্য কারও ডেঙ্গু হলে করণীয় হলো সম্পূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণ। শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম গ্রহণ করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। শরবত, ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ, স্যালাইন পানি ও বেশি বেশি পানীয় পান করতে হবে। জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে। অ্যাসপিরিন, আইবোপ্রোফেন কিংবা ব্যথা-বেদনানাশক বড়ি গ্রহণ করবেন না। এগুলো ডেঙ্গুর রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিকের এখানে কোনো ভূমিকা নেই।

ডেঙ্গু জ্বর চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর যদি শরীর আরও বেশি খারাপ হতে থাকে, তবে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। রক্ত পরীক্ষা করে অনুচক্রিকা এবং হেমাটোক্রিটের পরিমাণ জেনে নিতে হবে। রক্তের অনুচক্রিকা কমতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে রোগীকে।

যখন রক্ত দিতে হবে

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীকে রক্ত দিতে হবে কি না, তা নির্ভর করে চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের ওপর। কোনো কোনো চিকিৎসক অনুচক্রিকা ২০ হাজারের নিচে নেমে গেলে, আবার কেউ কেউ ১০ হাজার বা তার নিচে নেমে গেলে অনুচক্রিকা প্রদানের পরামর্শ বা সুপারিশ প্রদান করেন। তবে এই পরিমাণ ৫০ হাজারের নিচে নেমে গেলে সতর্কতার জন্য রক্তদাতা জোগান রাখা উত্তম। প্রয়োজনে রক্ত লাগলে যাতে দ্রুততার সঙ্গে তা প্রয়োগ করা যায়, সে ব্যবস্থাপনা থাকা জরুরি। অনেক ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু চিকিৎসায় সরাসরি অনুচক্রিকা প্রদান না করে রক্তের উপাদান বা প্লাজমা প্রদান করা হয়। এগুলোর সবই নির্ভর করে রোগীর অবস্থা এবং চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের ওপর।

প্রতিরোধ

ডেঙ্গু চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের দিকে নজর দিতে হবে বেশি। পরিবেশ রাখতে হবে মশকমুক্ত। মশার কামড় থেকে নিজেকে ও সমাজকে বাঁচাতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধের ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে কিন্তু তা সবার জন্য নয়। ডেঙ্গুর চারটি ধরন রয়েছে। এর যেকোনো একটিতে কেউ একবার আক্রান্ত হলে তিনিই শুধু ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। যারা ডেঙ্গুর কোনো একটি প্রজাতির মাধ্যমে আক্রান্ত হননি, তাদের এ ভ্যাকসিন প্রয়োগে ভয়ানক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। আর যারা ভ্যাকসিন নেবেন, তারা বাকি তিন ধরনের ডেঙ্গু থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

লেখক : লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ – মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ