1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শেখ হাসিনার যুগান্তকারী শিক্ষানীতি

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৩

দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের দায়িত্ব যখন নিলেন তখন উন্নয়নের একটি স্পর্শ বাংলাদেশ পেলো। কিন্তু ২০০১ সালে আবার পট পরিবর্তনের পর আবার সেই উন্নয়নের প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়লো এবং আমরা দেখেছি, ১৯৯৬ সালে তিনি সরকারের দায়িত্ব পাওয়ার পর কীভাবে সাধারণ মানুষের প্রয়োজন, চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলছিলেন। তৃণমূল পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক শুরু করলেন। মানুষকে তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ১৯৯৬ সালে বিএনপির সিটিসেল কোম্পানির ওপর যে একচেটিয়া মনোপলি ছিল তা তিনি ক্ষমতায় এসে মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দিলেন।

সিটিসেল কোম্পানি ছাড়া আরও যে কোম্পানি আছে, এয়ারটেল কোম্পানিসহ আরও অন্যান্য কোম্পানি প্রতিযোগিতার বাজারে নিয়ে আসলেন। সেই প্রতিযোগিতার কারণে এখন মোবাইল ফোন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে প্রায় ১৬ কোটির ওপর সিম কার্যকর আছে। গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এখন সাধারণ কৃষকরাও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলতে পারছেন, ভিডিও সংযোগ করতে পারছেন। এই যে তথ্য-প্রযুক্তির একটি বিরাট বিপ্লব ঘটে গেছে, সেটি আমাদের আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে অসাধারণ অবদান রেখেছে।

২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ম্যানুফেস্টু করছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যদি নির্বাচিত হয়ে আসি তাহলে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করবো।’ এবং ২০০৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সরকার প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ অব্যাহত রেখেছেন। মাঝখানে যেই বিরতি ছিল সেই বিরতির কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশের গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব হলো। কিন্তু তারপরও আমরা দেখতে পেলাম, ২০০৯ সাল থেকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলো। এর ফলাফলও আমরা দেখলাম, করোনার মহামারির সময় সারা দুনিয়ার সঙ্গে ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি আমরা। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাও ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে একেবারে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। ছেলেমেয়েরা স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে, বাড়িতে বসে ক্লাস করে তাদের লেখাপড়া সম্পন্ন করেছে। আজকে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের যে চিন্তা করছি এই স্মার্ট বাংলাদেশের ভিতটি রচনা করেছেন শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর। রাতারাতি কোনো কিছু করা সম্ভব হয় না।তবে আমরা দেখছি খুবই দ্রুততার সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ পার হয়ে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সেই উন্নয়নের মাঝে অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেটি পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল-সহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টগুলো দৃশ্যমান উন্নয়নগুলো এখন সরাসরি মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলছে। আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ এখন ঢাকা থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে তাদের গন্তব্য স্থলে পৌঁছে যাচ্ছে।

আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে অবকাঠমোগত যে উন্নয়ন হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা অনেক অনেক গুণে বৃদ্ধি পাওয়া এগুলো সবই আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রত্যক্ষ ফলাফল। কিন্তু তার সঙ্গে যেটি শেখ হাসিনার কৃতিত্ব সারা দুনিয়া যেটি স্বীকার করছে তাহলো তিনি জনসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ করে নারী উন্নয়ন, নারী শিক্ষা, নারী প্রগতি এবং নারী ক্ষমতায়ন এই ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন, সেটি অকল্পনীয়। বেগম রোকেয়ার অবরোধবাসিনী গ্রন্থটি পড়লে বোঝা যায় আজকে নারীরা কতোটা এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে এমন কোনো সেক্টর নেই যে সেক্টরে নারীদের উপস্থিতি আমরা পাই না। প্রতিটি সেক্টরে নারীরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে, যোগ্যতার সঙ্গে তাদের অবদান রেখে চলেছেন। নারীরা এখন অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এসএসসি, এইচএসসি-সহ বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষাগুলোতে আমরা এখন দেখি ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের উপস্থিতির পাশাপাশি ফলাফলের দিক থেকেও অনেক এগিয়ে থাকে। এসব কিছু যে সম্ভব হয়েছে তার পেছনের চিন্তাভাবনা বঙ্গবন্ধু যে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবেই বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের নানারকম সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন যাতে তারা লেখাপড়ায় এগিয়ে যেতে পারে। ১৯৭৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এই প্রজাতন্ত্রের কোনো শিক্ষানীতি ছিল না। একজন মানুষের চোখ না থাকলে যেমন অন্ধ ঠিক তেমনি এই দেশও দীর্ঘ সময় কোনো শিক্ষানীতি ছাড়া অন্ধের মতো এগিয়ে যাচ্ছিলো। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি আমরা লক্ষ্য করেছি। শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০১০ সালে এসে বাংলাদেশ একটি যুগোপোযোগী শিক্ষানীতি পেয়েছে। এবং সেই শিক্ষানীতিকে অনুসরণ করে আমরা এগিয়ে চলেছি। এর প্রত্যক্ষ ফলাফল আমাদের ছাত্রছাত্রী, আমাদের শিক্ষক সমাজ।

আমার মনে হয় নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার যে ভূমিকা তা আজ বিশ্ববাসী স্বীকৃতি দিয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা যেটি শেখ হাসিনা চালু করেছেন, সেটি ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এখন আবার নব উদ্যোগে সেগুলো চালু করা হয়েছে এবং কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা এখন এতোটাই স্বীকৃত যে জাতিসংঘও কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নামে স্বীকৃতি দিয়েছে। অনেক অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের জন্য তারা এটি প্রস্তাব করেছে। এতে বোঝা যায় বাংলাদেশের মডেল সারা বিশ্বে কতোটা স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের অষ্টম মহাসচিব বান কি মুন জাতিসংঘেই দাঁড়িয়ে বলেছিলেন শেখ হাসিনাকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য রোল মডেল হিসেবে তিনি দেখছেন এবং সত্যিই প্রতিবারই যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে যান তখন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ নেন এবং তারা বলেন, বাংলাদেশ যে এতো সীমাবদ্ধতার মাঝেও অপ্রতিহতের সঙ্গে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এর রহস্য কী। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিশ্ববাসীর মাঝে বিশ্ব রেকর্ড বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর আসে। জাতিসংঘের ৭৮ তম সাধারণ অধিবেশনে এক সাইডলাইনে শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের ৭৮ বছর হয়ে গেলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত জাতিসংঘে কোনো নারী মহাসচিব হননি। সারা বিশ্বের নারীদের অগ্রগতির পথে জাতিসংঘের নেতৃত্ব দেওয়া এবং জাতিসংঘে কোনো নারী মহাসচিব পায়নি। আমরা লক্ষ্য করছি তিনি এই বক্তব্য দেওয়ার পর জাতিসংঘ এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলো এখন চিন্তা ভাবনা করছে যে কীভাবে নারীদের মহাসচিবের পদে নিয়ে আসা যায়।

আমার মনে হয় সচেতনা তৈরি করার যে গুরুদায়িত্ব তা শেখ হাসিনা পালন করছেন। এতে সারা বিশ্বের মানুষ উপকৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের নারীরা সারা পৃথিবীর নারীদের তুলনায় অনেকে পিছিয়ে আছে। নারীদের যদি পুরুষদের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া না যায় তাহলে পৃথিবীর অর্ধেক জনশক্তিই পিছিয়ে থাকবে। এটি কখোনোই আমাদের কাম্য হতে পারে না। শেখ হাসিনা যে জায়গায় গুরুত্ব দিয়ে নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেটি শুধু বাংলাদেশে নয় আমরা আশা করি সারা পৃথিবীতে নারী শিক্ষা উন্নয়ন, নারী শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করবে। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে যে শেখ হাসিনা স্বীকৃতি পেয়েছে সেটার সামগ্রিক উন্নয়ন শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, মানবসভ্যতার উন্নয়ন সেই উন্নয়ন শিক্ষা, সংস্কৃতির উন্নয়ন-সহ সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ একটি গণতান্ত্রিক দেশে যদি মানুষ সুশিক্ষিত হয়, সচেতন থাকে, নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয় তাহলে যে উন্নয়নের আশা করে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাচ্ছি সেই উন্নয়ন আমরা অর্জন করতে পারবো। অনেকে বলে থাকে গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন এই দুটো পৃথক জিনিস কিন্তু আমি মনে করি শেখ হাসিনার যে মডেল অনুসরণে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে সেটি এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটি মুদ্রার এপিঠ এবং ওপিঠ। গণতন্ত্রের উন্নয়ন করার জন্য দরকার অবকাঠামোগত এবং জনসম্পদের উন্নয়ন। সে কারণেই শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এখন পৃথিবীতে একটি তরঙ্গের সৃষ্টি করেছে এবং সেই তরঙ্গ নিয়ে আমরা ১৮ কোটি মানুষ একসঙ্গে এগিয়ে যাবো। আমি মনে করি শেখ হাসিনা যেভাবে বিগত সময়গুলোতে বাংলাদেশের মানুষকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় সংসদে নেতা হিসেবে যেভাবে নীতিনির্ধারণ ভূমিকায় এগিয়ে চলেছেন তা তিনি অব্যাহত রাখবেন এবং ১৮ কোটি মানুষ সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাতে পৌঁছাবে।

লেখক: অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক – সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ