1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধিতে রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পদ না সমস্যা এটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এটা মূলত নির্ভর করছে জনসংখ্যাকে কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর। দেশের প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম। দেশ যদি তাদের দক্ষ বা যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পারে তাহলে জনসংখ্যা সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হবে এবং জনাধিক্য কোনো সমস্যা না হয়ে সম্পদে পরিণত হবে। বাংলাদেশ অতিরিক্ত জনসংখ্যার দেশ। জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। আর জনশক্তি হলো শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি। প্রবাসী আয় সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

প্রবাসী আয়ের অর্থ দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে। যদিও বিরাট সংখ্যক জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের জন্য উপযুক্ত কাজ নিশ্চিত করা, তাদের কাজে উৎসাহিত করা এবং এ লক্ষ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, প্রশিক্ষণ প্রদান, ঋণ বিতরণ ইত্যাদি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হলে, এই সম্পদই হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্পদ। অন্যান্য সম্পদ আমরা এখন যা ব্যবহার করছি তা কোনো না কোনো সময় শেষ হবে।

কিন্তু মানুষ যদি চেষ্টা করে তবে এর বিকল্প মানুষই উদ্ভাবন করতে পারে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে ২০০ মিলিয়ন প্রবাসী তাদের পরিবারের প্রায় ৮০০ মিলিয়ন সদস্যের কাছে রেমিটেন্স পাঠায়। বিশ্বের ১৪ শতাংশ মানুষ রেমিটেন্সের সঙ্গে যুক্ত, যাদের কেউ পাঠাচ্ছে আবার কেউ গ্রহণ করছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে পাঠানো রেমিটেন্সের মোট পরিমাণ ৭৯৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। আর এর মধ্যে ৬২৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার গিয়েছে নিন্ম ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ৫৯৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বিএমইটির তথ্য মতে, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত বাংলাদেশী অভিবাসীদের পাঠানো মোট বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ২৩২ বিলিয়ন ডলার।

সব দেশই তাদের জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তরের চেষ্টা করছে। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের জনগণকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। কারণ উন্নত বিশ্বে দক্ষতার চাহিদা বেশি। ২০০৮ সাল থেকেই বিশ্বের শীর্ষ রেমিটেন্স উপার্জনের দেশ ভারত। ১৪০ কোটির উপর জনসংখ্যার এই দেশে ২০২২ সালে রেমিটেন্সের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার স্পর্শ করেছে। বাংলাদেশেও অর্থনীতির মূল শক্তি হলো রেমিটেন্স। ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জনশক্তি রপ্তানি শুরু করে। এরপর থেকে বিদেশে শ্রমিক যাওয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে।

বিদেশ থেকে প্রচুর রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসতে থাকে এবং এটিই হয়ে ওঠে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান নিয়ামক। চলতি বছরের আগস্টে এক মাসে সর্বোচ্চ ১,৩৮,৬৭৫ জন শ্রমিক বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার। অবশ্য ২০২২ সালে পুরো বছরে এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। দেশের রিজার্ভ শক্তিশালী করতেও রেমিটেন্সের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রেমিটেন্স প্রবাহে গতি কম থাকায় অর্থনীতিতে কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিল। তাছাড়া বৈশ্বিক পরিস্থিতি এখন নানা কারণে অস্থির হয়ে আছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাতের পরেই রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। ২০২৩ অর্থবছরে রেকর্ড সংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি সত্ত্বেও বাড়েনি রেমিটেন্স।

জনশক্তি রপ্তানিতে এই মাইলফলক অর্জন সত্ত্বেও দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়েনি। এই সময়ে রেমিটেন্সের পরিমাণ মাত্র ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০২১ সালে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল দেশের মোট শ্রম অভিবাসনের ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশে নেমে আসে। যদিও স্বল্পদক্ষ কর্মীদের সংখ্যায় তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০২২ সালে দেশের মোট শ্রম অভিবাসনে স্বল্পদক্ষ কর্মী ছিল ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ছিল ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।

বর্তমান যুগ হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ। এই সময়ে প্রযুক্তির জ্ঞানে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদাই বেশি থাকবে। বিশেষত যখন উন্নত দেশগুলো অর্থাৎ যে দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক যায় সেসব দেশের শ্রমমূলক কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। সুতরাং এসব দেশে প্রযুক্তির দক্ষতা ছাড়া শ্রমিকরা পিছিয়ে পরবে। এজন্য বিদেশে জনসংখ্যা না জনশক্তি রপ্তানির জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আরো প্রসারিত করতে হবে।

লেখক : অলোক আচার্য – প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ