1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নান্দনিক নেতৃত্ব বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

টানা চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয় গত ১১ জানুয়ারি। সে হিসেবে গতকাল সরকারের মাসপূর্তি হলো। এই এক মাসে সরকার কি কোনো ছাপ রাখতে পেরেছে? দলের নির্বাচনী ইশতেহারে যে ১১টি লক্ষ্য পূরণের কথা বলা হয়েছে, সেই লক্ষ্য পূরণে কি কোনো পদক্ষেপ নিতে পেরেছে?

পরিকল্পিত পদক্ষেপ দেশকে এগিয়ে নেবেএখন আমাদের সামনের দিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভাবতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের লক্ষ্য ঠিক করে কাজ শুরু করতে হবে।

সরকারকে এবার যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, তার মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখা। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের শুরুতেই দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটি তো সত্যি যে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় এখন বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। বাজার যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়, তাহলে সমাজের একটি বড় অংশ স্বস্তিতে থাকবে।

অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, শুধু মধ্যবিত্ত নয়, দেশের অনেক মানুষেরই আতঙ্কের জায়গা এখন বাজার। বাজারে আজকাল আর দরদাম করা যায় না। দোকানি যা দাম চান, সেটিই দিয়ে আসতে হয়। বাজার আর ভোক্তার নেই, দোকানিদের দখলে চলে গেছে।

বাংলাদেশের বাজারের আকার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সম্ভাবনাময় কিছু খাতের ওপর ভিত্তি করে এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট গ্রুপের গবেষণা সংস্থা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এক অমিত সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। সেই সম্ভাবনাটি হচ্ছে, বাংলাদেশ ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ২০টি অর্থনীতির একটি হবে। কারণ বাংলাদেশের ঝুঁকি কম, কিন্তু সুযোগ বেশি। এই সুযোগ তো কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য দরকার বিনিয়োগ।

বিনিয়োগটি কোথায় হবে?

আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে নির্বাচনী ইশতেহারে। আর সে লক্ষ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার কথা। কিন্তু বাস্তবতা কী? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে মেধা। বাংলাদেশের মেধাবী নতুন প্রজন্মকে জ্ঞানসমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কি বিনিয়োগ করা হচ্ছে? আমরা কথায় কথায় কর্মমুখী শিক্ষার কথা বলি। এখন দেখার বিষয় আমাদের শিক্ষা কতটা কর্মমুখী হয়েছে? আদৌ কি হয়েছে? ৫৩টি বছর ধরে আমরা কেবল কর্মমুখী শিক্ষার কথা বলে গেলাম। একটির পর একটি শিক্ষা কমিশন হলো। সভা-সেমিনারে গালভরা বুলি আওড়ে গেলাম। কর্মমুখী শিক্ষা নিয়ে গবেষণাও তো কম হয়নি, কিন্তু শিক্ষা কেন এখন পর্যন্ত কর্মমুখী না হয়ে সনদমুখী থেকে গেল, তার কারণ কি খোঁজা হয়েছে? শিক্ষা এখন একটি বড় বাণিজ্যিক পণ্য, লাভজনক বিনিয়োগের মাধ্যম। কিন্তু কর্মমুখী হয়নি। কর্মক্ষেত্র বিবেচনা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন বিভাগ খোলা হয়। চাকরির বাজারে এসব বিষয়ের কোনো মূল্য নেই। শিক্ষার্থীরা একটা পর্যায়ে এসে চরম হতাশায় ভোগে। অথচ বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অতিক্রম করছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে কী পরিকল্পনা নিয়েছে বা নিচ্ছে বাংলাদেশ? আমাদের পদ্মা সেতু হয়েছে। পদ্মার রেল সেতুতে ট্রেন চলছে। বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল চালু হয়েছে। চলছে মেট্রো রেল। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে টানেল চালু হয়েছে। মাতারবাড়ী, পায়রা বন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র— সব মিলিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের যাত্রাটা মসৃণ করতে হলে যে নিজস্ব জনশক্তি গড়ে তোলা দরকার, তার জন্য আমরা কী ব্যবস্থা নিয়েছি? তার জন্য যে শিক্ষা প্রয়োজন, সেই শিক্ষা কি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি?

নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। এই নির্দেশনা এবার শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি ঠিক যে দুর্নীতির ডালপালা ছড়িয়েছে। সেই ডালপালা কেটে ফেলার এখনই উপযুক্ত সময়। সেই কাজটি করা গেলেই নিশ্চিত হবে সুশাসন। আবার সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে সমাজের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যাবে না। সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে আস্থার সংকট সম্পূর্ণ কেটে যাবে। মানুষের বিশ্বাসের ঘাটতি দূর হবে। দুর্নীতি ও দুষ্টচক্র নিয়ন্ত্রণে সঠিক দিকনির্দেশনা চায় দেশের মানুষ। সুশাসন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিনির্ভর কার্যকর পথরেখা। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানোর কথা বলা হয়েছে।

২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস পালনকালে ঢাকায় ছিলেন বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। বক্তৃতা করেছিলেন এক অনুষ্ঠানে। বলেছিলেন, বাংলাদেশ আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে দারিদ্র্য কমাতে হয়। বাংলাদেশের জনগণের পেছনে বিনিয়োগ করতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। মানবসম্পদ উন্নয়ন, তথ্য-প্রযুক্তি, অবকাঠামোসহ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, এর মধ্য দিয়ে আরো বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হবে। আর তাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূর করতে বাংলাদেশকে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ভালো মানের অনেক বেশি চাকরির ব্যবস্থা করা এবং জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। জিম ইয়ং কিম দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ। চোখের সামনেই ফুলে-ফেঁপে উঠতে দেখেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিকাশের মধ্য দিয়ে খুব সহজেই বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার কাতারে পৌঁছবে বলে মনে হয়েছিল তাঁর।

২০১৬ থেকে ২০২৪—আট বছরের ব্যবধানে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ? কী স্বপ্ন দেখছে? প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১১-২০২১) বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছিল বাংলাদেশ। জাতিসংঘ ঘোষিত স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয়েছিল প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনার আওতায়। দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের দেশে নিয়ে যেতে চায় সরকার। সরকারের আশা, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি দেশ। বাংলাদেশ হবে একটি উন্নয়নশীল দেশ।

২০২১ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দ্রুত প্রবৃদ্ধিশীল দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। করোনা মহামারিতেও ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা দেখায়। অর্থনীতিতে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামী ২০৩৬ সালের মধ্যেই বিশ্বের ২৪তম অর্থনীতি হবে বাংলাদেশ।

২০২২ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার। যাওয়ার আগে তিনি মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি সাফল্যের গল্প। গত আগস্ট মাসে ঢাকা সফরে এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পরমেশ্বরন আইয়ার। ফিরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করতে পারে।

বাংলাদেশ আজ বিশ্বে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের রোল মডেল। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য হলেও এই অর্জনটি কিন্তু এত সহজ ছিল না। ২০০৯ সাল থেকে গত সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাপক সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশ উন্নতি করেছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অসাধারণ রূপান্তরের গল্পটি চমকপ্রদ হলেও এই পরিবর্তন কিন্তু হঠাৎ করে বা এক দিনে আসেনি। আমাদের এখন আগামী দিনের জন্য নতুন গল্প রচনা করতে হবে।

সব মিলিয়ে এক উজ্জ্বল বাংলাদেশের ছবি দেখতে পাচ্ছি আমরা। এই ছবিটি উজ্জ্বলতর করতে কতগুলো বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলছেন, আর্থিক খাতে শুধু নয়, সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। হাত দিতে হবে সংস্কারে।

আমরা আশাবাদী, সব বাধা অতিক্রম করে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নান্দনিক নেতৃত্ব বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

লেখক : আলী হাবিব – সাংবাদিক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ