1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

র‍্যাব, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ভূরাজনীতিতে প্রভাব

সাইফুর রহমান তপন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১

র‍্যাব এবং এর বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয় গত ১০ ডিসেম্বর। কিন্তু জনপরিসরে এ নিয়ে পর্যালোচনা- বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের ওপর এর প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি। এর প্রভাব এ এলাকার ভূরাজনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে তা নিয়েও আলোচনা চলছে। দেশের সরকারপন্থিরা বলছে, এ হলো মার্কিন প্রশাসনে জামায়াত-বিএনপি লবির অব্যাহত দেনদরবারের কুফল; এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

অপরদিকে সরকারবিরোধী মহল বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-সমর্থক বিশ্লেষকরা বলছে, এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে অবশ্যই প্রভাব ফেলবে। তা এমনকি বাংলাদেশে একটি ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনও ঘটতে পারে।

যারা মার্কিন এ নিষেধাজ্ঞাকে খুব একটা পাত্তা দিতে রাজি নন তাদের যুক্তি হলো, বর্তমান সরকারের সময়ে দুদেশের সম্পর্ক একটা নতুন উচ্চতায় গিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শুধু একটি প্রভাবশালী দেশই নয়, এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। অতএব বাংলাদেশকে এড়িয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অসম্ভব। তাছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সব দিক থেকেই যে গভীরতায় পৌঁছেছে এবং ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন যে পর্যায়ে আছে তাও মার্কিন সরকারকে দুবার ভাবাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে।

যারা এ নিষেধাজ্ঞাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে তাদের যুক্তি হলো, যাদের দীর্ঘ সময়ের নিরবচ্ছিন্ন তৎপরতার ফলে এ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হলো হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল। এরা বিশ্বব্যাপী ‘স্বীকৃত’ মানবাধিকার সংগঠন।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও বহু নীতিনির্ধারকের ওপর এদের প্রভাব খুব প্রবল। তাছাড়া জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন-অনুসৃত নীতি থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলে আসছেন। তাই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ উক্ত নিষেধাজ্ঞাতেই থেমে থাকবে না।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসে বারাক ওবামা সরকার। আর তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন হিলারি ক্লিন্টন যার সঙ্গে শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের গভীর সম্পর্ক অত্যন্ত সুবিদিত।

সেই সময়ে অবসরের বয়স অতিক্রান্তের পরও গ্রামীণব্যাংক থেকে ড. ইউনূসের অপসারণ, সরকারি বিধিবদ্ধ এ সংস্থায় যেকোনো মূল্যে ড. ইউনূসের কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা, বিশ্বব্যাংকের কথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে পড়া ইত্যাদি ইস্যুতে হিলারি আওয়ামী লীগ সরকারকে তটস্থ রাখে। এমনকি ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেরই অনুমোদন নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মোড়ল হওয়া ভারতের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে।

ওবামা-পরবর্তী ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের কাছে দক্ষিণ এশিয়া এক ধরনের ইজারা দিয়ে এ অঞ্চল থেকে কেটে পড়ে। তাছাড়া ট্রাম্প তার পূর্বসূরিদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুকে ব্যবহার করে দেশে দেশে হস্তক্ষেপ করার নীতিটিও বর্জন করে বলে মনে হয়। মধ্যপ্রাচ্যেও রাজা-আমিরদের কাছ থেকে টাকা তোলা এবং ইসরাইলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে তিনি যতটা মনোযোগী ছিলেন বিশ্বের অন্য কোনো অঞ্চল নিয়ে ততটা আগ্রহ তার ছিল না বললে বাড়িয়ে বলা হবে না।

এখন আবার যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় এসেছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ওবামারই ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ড. ইউনূসও আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাই মানুষের মাঝে এ ধারণাটা হওয়া স্বাভাবিক যে, বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সম্পর্ক খুব মসৃণ যাবে না।

এ ধারণার পাশাপাশি এটাও মনে রাখা দরকার যে, ২০১৪ আর ২০২১ সাল এক নয়। এতদিনে বুড়িগঙ্গায় যেমন অনেক জল গড়িয়ে গেছে তেমনি মিসিসিপির পানিও স্থির থাকেনি। ওবামা ও তার পূর্বসূরি জর্জ বুশের আমলে যত জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ‘সবক’ দিতে গিয়েছিল সেই সব জায়গা থেকেই তাকে পাত্তাড়ি গোটাতে হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে তো বাইডেনকে এক প্রকার থালা-বাটি ফেলেই পালাতে হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়া ভাতে ছাই ছিটানোর জন্য রাশিয়া ও চীন প্রায় তৈরি হয়ে গেছে।

বাংলাদেশও আগের অবস্থায় নেই। এক সময়ের বিদেশি অনুদাননির্ভর দেশটি ইতোমধ্যে ছোটখাট দানখয়রাতও শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিযায় বাংলাদেশ এখন একটা সমীহজাগানিয়া শক্তি এটা স্বীকার করতেই হবে। বঙ্গেপসাগরে তথা ভারত মহাসাগরে নিজেদের চরাচলকে অবাধ করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশকেও আস্থায় নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বাংলাদশ এখন সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদ দমনে এক সফল এক দেশের নাম। এ বিষয়ে সাফল্য পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দশকের পর দশক ধরে প্রচুর অর্থব্যয়ের পাশাপাশি ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। সেই বাংলাদশেকে যুক্তরাষ্ট্র শুধু শুধু ঘাটাতে যাবে কেন?

প্রসঙ্গত, র‍্যাব ও এর কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খবর পাওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার বসে থাকেনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এর বিরুদ্ধে তারা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। এমনকি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকার মার্কিন দূতকে তলব করে যুক্তরাষ্ট্রের এ ‘একতরফা’ সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা চায়।

ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের এ ত্বরিত প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে ভাবিয়ে তোলে। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেন ফোন করেন যার বিষয়বস্তু নিয়ে এখনও গণমাধ্যম সরগরম।

ফোনালাপে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বলে আশ্বস্ত করেছেন যে, ওই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশের যে উদ্বেগ তার সুরাহা হবে। দুদেশের মধ্যে যেসব ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে আলোচনার মাধ্যমে তা করা হবে।

শুধু তা নয়, ওই ফোনালাপের পর পরই বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে- বিশেষ করে জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে খোদ র‍্যাবের কর্মকাণ্ডের বেশ প্রশংসা করা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে প্রকাশিত ‘কান্ট্রি রিপোর্ট অন টেরোরিজম২০২০’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ কমার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত তদন্ত ও গ্রেপ্তার বেড়েছে।

অনেকের মতে, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে তাই যুক্তরাষ্ট্র ওই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাকে সতর্ক করল। কিন্তু এ হিসাবটা যুক্তরাষ্ট্র ভালোই বোঝে যে, এ ধরনের ‘হঠকারী’ কোনো পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই চীনের কোলে ঠেলে দেবে।

বাংলাদেশ একটা উন্নয়নশীল দেশ। তার উন্নয়নের চাকা দ্রুতবেগে ধাবমান। এর জন্য প্রচুর ফুয়েল দরকার যার জোগান একটা বা দুটো সোর্স থেকে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই সে বর্তমানে সহজে তহবিল পাওয়ার প্রধান উৎস চীনের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু এটা এখনও মাত্রা ছাড়িয়ে যায়নি। কূটনীতি সম্পর্কে সামান্য ধারণা আছে এমন যে কেউ স্বীকার করবেন যে, বাংলাদেশ এখনও তার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’- এ নীতির মধ্যেই আছে।

সেজন্যই সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এক ধরনের ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা চলবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। অবশ্য বাংলাদেশও যে বসে থাকবে তা নয়। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ আরও বাড়ানোর অঙ্গীকার সরকার থেকে করা হয়েছে।

আবার এটাও আশা করা যায় যে, ২০৪১ সালের মধ্যে একটা উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নধারী বাংলাদেশ নিজেদেরই প্রয়োজনে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে আরও মজবুত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কারণ একটা দেশ অর্থনীতিতে যতই সমৃদ্ধি আনুক উন্নত গণতন্ত্র ও সর্বজনীন মানবাধিকারের নিরবচ্ছিন্ন চর্চা ছাড়া তা টেকসই হয় না।

লেখক: সাইফুর রহমান তপন, সাবেক ছাত্রনেতা ও কলাম লেখক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ