1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সহিংসতা সৃষ্টি করে কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩

‘আমি জানি সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।/নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক/সব সংঘ-পরিষদ; চলে যাবে, অত্যন্ত উল্লাসে/চলে যাবে এই সমাজ-সভ্যতা-সমস্ত দলিল/নষ্টদের অধিকারে ধুয়ে মুছে, যে-রকম রাষ্ট্র/আর রাষ্ট্রযন্ত্র দিকে দিকে চলে গেছে নষ্টদের অধিকারে।’ প্রয়াত কবি হুমায়ুন আজাদের এই পঙ্‌ক্তিগুলো বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের স্বরূপই যেন তুলে ধরে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া কলুষিত হলে, রাজনীতি নষ্টদের অধিকারে চলে গেলে জাতির জন্য অশনি সংকেত হয়ে ওঠে। রাজনীতি কলুষিত হলে সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সমাজের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও খাত নষ্ট হতে শুরু করে। অনিয়ম, দুর্নীতি এবং জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডও বাড়তে শুরু করে। স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর উত্তর সময়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমেই অধঃগামিতার দিকে এগিয়েছে। এই সময়ে রাজনৈতিক অর্জন যে একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। যখন জনগণ দৃশ্যপট পাল্টানোর জন্য রাস্তায় নেমেছে তখন রাজনৈতিক অঙ্গন বাধ্য হয়ে সঠিক পথে এগিয়েছে। কিন্তু যখনই জনগণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে এবং রাজনীতিকদের ওপর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সংজ্ঞাসূত্র বাস্তবায়নের দায় দিয়েছে তখন কিছু নীতিভ্রষ্ট নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। রাজনীতি হয়েছে কলুষিত। রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভাজন বেড়েছে। বিভাজন বাড়তে বাড়তে সন্দেহ ও আস্থার সংকট স্ফীত হয়েছে। এই সন্দেহ ও আস্থার পারদ এতটাই নিচে নেমেছে যে, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের সহজ পথ অর্থাৎ আলোচনার টেবিলে বসে সমাধানের বিষয়টিও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়াচ্ছে উত্তাপ। এগিয়ে চলেছে সহিংসতার পথে। বাড়ছে জনদুর্ভোগ।

রাজনীতি একটি মহৎ ব্রত। এই মহান ব্রত পালন করতে গিয়ে রাজনীতিকদের সদিচ্ছার পরিচয় দিতে হয়। জনস্বার্থে কাজ করতে হয়। জনগণের দাবি এবং প্রত্যাশাগুলোকে রাষ্ট্রকাঠামোতে উপস্থাপন এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাদের নিতে হয়। রাজনীতিতে সন্ত্রাস, সহিংসতার কোনো স্থান নেই। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন নীতিভ্রষ্টদের প্রবেশ ঘটে এবং কলুষতা ছড়াতে শুরু করে তখন তা জনগণের কল্যাণে তো আসেই না উপরন্তু জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়ে যায় এবং জন্ম দেয় আতঙ্কের। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অঙ্গনে কলুষতার কালো ছায়া প্রথম পড়ে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে। রাজনৈতিক অঙ্গনে সহিংসতার মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক শক্তির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন অনেকেই। সহিংসতা, ঘৃণার পাশাপাশি হীনস্বার্থের বশে কিছু অর্জনও আদায় করতে পেরেছিলেন কয়েকজন। কিন্তু তা সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে ওঠেনি এবং সামনেও হবে না। রাজনীতিতে সহিংসতা আত্মবিনাশের পথ হয়ে ওঠে। সহিংসতা মহৎ কোনো অর্জন এনে দিতে পারেনি। বরং ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমেই জনসমর্থন আদায় সম্ভব হয়েছে। এজন্যই বিরোধী পক্ষের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি জনসমর্থন পাচ্ছে না। বরং তা তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

দলীয় স্বার্থে, ক্ষমতা আদায়ের জন্য যেভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে সহিংসতার অনুপ্রবেশ ঘটছে তা দুঃখজনক। সহিংসতা রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি জননিরাপত্তাকেও ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অঙ্গন চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। পঁচাত্তরেই জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন হয়েছিল রাষ্ট্রীয় মদদে। তা না হলে জেলখানার মতো সুরক্ষিত স্থানে কীভাবে এমন বর্বরোচিত ঘটনা ঘটতে পারে? লক্ষণীয়, জাতীয় চার নেতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি। অভিযোগ উত্থাপন না করেই অন্যায়ভাবে তাদের জেলে বন্দি করে রাখা হয়। খন্দকার মোশতাক তাদের রাজনৈতিক প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। দেশ নিমজ্জিত হয় গাঢ় অন্ধকারে। শুরু হলো হত্যা, গুম ও লুটের রাজনীতি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেওয়া হয়েছিল। দেশে নতুন ধরনের রাজনীতির নামে সূচনা ঘটে অপরাজনীতির, যার সূচনা করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। স্বাধীন দেশে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের পথ হলো ভূলুণ্ঠিত। জেনারেল জিয়ার বিরুদ্ধে ২১টি ক্যু পরিচালিত হয়েছিল। সাড়ে পাঁচ বছরের দীর্ঘ শাসনামলে ব্যাপক সহিংসতা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য বিলম্বিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও সামরিক শাসন পরিচালনা করেন দীর্ঘদিন।

রাজনীতিতে সহিংসতার অনুপ্রবেশ এমনভাবে থিতু হয়ে পড়েছে যে এখনও তা জিইয়ে রয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের নামে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহিংসতা ও বিরোধের পথ বেছে নেয় কিছু রাজনৈতিক দল। উপেক্ষিত হয় আলোচনার টেবিল। এমনটি জাতির স্বার্থের জন্য মোটেও শুভ কিছু হতে পারে না। সহিংসতার রাজনীতি যে রাজনীতিকদের বিনাশ ডেকে এনেছে এমন নজির বহু রয়েছে। অধিকার আদায় কিংবা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিচয়ে কোনো হত্যাকাণ্ডই সমর্থন পেতে পারে না। সহিংসতার রাজনীতিতে যুক্তিতর্ক, আলোচনা-পর্যালোচনার স্থান নেই। ৬ নভেম্বর ‘সহিংসতা, ১১ গাড়িতে আগুন’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সহিংসতার রাজনীতির নেতিবাচক দিকটি ফের তুলে ধরে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধের দুদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ঘটেছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক যানবাহন। কখনও যাত্রী নামিয়ে দিয়ে আবার কখনও যাত্রীসমেত বাসে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। আবার গাড়িতে চালককে রেখেও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার খবরও সংবাদমাধ্যমে পাওয়া গেছে। সাধারণ মানুষের মনে সঙ্গত কারণেই আতঙ্কের ছায়া বিস্তৃত হয়েছে। বিরোধী পক্ষের এই আন্দোলন তাই জনসমর্থন আদায় করতে পারবে না। দেশের সিংহভাগ মানুষ শান্তিপ্রিয়। তারা সংঘাত-সহিংসতা পছন্দ করে না। তাছাড়া মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবন এমনিতেই নানা সংকটে জর্জরিত। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমাবনতির দিকে। মৃতের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এমন সংকট নিরসনে বিরোধী পক্ষের দৃশ্যমান কর্মসূচি নেই। বরং অবরোধ কর্মসূচি বর্ধিত করায় পরিবহনব্যবস্থাসহ জীবনযাত্রার পথ আরও কণ্টকাকীর্ণ হলো। বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে। এভাবে জনদুর্ভোগ বাড়লে তা বিরোধী পক্ষের জন্যও ইতিবাচক ফল এনে দেবে না।

সময় বদলেছে। এখন মানুষের পক্ষে তথ্য সংগ্রহ করা সহজ। রাজনীতির সঙ্গে যার সম্পৃক্ততা নেই সেই ব্যক্তিও রাজনৈতিক পরিস্থিতির খবর সংগ্রহ করতে পারেন। তথ্য যাচাইয়ের কাজটিও এখন সহজ। অথচ রাজনৈতিক অঙ্গন রয়ে গেছে পুরোনো ধাঁচে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ দাবি আদায়ের পথ নিশ্চিত না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। ২৮ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচিয় দেওয়া এক ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলন করেন। আমরা দেখেছি, বিরোধী পক্ষ তাকে সামনে উপস্থাপন করেছে। পরে জানা গেল, ওই ব্যক্তির সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। তারা কি একবারও ভাবলেন না মানুষ সত্যিটা জেনে যাবে? নাকি তারা মনে করেন তারা যা বলবেন তা-ই মানুষ মেনে নেবে? দেশের মানুষকে ছলচাতুরির আশ্রয়ে বোকা বানানোর বিষয়টি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু রাজনীতি মিথ্যাচারের পথেই এগিয়ে চলেছে। রাজনীতিকরা যখন হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালান তখন তাকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বলা যায় না। তাদের কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো হয়ে দাঁড়ায়।

সন্ত্রাস দমনে আইন রয়েছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে হবে। ২৮ অক্টোবরের পর যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারে এবং তদন্ত সাপেক্ষে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। অনুমানের সাপেক্ষে গ্রেপ্তার করা ঠিক নয়। তাতে জনআস্থার পারদ নিম্নগামী হয়। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পথ অমসৃণ হয়। আমরা জননিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিই। রাজনীতির নামে হত্যাযজ্ঞ চলতে পারে না। আমরা রাজনীতি চাই, কিন্তু রাজনীতির নামে সহিংসতানির্ভর অপরাজনীতি চাই না। রাজনীতিকদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে জনগণের কাছে। জনগণকে জিম্মি করে কোনো আন্দোলনই গণতন্ত্রে স্বীকৃত নয়। জনগণের স্বস্তি-নিরাপত্তা-অধিকারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি গণতন্ত্রের সংজ্ঞাসূত্র বিরুদ্ধ। সবার মধ্যে শুভবোধের উদয় হোক।

লেখক: মোহাম্মদ আলী শিকদার – অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ