1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সরকারের গতিশীল নেতৃত্ব ও স্মার্ট গ্রন্থাগার

মো. আবুবকর সিদ্দিক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

গ্রন্থাগার হচ্ছে পুস্তক বা পাঠসামগ্রীর একটি সংগ্রহশালা, যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং যা মানুষের জ্ঞানচর্চা ও অনানুষ্ঠানিক বিদ্যা অর্জনের কেন্দ্র। একটি দেশের লাইব্রেরি কতটা সমৃদ্ধ তা দেখেই সে দেশের উন্নয়ন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানচর্চা ছাড়া সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই গ্রন্থাগারের আধুনিকীকরণ এবং এর সুবিধা বৃদ্ধিকরণ অপরিহার্য।

বর্তমান সরকারের গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্পায়ন, যোগাযোগব্যবস্থায় এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। একই সঙ্গে সরকার দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে জ্ঞানশীল, সচেতন, অমৌলবাদী দেশপ্রেমিক একটি প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি গণগ্রন্থাগারগুলোর উন্নয়নে আন্তরিকভাবে এগিয়ে এসেছে। আধুনিক ও তথ্য-প্রযুক্তির সমন্বয়ে পাঠকসেবাকে তৃণমূলে সম্প্রসারিত করতে সরকার নিয়েছে নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচি। গ্রন্থাগারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে নবপ্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে সরকার জাতীয়ভাবে গ্রন্থাগার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। উল্লেখ্য, ভারত বিভক্তির কয়েক বছর পর যখন বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান যুক্তফ্রন্ট সরকারের কেবিনেটের সদস্য ছিলেন, তখন সরকার কর্তৃক ১৯৫৪ সালের ৫ ফ্রেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই দিবসটিকে স্মরণে রেখেই ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালনের ঘোষণা একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, যা বর্তমান সরকারের গ্রন্থাগারবান্ধব মননের প্রশংসনীয় পরিচয়কেই তুলে ধরে।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণাকে সামনে রেখে এবারের গ্রন্থাগার দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্মার্ট গ্রন্থাগার স্মার্ট বাংলাদেশ’। এই প্রতিপাদ্য একটি চেতনা, যার মূল প্রতিশ্রুতি দেশের সব গ্রন্থাগারকে আধুনিক ডিজিটাল সুবিধাসমৃদ্ধ করে পাঠকসেবাকে আরো উন্নত করা, যাতে জনগণ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম বইমুখী তথা গ্রন্থাগারমুখী হয় এবং জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।

গণমানুষকে সচেতন করে তোলার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত দিবসগুলোর অন্যতম ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’—যার তাৎপর্য অপরিসীম। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট ডিভাইস একদিকে জীবনকে যেমন অনেক সহজ করে তুলেছে, অন্যদিকে মানুষকে করেছে বইবিমুখ। যে অবসর সময়টুকু মানুষ বই পড়ে কাটাত, বই থেকে আনন্দ, রস ও জ্ঞান আহরণ করত; সেই সময়টুকুর অনেকটাই কেড়ে নিয়েছে স্মার্ট ডিভাইস। এই ডিভাইস সস্তা বিনোদনের কালো ছায়ারূপে সঙ্গী হয়েছে তরুণ প্রজন্মের। এর থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকারের বিনোদন আর জ্ঞানচর্চার জন্য তরুণসমাজকে বইমুখী করা এখন এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন গণগ্রন্থাগারগুলোর আধুনিকীকরণ ও স্মার্ট লাইব্রেরি গড়ে তোলা; প্রয়োজন সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের এগিয়ে আসা।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীকে বিজ্ঞান ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক সুবিধাসংবলিত পাঠকসেবা ও তথ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে জ্ঞানমনস্ক, মননশীল আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশের সরকারি গণগ্রন্থাগারগুলো বর্তমানে পাঠকদের যে সেবাগুলো দিচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—বই পাঠ ও রেফারেন্স পুস্তকাদি সরবরাহ, সংবাদপত্র ও দেশি-বিদেশি সাময়িকী এবং ইন্টারনেট সুবিধা। এ ছাড়া মিলনায়তন ভাড়া দেওয়া, বেসরকারি গণগ্রন্থাগার তালিকাভুক্তীকরণ, পুস্তক প্রদর্শনী ইত্যাদিও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের কর্মের আওতাভুক্ত।

২০২১ সালে ‘গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরে বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে গ্রন্থাগারসেবার আধুনিকায়ন ও সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প’টি অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী, যার মাধ্যমে বর্তমান কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি ভবনটির স্থলে নির্মিত হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক গণগ্রন্থাগার ভবন, যেখানে ই-বুক এবং সব ধরনের ডিজিটাল সুবিধাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ লাইব্রেরি, অডিটরিয়াম, সেমিনার ও মিলনায়তন থাকবে। থাকবে শিশু-কিশোর, মহিলা, প্রবীণ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা এবং সেই সঙ্গে কফি কর্নারসহ বিস্তৃত মুক্তাঙ্গন। ভবনটি সম্পন্ন হলে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিটি হয়ে উঠবে রাজধানীর অন্যতম সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং একটি সুশীল বিনোদনকেন্দ্র।

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালনের মাধ্যমে দেশব্যাপী একটি পাঠ আন্দোলন গড়ে উঠুক, নতুন প্রজন্ম পাঠাগারমুখী হয়ে সুস্থ বিনোদনের পাশাপাশি জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা নির্মাণের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে তুলুক—এই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : মো. আবুবকর সিদ্দিক – মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ