1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মানুষ মানুষের জন্য

কামরুল হাসান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২
বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ওগো পুরবাসী বাড়াও তোমার হাত, যাক কেটে যাক মৃত্যুর কালরাত। ২৪ অক্টোবর সোমবার রাতে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। দেশের দক্ষিণ উপক‚ল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্য ভাগে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সিত্রাং-এর তাণ্ডবে ৩৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ঘরবাড়ি, চিংড়ির ঘের, কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন ছিলেন। অসংখ্য ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। সরকারি তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের ৪১৯টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৬ হাজার হেক্টর ফসলের জমি নষ্ট হয়েছে এবং প্রায় এক হাজার হেক্টর চিংড়ির ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকদের পথে বসার উপক্রম হয়ে গেছে। এমনিতেই আমন মৌসুমে খরা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সার ও তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক কষ্টে চাষাবাদ করেছিলেন কৃষকেরা। সেই দুর্ভোগ কাটিয়ে ওঠার সময়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সেইসব কৃষকদের একপ্রকার মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে গেলো। পথে বসার উপক্রম হয়েছে তাদের।

টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরী ও নিন্মাঞ্চল। এছাড়া সিত্রাংয়ের প্রভাবে রাজধানীতে ঢাকাতেও অনেক গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা বিভাগ। আর এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকাতেই ক্ষয়ক্ষতি বেশি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া বৃষ্টির কারণে অনেক দোকানে পানি উঠে জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় গাছ উপড়ে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, একদিনে সারাদেশে ঝড় ও বৃষ্টিতে ৩২৯টি স্থানে গাছ ভেঙে পড়েছে। এর মধ্যে ঘরের ওপর পড়েছে ১৮টি গাছ। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি। এর মধ্যে ১৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঢাকায়। সড়ক দুর্ঘটনা চারটি, নৌ-দুর্ঘটনা একটি, অন্যান্য দুর্ঘটনা ঘটেছে একটি। অতিবৃষ্টির কারণে গাছতলার মাটি নরম হয়ে ছিল। তাই বাতাস আসতেই উপড়ে গেছে।

দক্ষিণের জেলা বাগেরহাটেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলায় ২ হাজার ১৪০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ৭৫০টি ঘের ও পুকুরের মাছ। এতে প্রায় ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা ৮৫০ হেক্টর রোপা আমনের জমি, ৩৭৫ হেক্টর শীতকালীন সবজি, ১৭ হেক্টর পান বরাজ, ১১০ হেক্টর কলা, ২০ হেক্টর মরিচ, ৭ হেক্টর পেঁপে ও ৬ হেক্টর বিভিন্ন শীতকালীন সবজির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিন্মাঞ্চলে জমে থাকা পানি দ্রুত সরে না গেলে কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে। এমনিতেই নোনা পানির সমস্যাসহ কৃষকেরা অনেক বিপদে ছিলেন। এখন তাদের অবস্থা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো।

ঘূর্ণিঝড় প্রভাবে সৃষ্ট প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া এবং জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রাম নগর ও উপকূলীয় উপজেলার ৬৬টি ইউনিয়নের ৫ হাজার ৭৬০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬টি সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৯ হাজারের মতো। ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম দুর্গত মানুষের। চট্টগ্রামের উপক‚লীয় উপজেলাগুলোর মধ্যে বাঁশখালীর সাধনপুর, খানখানাবাদ; স›দ্বীপের সারিকাইত, মগধরা, আজিমপুর, মাইটভাঙা ও কালাপানিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে সাগর তীরে বসবাসকারী প্রায় ২৫০ জেলে পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছে।

সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি নোয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে সহগ্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমির রোপা আমন, শরৎ ও শীতকালীন ফসল। জেলার হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সদর ও সুবর্ণচর উপজেলায় শত শত গাছ উপড়ে পড়েছে।এছাড়া ৮ হাজার ৬৩৯ হেক্টর রোপা আমন, ৯৩৬ হেক্টর শীতকালীন ও ১৭৭ হেক্টর শরৎকালীন শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বরিশাল জেলার ৮৭টি ইউনিয়ন দুর্যোগে কবলিত হয়েছে। এতে দুর্গত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ৯০ হাজার ৬২১। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’য়ের প্রভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৪১টি ঘর। এর মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ২ হাজার ৫০৮টি ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৬৩৩টি ঘর। ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’য়ের প্রভাবে বরিশালে মৎস্য খাতে ২৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে মাঠে থাকা আমন ধান, পান, পেঁপে ও সবজির।

গাছ উপড়ে বিদ্যুৎ এর খুঁটি ভেঙে এবং তার ছিড়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তবে একটি আশার খবর হলো ইলিশ রক্ষা কর্মসূচির জন্য মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেরা গভীর সমুদ্রে যায়নি। এজন্য জেলেদের কোনো প্রকার প্রাণহানি ঘটেনি। শত খারাপ খবরের মধ্যে এটাই ভালো খবর।

ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ম্যাপলক্রাফট’ কয়েক বছর আগে ১৭০ দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১৬ টি দেশকে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। তার ওপর গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রভাবে যতগুলো দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সারা বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয় আমাদের দেশকে। ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস এগুলো আমাদের নিত্যসঙ্গী। দেশের দক্ষিণাঞ্চল তো বটেই বরঞ্চ সমগ্র দেশকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের থেকে রক্ষা করে আসছে সুন্দরবন। পৃথিবীর সবথেকে বড় ম্যানগ্রোভ বন। সন্তানের বিপদে পিতা যেমন বুক পেতে দেন, ঢাল হয়ে দাড়িয়ে থাকেন তেমনি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের রক্ষার্থে পিতার মতো বুক পেতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দরবন। হাজার বছর ধরে আমাদের রক্ষা করে চলেছে। ১৯৮৮ এবং ১৯৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালের সিডর, ২০০১ সালের আইলা, ২০১৬ সালের রোয়ানু, ২০১৮ সালের বুলবুল, ২০১৯ সালের ফণী, ২০২০ সালের আম্ফান এর গতি কমিয়ে দিয়ে সুন্দরবন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে রক্ষা করেছে।

কিন্তু সবথেকে পরিতাপের বিষয় হলো পিতাসম সুন্দরবনের প্রতি আমরা সব সময় অবিচার করেছি। কুপুত্র যেমন পিতাকে কষ্ট দেয় আমরাও ঠিক একই কাজ করছি। নির্বিচারে সুন্দরবনের কাটা হচ্ছে। দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত দেশের দুর্গকে।

বারবার ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে জর্জরিত দেশের দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ। লাখো মানুষ নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সরকার মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। কিন্তু একবারে এতো মানুষকে পর্যাপ্ত সাহায্য করা সরকারের পক্ষেও সম্ভব না। এজন্য দেশের সর্বস্তরের মানুষকে দুর্গত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই হয়তো মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা প্রশমিত হবে।

লেখক : কামরুল হাসান – শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ