1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

এসডিজি স্থানীয়করণে যেভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ২০৩০ বা Sustainable Development Goals (SDG) ২০৩০ হলো জাতিসংঘ ঘোষিত বৈশ্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা যা বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুখী-সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়ার অভিপ্রায়ে প্রণীত হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট (এসডিজি)-এর ১৭টি অভীষ্ট এবং ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার কেন্দ্রে রয়েছে কাউকে পেছনে ফেলে না রাখার নীতি।

মানুষ (people), সমৃদ্ধি (prosperity), ধরিত্রী (planet), অংশীদারিত্ব (partnership) এবং শান্তি (peace)-কে মূল ধরে ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের দীর্ঘ আলোচনা ও বিশ্ব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সব সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক এজেন্ডা ২০৩০ গৃহীত হয়।

বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ অর্জনে শুরু থেকেই ব্যাপক কর্মকৌশল গ্রহণ করে। এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের পদ সৃজনের মাধ্যমে জাতীয় এসডিজি বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৭ সালে SDG Tracker চালু করে এবং অর্থায়ন কৌশল নির্ধারণ করে।

২০১৯ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিভিন্ন অংশীজনের প্রতিনিধি নিয়ে বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে এসডিজি বাস্তবায়ন ও সমন্বয় কমিটি গঠনসহ ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) প্রণয়ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে স্থানীয় পর্যায়ে এসডিজি’র অন্তর্নিহিত বার্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এসডিজি’র অভীষ্ট, লক্ষ্যমাত্রা ও সূচকসমূহ মাতৃভাষা বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।

‘Whole of Society Approach’- বা ‘সমগ্র সমাজ’-এর আওতায় সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করেছে।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) হলো মানুষের প্রয়োজন, আকাঙ্ক্ষা এবং অধিকারের বহিঃপ্রকাশ। এবং এর সূচক সমূহ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত করা হয়েছে। প্রতিটি দেশই তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা, রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার ও চাহিদা এবং আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার আলোকে এসডিজি’র সূচকের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করেছে। এই অগ্রাধিকার তালিকা হলো বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের আলোকে জাতীয় অগ্রাধিকার কৌশল।

বৈশ্বিক প্রয়োজন, আকাঙ্ক্ষা এবং অধিকারকে স্থানীয় প্রয়োজন ও চাহিদার আলোকে সাজিয়ে নেওয়াই হলো এসডিজি স্থানীয়করণ। স্থানীয়করণ, বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কৌশল নির্ধারণ, বাস্তবায়ন এবং পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়াকে তৃণমূল পর্যায় থেকে স্থানীয় অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিচালনা করে থাকে।

বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে এসডিজি’র স্থানীয়করণ কার্যক্রম গ্রহণ করে এবং অগ্রাধিকার সূচক চিহ্নিত করে। স্থানীয়করণে উপজেলাকে সর্বশেষ ইউনিট ধরে জাতীয় পর্যায়, জেলা পর্যায় এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার অংশগ্রহণে একাধিক কর্মশালার মাধ্যমে ৩৯ + ১ মডেল আত্তীকরণ করা হয়। যা ‘বাংলাদেশ মডেল’ নামে পরিচিত।

৩৯টি জাতীয় অগ্রাধিকারের সাথে + ১ হলো জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অতিরিক্ত একটি অগ্রাধিকার সূচক। ৬৪টি জেলা ও ৪৯২টি উপজেলা, জাতীয় ৩৯টি অগ্রাধিকারের পাশাপাশি স্থানীয় সমস্যা ও প্রয়োজনীয়তার আলোকে নির্ধারিত অতিরিক্ত একটি সূচক বাস্তবায়ন করেছে।

জাতীয় পর্যায়ে অগ্রাধিকার সূচকে শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, শিল্প ও উদ্ভাবন এবং নারী-পুরুষের সমতার বিষয় অগ্রাধিকার লাভ করে। জেলা পর্যায়ে অগ্রাধিকার সূচকে টেকসই কৃষি ক্ষুধা হ্রাসকে গুরুত্বারোপ করে। ৭০টি উপজেলা গুণগত শিক্ষাকে + ১ অগ্রাধিকার হিসেবে নির্ধারণ করে।

বাংলাদেশ সরকার ৩৯ + ১ মডেলের পাশাপাশি এসডিজি’র স্থানীয়করণ এর জন্য ‘জেলা মডেল’ ও গ্রহণ করে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার আলোকে স্থানীয় সমস্যা এবং সম্ভাবনার ভিত্তিতে জেলার ১টি সার্বিক ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনাই ছিল উক্ত জেলা মডেলের মূল ভিত্তি। তবে বৃহত্তর পরিসরে এই মডেল বাস্তবায়িত হয়নি।

স্থানীয়করণে আমাদের সীমিত জ্ঞান ও তথ্য থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে স্থানীয়করণের এই উদ্যোগটি স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া যুগিয়েছে। ৩৯ + ১ স্থানীয়করণে একটি প্রাথমিক কাজ।

সার্বিক স্থানীয়করণের জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় স্থানীয় সরকারের স্থানীয় ইউনিট থেকে কার্যক্রম গ্রহণ, পলিসি ইনটারভেনশন ও স্থানীয় পর্যায়ে রিসোর্স মোবিলাইজেশন প্রয়োজন।

স্থানীয়করণে সরকারের পাশাপাশি এনজিও, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সুশীল সমাজ ও অন্যান্য অংশীজনদের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ স্থানীয়করণকে আরও অর্থবহ করে তুলবে। জেলা ও উপজেলা সূচক সমূহ নিয়ে গৃহীত উদ্যোগ সমূহ পাইলটিং-এর মাধ্যমে তথ্য ব্যাংক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। যা স্থানীয়করণে নতুন ধারণা তৈরি করতে সহায়তা করবে।

এসডিজি রিপোর্ট-২০২৩ অনুসারে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ ১৬০টি দেশের মধ্যে ১০১ তম অবস্থানে পৌঁছেছে। সূচক অর্জনের দিক থেকে ৬৫.৯ স্কোর নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ৬৩.৫ ও পাকিস্তান ৫৯.০ থেকে বেশকিছুটা অগ্রগতি স্পট। যা এসডিজি’র স্থানীয়করণ এর সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। তবে সার্বিকভাবে মোট অভীষ্টের ৩০.৯ শতাংশ অর্জনের পথে, ৪১.২ শতাংশ মধ্যম মানের অগ্রগতি হলে এখনো ২৭.৯ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখনো অনেকদূর পিছিয়ে।

উন্নয়নের স্থানীয়করণ দীর্ঘদিন ধরেই উন্নয়ন দর্শন বিশেষত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে তাদের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলার সাথে সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকে ত্বরান্বিত করে।

উন্নয়নের কার্যক্রমে স্থানীয় পর্যায়কে অগ্রাধিকার প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, কেননা এটি অন্তর্ভুক্তিকে নিশ্চিত করে এবং জনগণের চাহিদা ও অগ্রাধিকারের প্রতিফলন ঘটাতে পারে।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এর অর্ধেক পথ পাড়ি দেওয়ার যে প্রায়োগিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ অর্জন করছে তা কাজে লাগিয়ে নিজস্ব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণেই নিশ্চিত করবে ‘Leave No One Behind’।

লেখক : মোহাম্মদ আবু তৈয়ব – উন্নয়নকর্মী, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ, ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ