1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নাশকতা রোধে প্রযুক্তির ব্যবহার করবে রেলওয়ে

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩

হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর গত দেড় মাসে রেলপথে কমপক্ষে ১৫টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় বারবার হামলার শিকার হচ্ছে একসময়ের নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত রেলপথ। রেলকে হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করায় আতঙ্ক নিয়েই চলতে হচ্ছে যাত্রীদের। সবশেষ মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এক মা এবং তার শিশুসন্তানসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি রেলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রেল কর্তৃপক্ষও।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। এ কারণে দুর্ঘটনা ও নাশকতা রোধ করা যাচ্ছে না। তবে রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, রেলের দুর্ঘটনা ও নাশকতা ঠেকাতে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই রেললাইনের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হবে আরও ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য এবং রেলপথ তদারকির জন্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ ওয়েম্যান। এ ছাড়া রাতে প্রতিটি ট্রেন চলাচলের আগে একটি টহল ইঞ্জিন আগে চলবে এবং এর পেছনে চলবে মূল ট্রেনটি।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে গণপরিবহনের পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা ট্রেনকেও টার্গেটে পরিণত করেছে। ট্রেনে আগুন দেওয়া, রেললাইন উপড়ে ফেলা, স্টেশনে ককটেল হামলা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করাই তাদের লক্ষ্য। কয়েক দিন আগে গাজীপুরে রেললাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত ১৯ নভেম্বর রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী রেলস্টেশন থেকে তারাকান্দি যাওয়ার সময় আন্তঃনগর ট্রেন যমুনা এক্সপ্রেসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত ১৬ নভেম্বর মধ্যরাতে টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই দুর্বৃত্তরা টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের তিনটি বগি জ্বালিয়ে দেয়। একই দিন দিনাজপুরের বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় রেলপথে আগুন ধরিয়ে দেয়। কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রেলপথ, স্টেশন এবং ট্রেনে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করা হতো। লাইনে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি উপড়ে ফেলা হতো স্লিপারসহ লোহার পাত।

ব্রিজের স্লিপার খুলে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এবারও বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দাবি আদায়ে অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করছে। তবে হরতাল-অবরোধের মধ্যেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে রেল কর্তৃপক্ষ। ট্রেনে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করার পাশাপাশি যাত্রীবেশে সাদা পোশাকে থেকে দায়িত্ব পালন করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। স্টেশনগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, নাশকতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকলেও বিচ্ছিন্নভাবে নাশকতার ঘটনা ঘটছে। অবরোধের মধ্যে রেলপথের যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে প্রায় ১০ হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আরও ২ হাজার ৭০০ সদস্য মোতায়েন করা হবে। রেলওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে আনসার সদস্যরা রাত-দিন লাইন পাহারাসহ স্টেশন এবং ট্রেনের নিরাপত্তায় কাজ করছে।

রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা সলিমুল্লাহ বাহার বলেন, দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ রেলওয়ে অটোমেটিক সিমুলেশন সিস্টেম চালু ও তদারকির জন্য অনলাইন পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অটোমেটিক সিমুলেশন সিস্টেম চালু হলে এর মাধ্যমে কেউ ট্রেন লাইন কেটে ফেললে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে।

রেলের কর্মকর্তারা জানান, দেশে বর্তমানে রেললাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় চার হাজার কিলোমিটার। ওয়েম্যানরা সাধারণত পাঁচজন করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে প্রতি দুই থেকে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত রেললাইনে সশরীরে টহল দেয়। কোথাও লাইনের কোনো সমস্যা দেখলে তারা রেল কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে পুলিশকে অবহিত করে। তখন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, ওয়েম্যানরা রেলওয়ে ট্র্যাকের বিষয়ে খুবই অভিজ্ঞ। ফলে দুর্বৃত্তরা লাইনের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে সেটা ওয়েম্যানদের নজরে আসে এবং সে অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার রেলপথের নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই নতুন করে ২৭০০ আনসার সদস্য এবং দেড় হাজারেরও বেশি ওয়েম্যান নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া রাতে ট্রেন অবস্থান করে এমন স্টেশনগুলোতে নতুন করে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, প্রতি ৭ কিলোমিটার রেললাইনের নিরাপত্তার জন্য চারজনকে নিযুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে রেল পুলিশ ও রেলওয়ের সমন্বয়ে গঠিত টিম যে ১০০টি স্পর্শকাতর স্পট চিহ্নিত করেছে সেগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মো. আসিফ রায়হান বলেন, নিরাপত্তার জন্য রেললাইন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাকে নিরাপদ রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ নিরাপদ রাখতে পারেনি। ফলে যেকোনো ধরনের নাশকতার হুমকি রয়ে গেছে। তার মতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে দেশের যেকোনো জায়গাতেই রেললাইনে কোনো কিছু হচ্ছে কি না সেটা কম্পিউটারের সামনে বসেই জানা সম্ভব। তাই দুর্ঘটনা ও নাশকতা ঠেকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।

নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রেলে নাশকতা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও নিরাপত্তার জন্য তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় রেলপথে দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না। দুর্ঘটনা ও নাশকতা ঠেকাতে লোকবলের সংকট কাটিয়ে টহল বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, বিএনপি হরতাল-অবরোধের নামে দেশের সম্পদ নষ্ট করছে, রেলওয়ের সম্পদ নষ্ট করছে। গত কয়েক দিনে বিএনপি-জামায়াত দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন এবং ট্রেনে আগুন দিয়েছে। যেটা তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ও করেছিল। নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে নিরাপদ রেলযাত্রাকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে মন্তব্য করে রেলমন্ত্রী বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো যে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে, এই সময়ে রেলে সহিংসতা বাড়ছে। রেলকে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মধ্যে ফেলে হুমকি তৈরি করা হচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, যাত্রী হয়ে ট্রেনে উঠে এরপর নিরাপদ রেলে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। বাসের বদলে ট্রেনকে এখন প্রধান হাতিয়ার করা হচ্ছে। পরিকল্পিত দুর্ঘটনা ঘটাতে ফিশপ্লেট খুলে নেওয়া হচ্ছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, ট্রেনে অগ্নিসংযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে এবং তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে, এতে ট্রেন চলাচল করে এমন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তিনি জানান, প্রতিটি ট্রেন চলাচলের আগে একটি টহল ইঞ্জিন আগে চলবে। কক্সবাজার এক্সপ্রেসে আমরা টহল ইঞ্জিন দিয়েছি। শুধু কক্সবাজার এক্সপ্রেস নয়, রাতের সব ট্রেনের আধা ঘণ্টা আগে একটি টহল ইঞ্জিন চলাচল করবে। এরপরই মূল ট্রেনটি ছেড়ে যাবে। আর দিনে ট্রেনের আগে ট্রলি দিয়ে একটি টিম চলাচল করবে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ