1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জাতীয় অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন: একজন অদম্য কর্মবীর

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩

জাতীয় অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীনের শত সহস্র শিক্ষার্থীর মাঝে সর্বাধিক প্রিয়তম ছাত্র অধ্যাপক মাহমুদুল হক (১৯৫০–২০২১) প্রিয় শিক্ষাগুরুর সম্মানে ৫৮৩ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছিলেন ২০১৬ সালে। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত এই আকর গ্রন্থটিতে দেশী বিদেশী ত্রিশজন খ্যাতনামা গবেষকের ইতিহাস, রাজনীতি ও আইন, অর্থনীতি ও উন্নয়ন এবং সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক জ্ঞানগর্ভ রচনা স্থান পায়। মুখবন্ধ লেখার পর পরই সম্পাদক তাঁর প্রিয় শিক্ষকের জীবন ও কর্মের ওপর একটি নাতিদীর্ঘ নিবন্ধ রচনা করেন, যার শিরোনাম ছিল: Alamgir Muhammad Serajuddin: Teacher Researcher Jurisprudent Education Adminstrator। অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীনের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনকে চিত্রায়িত করতে গিয়ে কয়েকটি জাদুকরী বিশেষণ ব্যবহার করেন অধ্যাপক হক, যা থেকে বোঝা যায় তিনি একাধারে শিক্ষক, গবেষক, আইনজ্ঞ এবং শিক্ষা প্রশাসক হিসেবে অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। পঁচাশি বছরের জীবন পরিক্রমায় বইপত্র আর কাগজ কলমের সঙ্গে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ আছেন অধ্যাপক সিরাজুদ্দীন।

জন্ম তাঁর অবিভক্ত ভারতবর্ষে; চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার অন্তর্গত কাঞ্চনা ইউনিয়নের এক সম্ভ্রান্ত কৃষিজীবী পরিবারে। পিতা মৌলবি আবদুল বারী এবং মাতা মোসাম্মাৎ গুলজান বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে পঞ্চম তিনি। বিদ্যানুরাগী বাবার কাছেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি, আরবী ও ধর্মীয় শিক্ষার মধ্য দিয়ে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ সমাপ্ত করেন গ্রামের স্কুলে। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ হতে সাফল্যের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পাড়ি দেন ঢাকায়। গন্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ। স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অসামান্য কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রপতি পদক লাভ করেন ১৯৫৯ সালে। পরের বছর প্রভাষক পদে যোগ দেন ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজে, যেখানে কয়েক বছর আগে শিক্ষার্থী হিসেবেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। উল্লেখ্য, তাঁর সমসাময়িক অনেক খ্যাতনামা পণ্ডিত এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ছিলেন যাঁরা পরবর্তী সময়ে দেশে বিদেশে তাঁদের বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।

আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে পল্লী উন্নয়ন পরিকল্পনার পথিকৃৎ আখতার হামিদ খানের তত্ত্বাবধানে কুমিল্লায় অবস্থিত ‘পাকিস্তান একাডেমী ফর ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট’– এ গ্রামের উন্নয়নে কলেজগুলোর ভুমিকা শীর্ষক কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেকালে তরুণ মেধাবীদের পেশা হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিল সিভিল সার্ভিস। একালেও তাই, যদিও একালে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরাও, কিংবা বলা যায় সর্বস্তরের সকল ছাত্রছাত্রীই অর্থ আর ক্ষমতার যোগসাজশে এক রাজকীয় জীবন যাপনের হাতছানিতে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই দৌড়ে অংশগ্রহণ করে। আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন সে পথে হাঁটেননি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষের প্রাণবন্ত আলাপচারিতা, শিক্ষকতার স্বাধীন সত্তার প্রতি দুর্বার আকর্ষণ, সর্বোপরি পিতার ইচ্ছায় শিক্ষকতাকেই আজীবনের জন্য পেশা তথা দায়িত্ব হিসেবে বেছে নেন। ১৯৬১ সালে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (SOAS) –এ গমন করেন। কাকতালীয়ভাবেই তাঁর পিএইচডি তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন প্রফেসর জে. বি. হ্যারিসন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যিনি ইংরেজ মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামে। সেদিনের বালক আলমগীরের গ্রামের বাড়ী থেকে মাত্র দুই মাইল দূরে দোহাজারি বিমানঘাঁটিতে অবস্থান করছিলেন তদানিন্তন মেজর হ্যারিসন। জাপানী বোমার আক্রমন হতে চট্টগ্রাম সীমান্ত রক্ষায় অনবদ্য ভুমিকা পালন করেছিলেন তিনি। এই ঘটনাটি বহুবছর পর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের SOAS –এ শিক্ষক ও ছাত্রের মাঝে একটা অদ্ভুত যোগসুত্র স্থাপন করে। গবেষক আলমগীর সিরাজুদ্দীন প্রফেসর হ্যারিসনের নির্দেশনায় ‘The Revenue Administration of East India Company in Chittagong’– শিরোনামে অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৬৪ সালে। ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ এবং পরবর্তীকালে ভারতীয় ইতিহাসবিদগণও ঔপনিবেশিক শাসনের ত্রুটিগুলোকে প্রধানত সর্বভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার বিশ্লেষণ করতেন এবং তাঁদের গবেষণায় স্থানীয় ইতিহাস এক প্রকার উপেক্ষিত ছিল, বলা যায়। ড. সিরাজুদ্দিন তাঁর পিএইচডি গবেষণায় এই অনালোচিত বিষয়ের ওপর আলো ফেলেছেন এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় আর্থ–সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন।

পিএইচডি গবেষণা চলাকালীন সময়েই আলমগীর সিরাজুদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় লাহোর থেকে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে আগত লাহোর মহিলা কলেজের চারুকলার প্রভাষক এবং লন্ডনের হর্নজি আর্ট কলেজের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আসমা হকের। ১৯৬৬ সালে তাঁরা পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। ইতোমধ্যে ড. সিরাজুদ্দিন লিঙ্কন্স ইন থেকে ‘বার এট ল’ ডিগ্রী সম্পন্ন করেন (১৯৬৭)। একই সময়ে আসমা হক (আসমা সিরাজুদ্দীন) SOAS এর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে পিএইচডি তে ভর্তি হন। “Architectural Representations in Persian Miniature Painting During the Timurid and safavid Periods” শিরোনামে পিএইচডি লাভ করেন তিনি ১৯৬৮ সালে। জ্ঞানচর্চা এবং ভালোবাসার এমন যুগলবন্দী ইতিহাসে বিরল। ইত্যবসরে ড. আলমগীর সিরাজুদ্দীন শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন Inner London Education Authority তে। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি ইংল্যান্ডে প্রচলিত প্রাক–বিদ্যালয় শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন, যা পরবর্তীকালে তাঁর বহুভাষী সন্তানকে হাতেখড়ি দিতে সহায়ক হয়েছিল।

১৯৬৯ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করার পর আলমগীর সিরাজুদ্দীন তাঁর ব্যারিস্টার সহপাঠীদের প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিয়ে নব প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে যোগ দেন উর্দ্ধতন প্রভাষক (সিনিয়র লেকচারার) হিসেবে। ড. আসমা সিরাজুদ্দীনও একই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তাঁর পাঠদানের প্রধান বিষয় ছিল– ‘মুসলিম আর্ট এন্ড আর্কিটেকচার’। শিক্ষকতা, গবেষণা, আর গবেষণার প্রয়োজনে দেশ বিদেশ পরিভ্রমণে তাঁরা দু’জন ছিলেন দু’জনের অনুগামী সহযোগী সহযাত্রী। অধ্যাপক মাহমুদুল হকের কলম থেকে তুলে ধরছি -‘…a long happy and productive intellectual partnership between them’ । তাঁরা দু’জন এক দীর্ঘ আনন্দময় সৃষ্টিশীল বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ভালোবাসার অমর মহাকাব্য রচনা করেছেন মর্তের বুকে।

জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি শিক্ষা প্রশাসনেও অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন অধ্যাপক আলমগীর সিরাজুদ্দীন। শিক্ষকতা জীবনের প্রথমার্ধে আলাওল হলের প্রাধ্যক্ষ (১৯৭২–১৯৭৩), কলা অনুষদের ডিন (১৯৭৮–১৯৮০), বিভাগীয় সভাপতির (১৯৭৫–১৯৮০) দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে তদানিন্তন উপাচার্য প্রফেসর মোহাম্মদ আলী পদত্যাগ করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক সিরাজুদ্দিন। পরের বছর জুন মাসে সিনেট নির্বাচনে ৭২/৮১ ভোট পেয়ে চার বছরের জন্য উপাচার্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৯১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সরকারী হস্তক্ষেপের কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাঁর পরে আর কোন উপাচার্য নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্বভার গ্রহণ করেননি।

উপাচার্যের পদে ইস্তফা দিয়ে বিভাগে প্রত্যাবর্তন করেন অধ্যাপক ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন,ফিরে আসেন শ্রেণিকক্ষে। ১৯৯৭–৯৮ সালের দিকে এম. এ. ক্লাসের শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তাঁর পাঠদান পদ্ধতি, বিষয়বস্তু উপস্থাপন, প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ এবং বাচনভঙ্গীর জন্য দুই মহাযুদ্ধের অন্তর্র্বতীকালীন জটিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে সরল ও উপভোগ্য মনে হত ছাত্রছাত্রীদের কাছে। ওপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জেনেছি আন্তর্জাতিক আইনের মতো দুর্বোধ্য বিষয়ও তিনি কেমন মনমুগ্ধকরভাবে উপস্থাপন করতেন। নিয়মানুবর্তীতা ও সময়ানুবর্তীতাকে তাঁর প্রধান দুই অবলম্বন বলা যেতে পারে। ছোট্ট একটি খাতায় করে তিনি প্রতিদিনের মুল বক্তব্য লিখে আনতেন। দেখে দেখেই বলতেন, তা নয়। এটা ছিল মুলত তাঁর গোছানো কার্যক্রম তথা পরিকল্পনা করে চলার সাক্ষ্যপ্রমাণ। ছকে বাঁধা জীবনটাকে কখনোই শৃঙ্খলিত মনে হয়নি তাঁর কাছে। ৮ টা ৪৫ মিনিটের ক্লাশে কোনদিন ৮ টা ৪৬ মিনিটে প্রবেশ করেননি তিনি। একুশ শতকের প্রথমার্ধে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর যানজট কিংবা অন্য কোন দৈব দুর্বিপাকে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশে দু’চার মিনিট দেরি হয়ে গেলে বড় অপরাধী লাগে নিজেকে। মাথানিচু করে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হতে গিয়ে মনে মনে ভাবি– স্যার নিশ্চয়ই আমায় অভিশাপ দিচ্ছেন, সেই সঙ্গে বাবাও। সময়ানুবর্তীতার শিক্ষা হাতেকলমে পেয়েছিলাম তাঁদের দু’জনের কাছ থেকেই। সত্যি বলতে কি, তাঁদের প্রজন্মের বেশিরভাগ মানুষই ছিলেন সময়ানুবর্তীতার ধারক ও বাহক। আমরা স্বাধীনতার নামে এই সময়ানুবর্তীতা ও নিয়মানুবর্তীতাকে পাশ কাটিয়ে নিজেদেরকে অত্যাধুনিক আর চৌকস প্রমাণ করার এক মরণ খেলায় মেতে আছি। কিন্তু জ্ঞানচর্চায়, চিন্তা চেতনায়, সৃষ্টিশীলতায় এমনকি রুচিশীলতায়ও তাঁদের ছুঁতে পারছিনা।

বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে অধ্যাপক আলমগীর সিরাজুদ্দীন অসংখ্য ফেলোশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কর্ম সম্পাদন করেন। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও একাধিক দেশে ভ্রমণ করেন। দেশের ভেতর তিনি বিভিন্ন বিজ্ঞ সংস্থার কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন, যেমনঃ জাতীয় শিক্ষা প্রণয়ন কমিটি (১৯৯৭), বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ড, প্রত্নতত্ত্ব উপদেষ্টা বোর্ড, আইন শিক্ষা উন্নয়নের জন্য জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশ রিসার্চ সোসাইটি ইত্যাদি। দেশ বিদেশের খ্যাতনামা জার্নালে তাঁর প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা ত্রিশের অধিক। প্রকাশিত গ্রন্থ সাতটি, তন্মধ্যে তিনটিই প্রকাশিত হয় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস হতে। তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তুও বহুমাত্রিক– বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, উপজাতি বিষয়ক শিক্ষা (ইনডিজেনাস স্টাডিজ), আইন ও মানবাধিকার, উচ্চশিক্ষা, শরিয়া আইন, সমাজ ও মুসলিম নারী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং ইংল্যান্ডের সাপ্তাহিক পত্রিকা দি গার্ডিয়ানের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক দু’টি গ্রন্থ ছাপাখানায় আছে প্রকাশের অপেক্ষায়। এছাড়াও দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে তিনি অসংখ্য স্মারক বক্তৃতা ও সমাবর্তন বক্তৃতায় বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার সংকট ও সমাধান, আইন ব্যবস্থার সংস্কার, মানবিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, ইতিহাস পাঠের গুরুত্বসহ অনেক বিশ্লেষণধর্মী বক্তব্য উপস্থাপন করেন, যা দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে মূল্যবান অবদান রাখতে পারে।

অধ্যাপক আলমগীর সিরাজুদ্দীন শিক্ষা ও গবেষণা এবং শিক্ষাপ্রশাসকের ভূমিকায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস প্রফেসর নিযুক্ত হন ২০১২ সালে। একুশে পদক লাভ করেন তিনি ২০১৭ সালে এবং ২০২১ সালে জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদায় ভূষিত হন।

২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রত্যুষে তাঁকে একা ফেলে পরলোক গমন করেন তাঁর দীর্ঘ ছয় দশকের পথচলার সঙ্গী অধ্যাপক আসমা সিরাজুদ্দিন। রূপকথাকে হার মানানো ভালোবাসার গল্প কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যায়না। একজন জাতীয় অধ্যাপক প্রিয়তমার স্মৃতির প্রদীপ জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে রাখেন, সমাধিতে ফুল ফোটান, আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করেন। একই সঙ্গে চলে তাঁর নিরন্তর জ্ঞান সাধনা। শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীনের সুস্বাস্থ্য ও কর্মময় শতায়ুর জন্য আমাদের প্রার্থনা।

তথ্যসূত্রঃ Bangladesh: History, Politics, Economy, Society and Culture, Essays in Honour of Professor Alamgir Muhammad Serajuddin, ed. Mahmudul Huque, University Press Limited, April 2016

লেখক: ড. সালমা বিনতে শফিক – অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ