1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দৃষ্টান্তমূলক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রয়োজনীয়তা

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একটানা ১৫ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ সরকারপ্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের বিশিষ্ট নারীনেত্রী এবং নারীদের পুনরুত্থানের আইকন হয়ে উঠেছেন। শ্রীলঙ্কার চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার, ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর মতো বিশ্বের উল্লেখযোগ্য নারীনেত্রীদের তালিকায় যোগ হয়েছে শেখ হাসিনার নাম।

ক্ষমতায় থাকাকালীন নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বহুবিধ উন্নয়ন বর্তমান সরকারের হাত ধরে এসেছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে মহাপরিকল্পনা আকারে। বর্তমান জাতিসংঘ প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা এই উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজড থেকে স্মার্ট দেশে পরিণত করার জন্য উন্নয়নের যাত্রা অবকাঠামো থেকে শুরু করে সামাজিক পরিসর সব ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত।

বহির্বিশ্বে কিছু কিছু দেশের নির্দিষ্ট কিছু স্থাপনা রয়েছে যেগুলো ওই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে, যেমন অস্ট্রেলিয়ার অপেরা হাউস, ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার অথবা যুক্তরাজ্যের লন্ডন ব্রিজ। ঠিক তেমনি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্বকারী একটি অবকাঠামোর নাম ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’। সীমাহীন প্রতিকূলতা অতিক্রম করে খরস্রোতা উত্তাল পদ্মায় এই সেতু আজ বাংলাদেশের গর্ব। ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু মাত্র ৮ বছরের মধ্যে এর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। বাংলাদেশে এটা সবচেয়ে বড় স্থাপনা, যেটা বিশেষ করে দক্ষিণ বাংলার ২১টি জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সংযোগ স্থাপন করেছে।

এই বহুলকাক্সিক্ষত সেতুর বহুমুখী সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেতু উদ্বোধন থেকে ১৮ জুন ২০২৩ পর্যন্ত প্রথম এক বছরের পূর্বাভাসের চেয়ে আড়াইগুণ বেশি যানবাহন চলাচল করেছে এবং প্রায় ৭৮১ কোটি টাকা শুল্ক আদায় হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর কারণে দেশের বার্ষিক জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এখন কোনো যানজট ছাড়াই দক্ষিণের জেলাগুলো থেকে মাত্র ৪ ঘণ্টায় যানবাহন ঢাকায় পৌঁছাতে পারে, যেটা পূর্ববর্তী সময়ের থেকে অর্ধেক। সুতরাং যানবাহনের গতি বেড়েছে এবং ব্যবসার প্রসার ঘটেছে, ফলে মানুষের আয়ও বেড়েছে। শুধু অর্থনৈতিকই নয়, এই সেতু সমগ্র জাতির একটা সম্মানেরও প্রতীক। বিশ্বব্যাংক অসত্য অপবাদে সেতুতে অর্থায়নে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর দেশের নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। যেটা বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতিফলন। আত্মনির্ভরতা ও আস্থা বিগত দশকের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি।

শুধু পদ্মা সেতুই নয়, রাজধানী ঢাকায় প্রথম মেট্রোরেলের সূচনা হয়েছে, আধুনিক টার্মিনাল যুক্ত হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে, যানজট কমানোর জন্য হয়েছে উড়াল সেতু। এ ছাড়াও ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল অথবা কর্ণফুলী নদী সুড়ঙ্গ দেশের পূর্ববঙ্গের মানুষের জন্য একটা নতুন অবারিত সুযোগ উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। এই বিকল্প পথ চট্টগ্রাম-কক্সবাজারকে যুক্ত করবে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এটাই বাংলাদেশে ও দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ। এটি ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিটের মধ্যেই পার হওয়া যাবে, যেখানে পূর্ববর্তী সময়ে সড়কপথে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা লাগত। শেখ হাসিনা সরকারের এই বিকল্প যোগাযোগব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষের চলাচল ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সন্দেহাতীতভাবে অভূতপূর্ণ অবদান নিয়ে আসবে। ঈশ্বরদীর রূপপুরে ১২শ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনও শুরু হবে শিগগিরই। এ ধরনের আধুনিক প্রকল্পগুলো শুধু একেকটা স্থাপনাই নয়, নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক ও অনুসন্ধিৎসু হতেও শেখাবে।

শেখ হাসিনা সরকারের সামাজিক প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হলো আশ্রয়ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো ভূমিহীন ও গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনামূল্যে ভূমি ও ঘরের ব্যবস্থা করা। ছিন্নমূল পরিবার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে ১টি করে ঘর বরাদ্দ পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে আনা হয়েছে। ঘরের পাশাপাশি এসব ছিন্নমূল পরিবারের মাঝে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালনের জন্য সরকারিভাবে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। ফলে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের বাসিন্দারা স্বাবলম্বী হচ্ছে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটছে, যেটা দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। ঘর বরাদ্দের বাইরেও দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়াতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুস্থ মহিলা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ও মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতার আওতায় আনা হয়েছে এবং ভাতার হার বাড়ানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৮-০৯ সালে এই খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, বর্তমানে এ কার্যক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১০-এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাভুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম উন্নয়নে নারীর ভূমিকা উপলব্ধি করে লিখেছিলেন : ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ কবি নজরুলের চিন্তার প্রতিফলন বর্তমান সরকারের নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রণী ভূমিকায় প্রতীয়মান। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ২০১০ সালে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা) আইন পাস করা হয়, যেটি ছিল সময়োপযোগী পদক্ষেপ। জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০-এ উন্নীতকরণ, উপজেলা পরিষদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি, ইউনিয়নে সংরক্ষিত নারী আসন ব্যবস্থাকরণ ছিল যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ইউএন উইমেন প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন এবং এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এছাড়াও ২০১৪ সালে ইউনেসকোর পিস ট্রি পুরস্কার ও গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ ২০১৮ পুরস্কারে ভূষিত হন। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৩ অনুসারে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে। নারী উদ্যোক্তা ও ক্ষমতায়নে উৎসাহী করতে জয়িতা পুরস্কার তৃণমূলে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে। তথ্য আপা প্রকল্পটিও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন ১০৯, জয় মোবাইল অ্যাপস যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে।

দেশের অগ্রগতি ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বড় ধরনের অন্তরায়। বর্তমান সরকার তাই জঙ্গি দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। জঙ্গি দমনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জঙ্গি দমন সক্ষমতায় রীতিমতো অবাক সারা বিশ্ব। কারণ অনেক বড় বড় দেশই জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে।

তবে অভূতপূর্ণ আর্থসামাজিক উন্নয়ন হলেও কিছু জায়গায় কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমানে শহরে যেভাবে মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন হয়েছে অথবা হচ্ছে, গ্রামে প্রয়োজন অনুসারে সেরকম অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এখনও গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাই বেশিরভাগ সময় কর্দমাক্ত থাকে, বিদ্যুতের সংযোগ থাকলেও অধিকাংশ সময়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, মোবাইল গ্রাহকদের ভঙ্গুর নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে নিকটজনের সঙ্গে আলাপ সম্পন্ন করতে হয়। তার মানে হলো, শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষকে অনেক বেশি প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।

একটা দেশের উন্নয়ন শুধু শহরকেন্দ্রিক হলে সামগ্রিক উন্নয়ন হয় না, সেক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রামকেও সঙ্গে নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন গ্রাম মেগা প্রকল্প। এছাড়াও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি যে সহিংসতা সেটা একরকম নৈমিত্তিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। তার একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ, কুড়িগ্রামের স্বভাবকবি ৮০ বছরের বৃদ্ধ রাধাপদ রায়ের ক্ষতবিক্ষত শরীর সামাজিক মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। যেটা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে।

কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন সমতায় ঘাটতি থাকলেও, একবিংশ শতাব্দীর যে উন্নয়ন বর্তমান সরকারের হাত ধরে হয়েছে, সেটাকে উন্নয়নের দৃষ্টান্ত বলা যেতে পারে। এই শিফমেন্টের বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান যখন দেখা যায় বাংলাদেশ প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনের জন্য ডিজিটালাইজেশন থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে, ছোট ও মাঝারি প্রকল্পের সঙ্গে বড় অথবা মেগা প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে, শুধু বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা থেকে সরে এসে নিজস্ব ও বৈদেশিক সাহায্য দুটোই সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কাজে লাগাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নকেও গুরুত্বারোপ করছে। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নবঞ্চিত জায়গাগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সমতার উন্নয়ন করতে হলে শহরের সঙ্গে গ্রামকে, পুরুষের সঙ্গে নারীকে, ধর্মীয় সংখ্যাগুরুর সঙ্গে সংখ্যালঘুকে সমানভাবে জায়গা করে দিতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সে কাজ শুরু হলেও, এই ধারা চলমান রাখা ও গতিসঞ্চার প্রয়োজন।

এছাড়াও চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রক্রিয়া সচল রাখা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের যে অভীষ্ট লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে, সেখানে পৌঁছানোর জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা নিঃসন্দেহে অপরিহার্য।

লেখক: ড. সঞ্জয় কুমার চন্দ – কলামিস্ট।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ