1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা

প্রভাষ আমিন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২২

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয় নিয়ে এরইমধ্যে অনেক কথা হয়েছে। সবাই মানছেন, বাংলাদেশের দুই দশকের টেস্ট ইতিহাসে সেরা জয় এটি। এটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন, এ নিয়েও আলোচনা কম হয়নি। সব ফরম্যাট মিলে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। শুধু এটুকু বললে এ জয়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা যাবে না। দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ড সবসময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ। গত এক দশকে উপমহাদেশের কোনো দল নিউাজিল্যান্ডে জয়ের দেখা পায়নি। আগের টানা ১৭ টেস্টে অপরাজিত টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড।

র‌্যাংকিংয়ের দুইয়ে থাকা দলের সঙ্গে নয়ে থাকা দলের লড়াইটি যেমন একতরফা হওয়ার কথা, তেমনি হয়েছে। তবে ফল হয়েছে উল্টো। নয় একতরফাভাবে হারিয়ে দিয়েছে দুইকে। সাধারণত দিনে দিনে এমনকি সেশনে সেশনে বদলে যায় টেস্টের রং। কিন্তু মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে প্রতিদিনই এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। শেষদিনে দুই সেশন হাতে রেখেই আট উইকেটের জয়ে ক্রিকেট বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে বাংলাদেশ। রোববার ক্রাইস্টচার্চে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টকে সামনে রেখে বাংলাদেশের চোখে এখন সিরিজ জয়ের অসম্ভব স্বপ্ন। কিন্তু কী আনন্দ! সেই অসম্ভবকেই এখন সম্ভব মনে হচ্ছে।

তিন ফরম্যাটের মধ্যে টেস্টেই বাংলাদেশ সবচেয়ে খারাপ করত। বলা হচ্ছিল, বাংলাদেশ টেস্ট খেলে টি-২০ স্টাইলে আর টি-২০ খেলে টেস্ট স্টাইলে। কিন্তু টেস্ট খেলতে না জানা বাংলাদেশ মাউন্ট মঙ্গানুইতে কীভাবে একদম পারফেক্ট টেস্ট খেলল! এটা বিস্ময়কর।

রাতারাতি বাংলাদেশ কীভাবে টেস্ট খেলা শিখে গেল? বোলাররাই টেস্ট জিতিয়েছেন, এটা ঠিক। কিন্তু মঙ্গানুই জয় আসলে সম্মিলিত চেষ্টার ফসল। বাংলাদেশের চারজন ব্যটসম্যান ফিফটি করেছেন। তবে কে কত রান করেছেন, তারচেয়ে উজ্জ্বল হলো কে কত বল খেলেছেন। নাজমুল ১০৯ বল খেলে ৬৪ করেছেন, মাহমুদুল ৭৮ করেছেন ২২৮ বলে, মমিনুলের ৮৮ এসেছে ২৪৪ বলে, লিটনের ৮৬ ও ১৭৭ বলে করা। এই যে ধৈর্যেরই ফল পেয়েছে বাংলাদেশ। এই যে মাটি কামড়ে পড়ে থাকা, প্রতিপক্ষের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা, এক মুহূর্তের জন্যও হাল না ছাড়া; এগুলো টেস্ট জয়ের মন্ত্র। সেই মন্ত্রটাই বাংলাদেশ শিখে গেছে যেন।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয়ের পেছনে নিশ্চয়ই অনেক কারণ আছে। তবে আমার মনে হয়, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়াটাই বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করেছে। টি-২০ বিশ্বকাপে যা তা পারফরমম্যান্স, দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে নাস্তানাবুদ বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিল সর্বহারা হয়ে। তাদের হারানোর কিছু ছিল না, জয় করার জন্য ছিল গোটা বিশ্ব। দ্বিতীয় অপশনটাই বেছে নিয়ে বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকেই অবাক করে দিয়েছে। আরেকটা কারণ হলো, প্রত্যাশার চাপ না থাকা।

এমনিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সবসময় মাঠে নামে ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশার বিশাল চাপ নিয়ে। আমরা সবাই সবসময় বাংলাদেশের জয় চাই। কিন্তু সম্ভবত অনেকদিন পর এই প্রথম বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল কোনো রকম চাপ ছাড়া। বাংলাদেশের সবচেয়ে আশাবাদী লোকও এই টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের আশা করেনি। কোনোরকমে মান-ইজ্জত বাঁচাতে পারলেই খুশি হতো সবাই। সেই চাপহীনতাই বাংলাদেশের সেরা পারফরম্যান্স বের করে এনেছে।

বাংলাদেশের কাছে কোনো প্রত্যাশা না থাকার আরেকটি কারণ, বাংলাদেশ সেরা দল নিয়ে নিউজিল্যান্ড যেতে পারেনি, যেখানে ফর্মের তুঙ্গে থাকা নিউজিল্যান্ড নেমেছিল সেরা দল নিয়ে। বাংলাদেশের সেরা পারফরমার এবং স্বঘোষিত এক নাম্বার আস্থা সাকিব আল হাসান বিনা কারণে ছুটি নিয়েছিলেন। দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ইনজুরির কারণে দলে নেই। মাহমুদুল্লাহ অভিমানে টেস্ট খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। মাশরাফি তো অনেকদিন ধরেই দলে নেই। একাদশে পঞ্চপাণ্ডবের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন মুশফিক। তবে এই জয়ে তার তেমন অবদান নেই।

পাণ্ডববিবর্জিত এই জয়ই আমাকে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী করেছে। অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ দল পঞ্চপাণ্ডবনির্ভর ছিল। তাদের হাত ধরেই আসত সাফল্য। পাণ্ডবরা চলে গেলে বাংলাদেশের কী হবে, এই নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন অনেকে। কিন্তু এবাদত, তাসকিন, মিরাজ, নাজমুল, মাহমুদুলরা বুঝিয়ে দিলেন, ভয় নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই। এই তরুণরা তো আগেও খেলেছে বাংলাদেশে, তখন তাদের এমন বারুদ পারফারম্যান্স কোথায় ছিল? আমার ধারণা সিনিয়ররা দলে থাকলে তরুণরা একটু রিল্যাক্স থাকে। তারা হয়তো মনে করে, দলকে জেতানোর জন্য সাকিব, তামিমরা আছেনই। তাদের দায়িত্ব না নিলেও চলবে।

বটের ছায়ায় ছোট গাছগুলো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছিল না। কিন্তু যেকোনোভাবে দায়িত্ব যখন তাদের ঘাড়ে এসে পড়ল, তখন তরুণরা বুঝিয়ে দিল তাদের কাঁধ বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয়ার মতো যথেষ্ট চওড়া। এখন আর সাকিব ছুটি নিল কি নিল না, তাদের বা আমাদের কিছু যায় আসে না। বরং সাকিব বা কেউ যদি আর টেস্ট খেলতে না চান, তাকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় বলা হোক। ভয়ের দিন শেষ।

সাকিব-তামিম দলে থাকলে নিশ্চয়ই তারা ভালো খেলতেন, হয়তো তাদের পারফরম্যান্সেই বাংলাদেশ জিতত। সাকিব-তামিম ফিরলে হয়তো জায়গা দিতে তরুণ পারফরমারদের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। তবু তারুণ্যের কাঁধে চেপে আসা জয়ই আমাকে বেশি আনন্দ দিয়েছে, বেশি আশাবাদী করেছে। আমি তাদের পারফরম্যান্সেই দেখি ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। বলা ভালো, মাউন্ড মঙ্গানুইতেই যাত্রা শুরু হলো, বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন যুগের।

প্রথম টেস্টে জয় রোববার শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্ট নিয়ে আবার প্রত্যাশার পারদ উঁচুতে উঠছে। তবে আমি প্রত্যাশার কোনো চাপ দিতে চাই না। জিতলে তো অবশ্যই ভালো, ড্র করলেও সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। এমনকি দ্বিতীয় টেস্ট হারলেও সিরিজ হারার ভয় নেই। এমন নির্ভার হয়ে বাংলাদেশ কবে মাঠে নামতে পেরেছিল? আমার চাওয়া শুধু বাংলাদেশ প্রথম টেস্টের পারফরম্যান্সটা ধরে রাখুক। আর বিশ্বকে দেখিয়ে দিক-

‘‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী

অবাক তাকিয়ে রয়:

জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার

তবু মাথা নোয়াবার নয়।”

(সুকান্ত ভট্টাচার্য)

লেখক: প্রভাষ আমিন – সাংবাদিক, কলাম লেখক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ