1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নত পর্যায়ে পৌঁছানোর প্রতিজ্ঞা

মর্তুজা হাসান সৈকত : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১

ডিসেম্বর বিজয়ের মাস, গর্বের মাস। ৫০ বছর আগে এ মাসেই আমরা পাকিস্তান নামক অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছিলাম। একটি জাতির জীবনে ৫০ বছর যেমন খুব দীর্ঘ সময় নয়, তেমনই একেবারে কম সময়ও নয়। ভূখণ্ডের আকারে বাংলাদেশ ছোট হলেও জনসংখ্যার বিচারে কিন্তু ছোট নয়। তা ছাড়া এই জাতির রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য। সেই হিসেবে বিজয় অর্জনের এই সুবর্ণজয়ন্তী যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ, তেমনই উপলক্ষটি আত্মজিজ্ঞাসারও।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে সদ্য স্বাধীন হিসেবে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ ছিল অপ্রতুল সম্পদ, দুর্যোগপ্রবণ আর দারিদ্র্যপীড়িত একটি দেশ। তদুপরি, ঘাড়ে চেপে বসেছিল বিপুলসংখ্যক নিরক্ষর জনগোষ্ঠী। সেখান থেকে এই ৫০ বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন অসামান্য। বিশ্বব্যাংক ও তার অনুসারীদের উন্নয়নের মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে এখন গর্ব করা যায়।

মাত্রই গতমাসে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে। এর আগে ২০১৭-এর মাঝামাঝি এসে প্রয়োজনীয় লক্ষ্যসমূহ (সূচক) অর্জন করে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে যায়। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি সুখবর।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় দুই হাজার পাঁচশ ডলারের ল্যান্ডমার্ক অতিক্রম করেছে।

অপ্রাপ্তিও আছে অনেক। পাকিস্তানি আমলে আমাদের রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের মূল কথা ছিল বৈষম্যের অবসান। কিন্তু গত ৫০ বছরে সেই বৈষম্য বেড়েছে বলে দৃশ্যমান। কিছু লোকের করায়ত্ত অধিকাংশ সম্পদ। উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও জনসংখ্যার প্রায় এক পঞ্চমাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এর পাশাপাশি বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ, শেয়ারবাজারে কারচুপি, সরকারি সম্পদ লুটপাট এবং বিদেশে অর্থপাচারসহ যেসব অনাচার জাতি দেখতে পেয়েছে, তা কোনোভাবেই স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তাছাড়া এতদিন পেরিয়েও গণতন্ত্রের ভিত এখনও শক্ত হয়নি।

এতসব অপ্রাপ্তির মাঝেও ১৯৭১-এ কোথায় ছিলাম আর আজ আমরা কোথায় আছি, এ প্রশ্নে উন্নয়নের হিসাব নিতে গেলে কিছুটা বিস্মিতই হতে হয়। জন্মের শুরুতেই যে রাষ্ট্রের টেকসই না হওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা, সেই রাষ্ট্রটিই সব সংশয়কে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে গত পাঁচ দশকে।

এই অর্জন কিন্তু সহজ ছিল না মোটেই। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা, সামরিক অভ্যুত্থান, পালটা অভ্যুত্থান, সেই সঙ্গে বিকৃত ইতিহাস আর ঔপনিবেশিক চেতনায় ঘেরা পরিবেশে কেটেছে এক লম্বা সময়। তবে গত একযুগের ইতিহাস ছিল ভিন্ন। মূলত এই সময়েই অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে, আকারে বড় হয়েছে, গঠনকাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে।

বাংলাদেশের এমন অর্থনৈতিক সাফল্যে অভিভূত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ মন্তব্য করেছে যে, বাংলাদেশ আজ আর ‘বাস্কেট কেস’ নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ সম্পাদকীয় নিবন্ধের শিরোনাম করেছে, ‘ভারত, পূর্ব দিকে তাকাও : বাংলাদেশ ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে পেছনে ফেলে দিচ্ছে।’

এই যে রূপান্তর এটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। দৃঢ় রাজনৈতিক নেতৃত্ব আর সঠিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক পদক্ষেপে ধাপে ধাপে এসেছে এ অর্জন। এটাই শেষ নয়।

বাংলাদেশের পরবর্তী লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে ‘ভিশন’-৪১, মানে ২০৪১ সালের ভেতরে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা। সে লক্ষ্য পূরণে হাতে আছে ২০ বছর। এই ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে কী কী করণীয়, তার কৌশলগত অবস্থান নেয়ার সময় এখনই। কারণ, মনে রাখতে হবে, মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে প্রবেশের চাইতে উন্নত দেশের কাতারে প্রবেশ করার পথ আরও কঠিন হবে।

তাছাড়া উন্নত দেশের সোপানে প্রবেশ করতে হলে আগে জাতিসংঘ নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হবে। আর সেই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে প্রয়োজন শিল্প-অবকাঠামো, অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নয়নের। এজন্য ২০১৬ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত অতিরিক্ত আনুমানিক ৯২৮.৪৮ বিলিয়ন ডলার অর্থের প্রয়োজন। মানে প্রতিবছর গড়ে বার্ষিক ৬৬.৩২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে, যা একই সময়ের জিডিপির ১৯.৭৫%।

আরও বেশ কিছু কারণে এই সময়ের ভেতরে উন্নত দেশের কাতারে প্রবেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। কারণ, এলডিসি থেকে উত্তরণের সুফল হিসেবে বেশ কিছু সুবিধা যেমন পাওয়া যাবে তেমনই হারাতেও হবে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা। যে সুযোগ সুবিধাগুলো হারাতে হবে তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বেশ কিছু উন্নত দেশ ও জোটের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করে ফেলাই উত্তম।

এর পাশাপাশি সামনের বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে দক্ষ জনশক্তি অর্জনেও জোর দিতে হবে। এর কারণ হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত যেমন, তৈরি পোশাক, আইসিটি, নির্মাণ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পর্যটন, হালকা প্রকৌশল, স্বাস্থ্যসেবা, জাহাজ নির্মাণ আর ওষুধ তৈরি খাতে প্রায় ৭ কোটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ জনশক্তি এবং ব্যবস্থাপকের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে অভাব পূরণের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক বিদেশি পেশাদার এবং প্রযুক্তিবিদ আমদানি করা হচ্ছে।

দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই দেশের অভ্যন্তরে মানবসম্পদ তৈরির পাশাপাশি অন্য কোনো কৌশলে মানব সম্পদ আহরণ করা সম্ভব কি না সে ভাবনাও জরুরি। এর একটি সমাধান হতে পারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অভিবাসী বা প্রবাসী হয়ে বসবাস করা বাংলাদেশিরা। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এক কোটি বিশ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এদের অনেকেই দক্ষ, বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত।

এই প্রবাসীদের মধ্যে রয়েছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অর্থনীতিবিদ, কৃষিবিদ, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক, ব্যবস্থাপনা এবং আইটি বিশেষজ্ঞ। এদের বড় একটি অংশই বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেয়ে আর দেশে ফেরেনি। যা বাংলাদেশের মতো দেশের অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিরাট ধাক্কা। আগামীর লক্ষ্য অর্জন ও আজকের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই উৎস থেকে মেধা আহরণে গুরুত্ব দিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

পাশাপাশি, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণেও মনোযোগ আরও বাড়াতে হবে। এর কারণ হচ্ছে, গত এক দশকে দেশে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) হয়েছে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। অন্যদিকে, বিশ্ব ব্যাংকের ‘ইজ অব ডুইং বিজনেস’ ২০২০-এর সূচকে ভারতের স্থান যেখানে ৬৩, সেখানে বাংলাদেশের ১৬৮।

এর পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস সূচকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। সেই তালিকায় ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১০৫। যে ১০টি বিষয় এবং ৪১টি নির্দেশকের ওপর ভিত্তি করে ‘ইজ অব ডুইং বিজনেস’-এর র‌্যাংকিং তৈরি হয় তা পরীক্ষা করে উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়াটাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

বিজয়ের ৫০ বছরে এসে আমাদের অর্জন খুব একটা কম নয়। হয়তো আরও বেশি হতে পারত, তবে যা হয়েছে এককথায় তাও অসামান্য। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ এখন সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তাই বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীকে শুধু আত্মপ্রচারমূলক স্মৃতিচারণায় পর্যবসিত না করে প্রতিজ্ঞা হোক ‘ভিশন’-৪১ অনুযায়ী আগামী দুই দশকের ভেতরে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার উদ্দেশ্যে সচেষ্ট হওয়া। সে ধারা বেগবান করতে সঠিক কৌশল অবলম্বন করার এখনই সময়। আর এই পথনকশার পথ ধরেই অর্জিত হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা।

লেখক: মর্তুজা হাসান সৈকত, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ